জটিলতা পিছু ছাড়ছে না ডেল্টা লাইফের

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে একের পর এক জটিলতার মধ্যে পড়ছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা এবং আইডিআরএ ও ডেল্টা লাইফের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে কোম্পানিটির পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। এর ফলে কোম্পানিটি জটিলতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরবে বলে প্রত্যাশা ছিল বিনিয়োগকারীদের। কিন্তু দুই দফা কোম্পানিটির পর্ষদ সভা স্থগিত হওয়ার ফলে আবারো কোম্পানিটির স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সংশয় বাড়ছে।তথ্যানুসারে, গতকাল ডেল্টা লাইফের ২০১৯, ২০২০ ও ২০২১ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন সংক্রান্ত পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। যদিও গতকাল স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে কোম্পানিটি পর্ষদ সভা স্থগিত করার কথা জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিএসইর পক্ষ থেকে পর্ষদ সভা স্থগিতের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ আছে কিনা তা জানতে চাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডেল্টা লাইফের পুনর্গঠিত পর্ষদের সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে কোম্পানিটির একজন স্বতন্ত্র পরিচালক ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছেন। তার স্থলে উচ্চ আদালতের অনুমোদনক্রমে নতুন করে খন্দকার সাবির মোহাম্মদ কবিরকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করা হয়। তিনি একই সঙ্গে কোম্পানিটির অডিট কমিটিরও চেয়ারম্যান। গতকাল পর্ষদ সভার আগে অডিট কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অডিট কমিটির চেয়ারম্যান উপস্থিত না থাকায় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। এ কারণে পর্ষদ সভাও করা সম্ভব হয়নি। এ বছরের ৫ অক্টোবরের মধ্যে কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজনের সময়সীমা নির্ধারিত রয়েছে। এদিকে গতকালের পর্ষদ সভা স্থগিতের খবরে পুঁজিবাজারে ডেল্টা লাইফের শেয়ারে দরপতন হয়েছে। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার ৬ দশমিক ৪২ শতাংশ কমে ১৪৪ টাকা ৩০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। দিনের দরপতনের তালিকায় শীর্ষে ছিল কোম্পানিটি। গতকাল ডিএসইতে কোম্পানিটির ১৪ লাখ ২৪ হাজার ৭৯২টি শেয়ার ২১ কোটি ৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকায় লেনদেন হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা ছিল আদালতের নির্দেশনা অনুসারে ডেল্টা লাইফ বিগত বছরগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ ও স্থগিত থাকা এজিএম সম্পন্ন করবে। এতে বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে জানার পাশাপাশি লভ্যাংশ পেতেন। তবে পর্ষদ সভা স্থগিত হয়ে যাওয়ার কারণে কোম্পানিটির শেয়ার দরে যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে, সেক্ষেত্রে কোম্পানিটির পর্ষদ সদস্যদের কোনো ধরনের গাফিলতি রয়েছে কিনা সেটি পরীক্ষা করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশনা এবং আইডিআরএ ও ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে কোম্পানিটির পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। পাশাপাশি আইডিআরএ কর্তৃক নিয়োগ করা প্রশাসক মো. কুদ্দুস খানকে প্রত্যাহার করা হয়। পুনর্গঠিত পর্ষদকে বেশকিছু শর্ত পরিপালনের নির্দেশনা দেয়া হয় সে সময়। এর মধ্যে রয়েছে প্রচলিত আইন অনুসারে পর্ষদের কার্যক্রম পরিচালনা, কোম্পানির আর্থিক বিবরণী সম্পর্কিত তথ্য উদঘাটনে নতুন করে নিরীক্ষা করা, এরই মধ্যে নিরীক্ষিত বিষয়গুলো শুনানি সাপেক্ষে নিষ্পত্তি করা, পুনর্গঠিত পর্ষদকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কোম্পানির এক বছরের ব্যবসায়িক কৌশলপত্র প্রণয়ন ও এর অগ্রগতির বিষয়টি এক মাস পরপর আইডিআরএর কাছে জমা দেয়া, বীমা আইন ও অন্যান্য আরোপিত বিধিনিষেধ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করে অতি দ্রুত একজন দক্ষ ও গ্রহণযোগ্য সিইও নিয়োগ করা, আগে যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে এর পুনরাবৃত্তি রোধে ব্যবস্থা নেয়া, আইডিআরএ কর্তৃক এর আগে ডেল্টা লাইফকে করা জরিমানার বিষয়টি আইনানুসারে বিবেচনা করা, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কোম্পানির পরবর্তী এজিএম আয়োজন করা এবং ডেল্টা লাইফের পর্ষদে পর্যবেক্ষক হিসেবে মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা। পাশাপাশি ডেল্টা লাইফের বিরুদ্ধে আইডিআরএর দায়ের করা মামলা এবং আইডিআর-এর বিরুদ্ধে কোম্পানির সাবেক পর্ষদ সদস্যদের দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিতেও বলা হয়েছিল সে সময়।