কোম্পানির পর্ষদ ভাঙায় নিয়ন্ত্রকের ক্ষমতা নিয়ে আপত্তি
![কোম্পানির পর্ষদ ভাঙায় নিয়ন্ত্রকের ক্ষমতা নিয়ে আপত্তি](https://stocknewsbd.s3.ap-southeast-1.amazonaws.com/6671/prothomalo-bangla-2021-02-566edc43-73fd-4ba5-81a5-c9cf38dfb75b-Dhaka_South_City_Corporation.jpg)
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বর্তমানে চাইলেই বাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কোনো কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে পারে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি) বিএসইসির এ এখতিয়ারের বিপক্ষে। বিএপিএলসি মনে করে, পর্ষদ ভাঙার ক্ষমতা থাকা উচিত একমাত্র আদালতের হাতে।বিদ্যমান বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। দুটিকে মিলিয়ে একটি আইন করা হচ্ছে। নতুন করে প্রণয়ন করা হচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ২০২৩। ইতিমধ্যে এর খসড়া তৈরি করা হয়েছে।খসড়ায় বলা হয়েছে, আইন লঙ্ঘনের কারণে কোনো ধরনের শুনানি ছাড়াই বিএসইসি কোনো কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করতে পারবে। তবে এ ব্যাপারে মতামত দিয়ে বিএপিএলসি বলেছে, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের এখতিয়ার থাকবে শুধু আদালতের হাতে। কমিশনের এ এখতিয়ার থাকা উচিত নয়।আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আর্থিক ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির বিকাশ এবং বিদ্যমান আইনে ‘পুঁজিবাজারের স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন ধারা থাকার কারণেই’ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ নতুন করে এ আইন করছে এবং ইতিমধ্যে একটি খসড়া তৈরি করেছে। বিএপিএলসি সম্প্রতি বিদ্যমান আইনের নানা ত্রুটি চিহ্নিত করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহর কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের কাছেও চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে। পাঁচ পৃষ্ঠার এ চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন বিএপিএলসির সভাপতি এম আনিস উদ দৌলা।ঠিক কী কী কারণে কোনো কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করা যাবে, সে ব্যাপারে একটি নির্দিষ্ট তালিকা থাকা উচিত বলেও মনে করে বিএপিএলসি। কিন্তু খসড়া আইনে এ ধরনের কোনো ধারা রাখা হয়নি। সংগঠনটি বলেছে, শুনানির সুযোগ না দিয়ে কোনো কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা স্থগিত করা যাবে না। এতে পুঁজিবাজারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘনের জন্য কোনো ব্যক্তি শুধু লিখিত অভিযোগ নয়, মৌখিক অভিযোগও দিতে পারবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে খসড়া আইনে। বিএপিএলসি বলেছে, ব্যক্তির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানও যাতে অভিযোগ দিতে পারে, সেই ধারা যুক্ত করতে হবে। আর মৌখিক অভিযোগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।বলা আছে, একজন চেয়ারম্যান ও চারজন কমিশনার থাকবেন কমিশনে। এখনো তাই আছে। ১৯৯৩ সালের আইনে বেসরকারি খাত থেকে একজন কমিশনার নিয়োগের কথা বলা থাকলেও খসড়া আইনে তা বাদ পড়েছে বলে প্রশ্ন তুলেছে বিএপিএলসি। সংগঠনটি এ বিধান বহাল রাখা এবং চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের যোগ্যতার শর্ত হিসেবে ২০ বছরের অভিজ্ঞতার পরিবর্তে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা রাখার পক্ষে মত দিয়েছে।খসড়া আইনে বলা হয়েছে, কমিশন কোনো জরিমানা আরোপ করলে ২৫ শতাংশ অর্থ কমিশনের ব্যাংক হিসাবে জমা দিয়ে দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল বা মামলা দায়ের করা যাবে। বিএপিএলসি বলেছে, এ অঙ্ক ১০ শতাংশ করা হোক। নইলে কোম্পানিগুলো আইনি সহায়তা পাওয়ার সুযোগ হারাবে।বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদ্যমান অধ্যাদেশ ও আইন মিলিয়ে একটি আইন হওয়ার বিষয়ে কাজ চলছে। বাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থেই তা করা হচ্ছে। খসড়া আইন তৈরি। এর ওপর অংশীজনদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। চূড়ান্ত খসড়া দাঁড় করাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগই। ফলে মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি।’খসড়া আইনে অস্পষ্ট ধারাতালিকাভুক্ত কোনো সিকিউরিটির ১০ শতাংশের সুবিধাভোগী মালিক বা কোম্পানির পরিচালক, কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা ছয় মাসের কম সময়ের মধ্যে শেয়ার কেনাবেচা করে কোনো লাভ করলে ওই লাভ কোম্পানিতে জমা দিতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে খসড়া আইনে। একটি প্রতিবেদনও দাখিল করতে হবে। বিএপিএলসি বলেছে, প্রতিবেদন দাখিলের পর কোম্পানি কী করবে, লাভের টাকা কেন জমা দিতে হবে এবং তা দিয়ে কোম্পানিই–বা কী করবে, তা স্পষ্ট নয়। এমন অস্পষ্ট ধারা থাকলে আইন লঙ্ঘনের প্রবণতা বাড়বে।তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালক, কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের সুবিধাভোগী ব্যবসার (ইনসাইডার ট্রেডিং) তথ্য কোনোভাবে প্রকাশ করতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে খসড়া আইনে। বর্তমান আইনেও তা নিষিদ্ধ। বিএপিএলসি বলেছে, সুবিধাভোগী ব্যবসা শুধু কোম্পানিগুলোর সুবিধাভোগীদের মাধ্যমেই সম্পাদিত হয়, এমন নয়। স্টক এক্সচেঞ্জ বা কমিশনের সংশ্লিষ্ট তথ্য পাওয়ার অধিকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারীর মাধ্যমেও হতে পারে। এমন নজির আগেও দেখা গেছে। সুবিধাভোগী ব্যবসা রোধ করতে উভয় পক্ষ থেকেই সুবিধাভোগীর তালিকা প্রকাশ করতে হবে।খসড়ায় বলা হয়েছে, আইনের বিধান লঙ্ঘনের দায়ে কোম্পানির পরিচালক, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, সচিব বা অন্য কোনো কর্মকর্তা তা লঙ্ঘন করেছেন বলে গণ্য হবে, যদি তাঁরা প্রমাণ করতে না পারেন যে এটা তাঁদের অজ্ঞাতসারে হয়েছে এবং আইন লঙ্ঘন রোধে তাঁরা চেষ্টা করেছেন।বিএপিএলসি এ ধারার মধ্যে শুধু ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে। বলেছে, ‘ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ’ শব্দযুগল ব্যাপক অর্থ বহন করে। অর্থাৎ এর মাধ্যমে কোম্পানির ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত সবাইকে বোঝায়। এখানে বলা যেতে পারে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা ব্যবস্থাপক।প্রস্তাবিত আইনে শেয়ার পুনঃক্রয়–সংক্রান্ত ধারা সংযোজন করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছে বিএপিএলসি। তবে খসড়া আইন নিয়ে কিছু বলতে রাজি হননি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ।তবে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা আদালতের হাতে গেলে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হতে পারে। ফলে তা বিএসইসির হাতেই থাকা উচিত। আর অনেক সময় জরুরি পদক্ষেপ নিতে হয়। ফলে শুনানি ছাড়া সাময়িকভাবে ভেঙে দিয়ে পরে শুনানির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।মৌখিক অভিযোগের পরিবর্তে লিখিত অভিযোগই ভালো মনে করেন ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী। কারণ, অভিযোগ রেকর্ড করার একটি বিষয় আছে। তিনি বলেন, ব্যক্তির সংজ্ঞার মধ্যে যদি প্রতিষ্ঠান থাকে, তাহলে প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা কিছু করতে হবে না। নইলে প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ করার এখতিয়ার রাখতে হবে।