কারসাজিতে হিরু চক্রের মুনাফা ১৩৪ কোটি টাকা, জরিমানা ১১ কোটি

Date: 2022-10-22 21:00:19
কারসাজিতে হিরু চক্রের মুনাফা ১৩৪ কোটি টাকা, জরিমানা ১১ কোটি
বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে কারসাজি করে কখনো শাস্তির কবলে পড়তে হলেও সেটা ওই অবৈধ উপায়ের আয়ের তুলনায় জরিমানা অনেক কম হয়ে থাকে। এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। যেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি অধ্যাপক শিবলী ‍রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশনও। অথচ শেয়ারবাজারে কারসাজিরোধে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে আয়ের তুলনায় কম শাস্তিকে দায়ী বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে শাস্তির আওতায় আনে। এরমধ্যে গত কয়েক মাসে এনআরবিসি ব্যাংক, ফরচুন সুজ, বিডিকম অনলাইন, ওয়ান ব্যাংক, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স এবং ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে আবুল খায়ের হিরু চক্রকে (হিরুর বাবা, স্ত্রী, বোন, নিজের কোম্পানি) ১০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই শাস্তির বিষয়ে অভিযুক্তদেরকে চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দেয় কমিশন।কিন্তু হিরুর নেতৃত্বাধীন চক্র কারসাজিতে মুনাফা করে ১৩৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। যা সংশ্লিষ্ট ৭টি কোম্পানি নিয়ে কয়েক মাসের শেয়ার কারসাজি তদন্তে গঠিত কমিটির রিপোর্টে প্রকাশ করা হয় এবং অভিযুক্তদেরকে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।এই শাস্তি প্রদানের আগে সবাইকে শুনানিতে নিজেদের পক্ষে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয় বিএসইসি। সবার পক্ষে ব্যাখ্যা দেন হিরু। কিন্তু তার বক্তব্য কমিশনের কাছে বিবেচনাযোগ্য হয়নি বলে অভিযুক্তদেরকে দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করে কমিশন। তারপরেও কারসাজির তুলনায় শাস্তি কম দিয়েছে কমিশন। এসব কারনে শেয়ারবাজার থেকে অনিয়ম দূর করা সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, যদি অবৈধ আয়ের তুলনায় শাস্তি কম দেওয়া হয়, তাহলে এর মাধ্যমে অনেকটা কারসাজিকে উৎসাহিত করা হয়।এ বিষয়ে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বিজনেস আওয়ারকে বলেন, কারসাজির আয়ের তুলনায় কম শাস্তি দিয়ে কখনো সমস্যা কাটিয়ে উঠা সম্ভব না। অন্তত্বপক্ষে সমপরিমাণ শাস্তি দেওয়া দরকার। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে কোন শাস্তিই দেওয়া হয় না। আর কম শাস্তি দেওয়ার পরেও আদায় কি পরিমাণ হয়, সেখানেও ভাবনার বিষয় আছে।ডিএসই গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ি, কারসাজিকাররা এনআরবিসি ব্যাংক, ফরচুন সুজ, বিডিকম অনলাইন, ওয়ান ব্যাংক, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স এবং ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের কৃত্রিম দর বৃদ্ধির মাধ্যমে ১৩৪ কোটি ২৪ লাখ টাকার মুনাফা করে। এরমধ্যে রিয়েলাইজড গেইন ৪৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ও আনরিয়েলাইজড গেইন (সিকিউরিটিজ বিক্রি অসম্পন্ন) ৮৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা ছিল।এ বিষয়ে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, যেহেতু মামলার বিষয়, তাই বিস্তারিত না জেনে কিছু বলা ঠিক হবে না। এসব কোম্পানির কারসাজির বিষয়ে শুনানিতে আবুল খায়ের হিরু কমিশনকে জানায়, বাজারের উন্নতি করতে ও লেনদেন বাড়াতে আমরা বিপুল পরিমাণে লেনদেনের চেষ্টা করেছি। যে সময় করোনার কারনে বাজারের লেনদেনের পরিমাণ খুবই কমে গিয়ে কঠিন পরিস্থিতির তৈরী হয়েছিল। তবে দেশের অর্থনীতির ভালো অবস্থার কারনে শেয়ারবাজারের মন্দাবস্থা থাকবে না এবং ঘুরে দাঁড়াবে বলে জানতাম। এজন্য বিএসইসি চেয়ারম্যানের মতো ভালো নেতৃত্ব ও কিছু ভালো পার্টিসিপেন্ট দরকার।তিনি দাবি করেন, ট্রেডারকে কোম্পানিগুলোর শেয়ার বিভিন্ন তারিখে কেনার জন্য আদেশ দিয়েছিলাম। যেখানে ম্যানুপুলেটিংয়ের কোন উদ্দেশ্য ছিল না। এছাড়া শেয়ারগুলো অবমূল্যায়িত ছিল বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমাদের অন্যকোন মোটিভ ছিল না, কিন্তু অবমূল্যায়িত শেয়ারে বিনিয়োগ করে মুনাফার সুযোগ পেয়েছি।তিনি বলেন, সবসময় রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনস মেনে চলার চেষ্টা করি। আমাদের লেনদেনে শেয়ারবাজারে তারল্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে, যা চূড়ান্তভাবে স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন বৃদ্ধি করেছে। তারপরেও ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি। যা অবহেলার কারনে ও অচ্ছিাকৃতভাবে ঘটেছে। ভবিষ্যতে লেনদেনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকব।তার বক্তব্যে উপস্থাপিত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে কমিশন মনে করে। যে কারনে তার ব্যাখ্যা কমিশনের কাছে বিবেচনাযোগ্য হয়নি। এই পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারের উন্নয়ন, বাজারে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা রক্ষার স্বার্থে হিরু চক্রকে জরিমানা করা প্রয়োজন এবং সমীচীন বলে কমিশন মনে করে।শাস্তির কমের বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, যেকোন বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য প্রথমে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরপরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে শুনানিতে ডাকা হয়। এতে অভিযুক্তদের লিখিত ও মৌখিক জবাব শোনার পরে সবসময় তদন্ত কমিটির সব অভিযোগ প্রমাণিত হয় না। তখন হেয়ারিং কমিটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত অনিয়মগুলো আমলে নেয়। ফলে তদন্ত কমিটির অভিযোগের পুরোটা আয় অবৈধ থাকে না। যাতে অবৈধ আয় এবং শাস্তির মধ্যে পার্থক্য হয়ে থাকে।

Share this news