করুণ পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজার
![করুণ পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজার](https://stocknews.zubaer.com/images/stock-news-bangladesh-zubaer.jpg)
চোখের সামনে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী একটু একটু করে পুঁজি হারাচ্ছেন। কিন্তু কিছুই করতে পারছেন না। এ অবস্থায় শেয়ারবাজারের লেনদেন ফের ২০০ কোটি টাকার ঘরে নেমেছে। প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স নেমে এসেছে ৬২০০ পয়েন্টের ঘরে। ৯৫ শতাংশ বাজার মূলধনের শেয়ারগুলোর দরে ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর সূচক পতনের আর তেমন জায়গা নেই। তারপরও প্রতিদিনই ১০ থেকে ১৫ পয়েন্ট করে হারাচ্ছে সূচক।বৃহস্পতিবার প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৯০ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের কেনাবেচা হয়েছে। অবশ্য এর মধ্যে সিংহভাগের কেনাবেচা হয়েছে ৫ থেকে ১০টি করে শেয়ার। সর্বনিম্ন দরসীমা বা ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা শেয়ারগুলোর দর হারানোর সুযোগ না থাকলেও বাকিগুলোর দর কমেছে। মাত্র সাতটি শেয়ারের দর বেড়েছে গতকাল। বিপরীতে ১৫০টির দর কমেছে। অপরিবর্তিত ছিল ১৫৪টির। আর ক্রেতার অভাবে ৭৯ শেয়ারের কোনো কেনাবেচাই হয়নি। বাকি ১৪২ শেয়ারের ১০ লাখ টাকারও শেয়ার কেনাবেচা হয়নি।কাগুজে হিসাবে ৩১১ শেয়ারের কেনাবেচা হলেও লেনদেনের সিংহভাগ সময় প্রায় ২৫০টি শেয়ারের কোনো ক্রেতা ছিল না। মাঝে মধ্যে দু চারটি করে যে শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে, তাতে ভর করেই একটু একটু করে দর হারাচ্ছে সিংহভাগ শেয়ার। গত কয়েক মাস এ অবস্থা চলছে। সামান্য মুনাফার আশায় যে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারে লগ্নি করেছিলেন, তাঁরা নিজের নির্বুদ্ধিতাকে দুষছেন। অবশ্য সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে শেয়ারবাজার-সংশ্নিষ্ট ও বিশ্নেষকরা এ অবস্থার জন্য শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে অন্যতম দায়ী মনে করেন। বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন, ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে এ বাজারকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক টানাপোড়েন অবস্থা এ ধারাকে আরও খারাপ করে তুলেছে।নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম সম্প্রতি গণমাধ্যমে বলেছেন, এ অবস্থার জন্য সবাই আমাদের দিকে আঙুল তুলছে। গতকাল প্রকাশিত একটি গণমাধ্যম বিএসইসির চেয়ারম্যানকে উদ্ৃব্দত করে লিখেছে, এই সপ্তাহটা যাক, আগামী সপ্তাহ থেকে ব্যবস্থা নেব। এখন ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দিলে অনেক ফোর্সড সেল হয়ে যাবে। ফোর্সড সেলটা কোনোভাবে বন্ধ করার বুদ্ধি যদি পেতাম তাহলে ভালো হতো। চিন্তাভাবনা করছি, এই সপ্তাহটা সময় দেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্তত পাঁচ ব্রোকারেজ হাউসের এমডিরা এ প্রতিবেদককে বলেছেন আগামী সপ্তাহে ব্যবস্থা নেব বিএসইসির চেয়ারম্যানের এমন মন্তব্যের বড় নেতিবাচক প্রভাব ছিল বৃহস্পতিবারের লেনদেনে। এরই মধ্যে গুজব আছে, এবার তালিকাভুক্ত আরও শেয়ারের ওপর থেকে আরোপিত ফ্লোর প্রাইস তুলে নেবে বিএসইসি। যদিও সংস্থাটির পক্ষ থেকে গত কিছুদিন ধরে এ তথ্যকে গুজব বলা হচ্ছে।প্রসঙ্গত, দরপতন রোধে গত বছরের ২৮ জুলাই তালিকাভুক্ত সব শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের বাজার দরে সর্বনিম্ন দরসীমা বা ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বিএসইসি। এরপর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। লেনদেন নেমে আসে ২০০ কোটি টাকারও নিচে। এ অবস্থায় লেনদেন বাড়াতে গত ২৮ নভেম্বর ১৬৭ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়। ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া শেয়ারগুলোও ক্রমাগত দর হারাচ্ছে। এসব শেয়ারের প্রায় এক-চতুর্থাংশের বাজারদর গত দুই মাসেই ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ দর হারিয়েছে।এখনও ফ্লোর প্রাইস কার্যকর আছে তালিকাভুক্ত ২২২ কোম্পানির শেয়ারের। গতকাল বৃহস্পতিবার দিনের লেনদেন শেষে দেখা গেছে, এর মধ্যে ১৭৫টিই ফ্লোর প্রাইসে পড়ে ছিল, কোনো ক্রেতা ছিল না। বিনিয়োগকারীদের ভাষ্য, বিনিয়োগ রক্ষার নাম করে যে ফ্লোর প্রাইস দিয়ে বাজারকে ঠেকা দিয়ে রাখা হয়েছে, যা পুরো বাজারের ওপর চেপে বসেছে। বাজার একটুও নড়াচড়া করতে পারছে না।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের শিক্ষক ড. আল-আমীন সমকালকে বলেন, তিনি বাজারের এ অবস্থায় মোটেও অবাক নন। নিয়ন্ত্রক সংস্থা গত দুই বছরে এমন কিছু দুর্ভাগ্যজনক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার ফল যে শেষ পর্যন্ত এমনটাই হবে, তা সবাই জানত। এ বিষয়ে সতর্কও করা হয়েছিল। কিন্তু সংস্থাটি কারও কথা শোনেনি। এখন সবার বিনিয়োগ আটকে গেছে। কারও কাছে শেয়ার কেনাবেচার টাকা নেই। যে সামান্য কিছু কেনাবেচা হচ্ছে, এগুলো কৃত্রিম লেনদেন।শেয়ারবাজার বিশ্নেষক ও অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, গত দুই বছরে শেয়ারবাজারে অবাধ কারসাজি হয়েছে। অল্প কিছু মানুষ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কারও শাস্তি হয়নি। বরং শাস্তির নাম করে কাউকে কাউকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। মরা বাজারেও ৮০ টাকার শেয়ার হাজার টাকায় উঠেছিল। কারা করছে, কীভাবে দাম বাড়িয়েছে, তা সবাই জানে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা চোখ বুঝে ছিল। এ কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।