কেয়া কসমেটিকসের শেয়ার কারসাজির ফাঁদে বিনিয়োগকারী!

পুঁজিবাজারে ওষুধ ও রসায়ন খাতে তালিকাভুক্ত কেয়া কসমেটিকসের ২০২১-২২ হিসাববছর শেষ হয়েছে গত ৩০ জুন। সে হিসাবে কোম্পানিটিকে সমাপ্ত হিসাববছরের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ ছাড়াও লভ্যাংশ ঘোষণা-সংক্রান্ত পর্ষদ সভা করতে হবে। এ লভ্যাংশ ঘোষণাকে কেন্দ্র করেই কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করে চলছে একটি চক্র এবং সেই কারসাজির ফাঁদে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। বাজারে কোম্পানিকে নিয়ে নানাভাবে কারসাজিকারীরা ছড়াচ্ছে যে কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা ছাড়াও লভ্যাংশ ঘোষণা করা হবে। সেটা ২০২০ হিসাববছরের থেকে ভালো লভ্যাংশ ঘোষণা আসবে। এ ধরনের গুজব বা প্রলোভন দেখানো তথ্যের ফাঁদে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। এতে হারাচ্ছেন নিজেদের বিনিয়োগ এবং বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে চলেছেন তারা।তাই কোম্পানিটির শেয়ারের হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়া এবং এর অস্বাভাবিক লেনদেন খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। সেইসঙ্গে বড় ধরনের কারসাজির আগেই কোম্পানির সমাপ্ত হিসাববছরের তথ্য প্রকাশ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে লভ্যাংশ ঘোষণাকে পুঁজি করে কারসাজিকারীরা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বড় ক্ষতি করতে না পারে। এছাড়া গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানো কারসাজিকারীদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কোম্পানিটির আর্থিক ও বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনায় দেখা যায়, দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির বর্তমান অবস্থা ও সর্বশেষ ব্যবসা এবং আর্থিক প্রতিবেদনের কোনো তথ্য হালনাগাদ নেই। তবে কোম্পানিটির ২০২০-২১ হিসাববছরের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য ডিএসইতে দেয়া আছে। সে তথ্য অনুসারে, কোম্পানিটির ২০২০-২১ হিসাববছরে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ২১ পয়সা এবং শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ২৩ পয়সা।এদিকে কোম্পানিটির শেয়ারদর ও লেনদেনের চিত্রতে দেখা যায়, কোম্পানিটির শেয়ারদর বর্তমানে অভিহিত মূল্যের (ফেস ভ্যালু) নিচে রয়েছে। তবে কোম্পানির শেয়ার চলতি বছরের গত ৩১ জুলাই থেকে বাড়তে শুরু করে। এরপর শেয়ারদর কমা ও বৃদ্ধির মাধ্যমে সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ৭ টাকা ৮০ পয়সায় দাঁড়ায়। এর মধ্যে গত সোমবার কোম্পানির শেয়ারদর বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৮ টাকা ৩০ পয়সা, যা গত প্রায় আট মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে গত ১৫ মার্চ কোম্পানির শেয়ারদর ছিল ৮ টাকা ৪০ পয়সা, যা চলতি বছরের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এছাড়া চলতি বছরের মধ্যে কোম্পানির সর্বনি¤œ দর ২৮ জুলাই হয় ৬ টাকা ৩০ পয়সা।অপরদিকে কোম্পানির লেনদেন চিত্রে দেখা যায়, গত ৩১ আগস্ট কোম্পানির শেয়ার লেনদেন বৃদ্ধি পায়। সেদিন কোম্পানির এক কোটি ৩৯ লাখ ৮১ হাজার ৯৮২টি শেয়ার লেনদেন হয়। এর পর কোম্পানির শেয়ার লেনদেন আরও বেড়ে গত ৩ অক্টোবর তিন কোটি ৪০ লাখ ৩৯ হাজার ৭৯৪টি হয়, যা গত এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন।বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছাড়ানোর মাধ্যমে অনেক কারসাজিকারীরা বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি করে। যেখানে কেয়া কসমেটিকসের তথ্য ডিএসইতে নেই এবং কোম্পানির ব্যবসা বর্তমানে কী অবস্থায় আছে তা বাজারসংশ্লিষ্ট কেউ জানে না, সেখানে সেই কোম্পানির শেয়ারদর হঠাৎ করেই বাড়ে। আবার লেনদেন হয় কোটি শেয়ারের ওপরে।এদিকে কোম্পানিটি এখনও ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ হিসাববছরের অডিট শেষ করতে পারেনি, কিন্তু কোম্পানি ভালো লভ্যাংশ দেবেÑএ ধরনের গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দর বাড়ানো হচ্ছে। আর বিনিয়োগকারীরা সেদিকে ঝুঁকছে। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ ধরনের গুজব এবং মিথ্যা তথ্য ছড়ানো বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া দরকার, যাতে করে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির সম্মুখীন না হয়।এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোম্পানির এক কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, ২০২০-২১ সালে আমাদের অডিট শেষ না হওয়ায় এবং কিছু সমস্যার কারণে আর্থিক তথ্য প্রকাশ বা লভ্যাংশ-সংক্রান্ত কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি। যে কারণে পরে চলতি বছরের তথ্যও আর ডিএসইতে আপডেট করা নেই। তবে এ বছর একসঙ্গে ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ সালের অডিট চলছে, এখনও শেষ হয়নি।কোম্পানি ভালো লভ্যাংশ দেবেÑএমন তথ্য বাজারে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোম্পানির পক্ষ থেকে বা কোম্পানির কোনো কর্মকর্তা এ ধরনের গুজব কিংবা মিথ্যে তথ্য ছড়ায় না। আর সেটা করবেই বা কীভাবে, যেখানে এখনও দুই বছরের অডিট শেষ হয়নি। আগে অডিট শেষ হবে, এরপর বোর্ড মিটিংয়ে সেটা পর্যালোচনা করে দেখা যাবে লভ্যাংশ দেয়া যায় কি না এবং কত দেয়া যায়। তাহলে সেটা তো এখন কোম্পানির কারও বা অন্য কারও বলা সম্ভব নয়।শেয়ারদর ও লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোম্পানির শেয়ার এখন ফেস ভ্যালুর নিচে আছে। গত কয়েক দিন দেখেছি, কিছুটা মুভ করেছে এবং বেড়েছে। তবে সেটা যদি স্বাভাবিকভাবে হয়, তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু যদি কেউ গুজব বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে করে অবশ্যই সেটা অন্যায়। সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সাবধান থাকতে হবে। ডিএসই থেকে কোনো কিছু জানতে চেয়েছে কি নাÑজানতে চাইলে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ডিএসই থেকে শেয়ারদর বা লেনদেনের বিষয়ে কিছু জানতে চাইনি।