জরিমানার পরও কারসাজি চলছে বিডিকমের শেয়ারে!

Date: 2022-09-24 23:32:04
জরিমানার পরও কারসাজি চলছে বিডিকমের শেয়ারে!
কারসাজিতে জরিমানার পরও থেমে নেই বিডিকম অনলাইনের শেয়ারের দর বৃদ্ধি। প্রতিনিয়ত বাড়ছে কোম্পানিটির শেয়ারদর। চলতি বছরের মার্চ থেকে তা অব্যাহত রয়েছে। গত ৭ থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত বিডিকম অনলাইনের শেয়ারের দাম ২৩ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে ৩৪ টাকা ৩০ পয়সা হয়। শতাংশের হিসাবে যা ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি। যে কারণে ডিআইটি কো-অপারেটিভকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯-এর ধারা ১৭ অনুসারে হিরো ও তার বাবা এবং সহযোগীদের ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কিন্তু এই কারসাজি ও জরিমানার পরও থেমে নেই কোম্পানিটির শেয়ারদর বৃদ্ধি। ৩৪ টাকা ৩০ পয়সায় কোম্পানিটির শেয়ারে কারাসজির কারণে যে জরিমানা করা হয়েছিল, সে শেয়ার গত ২২ সেপ্টেম্বর এসে দাঁড়িয়েছে ৫৫ টাকা ৪০ পয়সায়। তাই কোম্পানিটির শেয়ারে এখনও কারসাজি চলছে বলে জানিয়েছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। তাই এ বিষয়ে বিএসইসির আরও কঠোর নজরদারি ও কারসাজিকারীদের কঠিন শাস্তির দাবি তুলছেন তারা।কোম্পানিটির শেয়ারদর ও লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ৬ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ২৩ টাকা ৬০ পয়সা। এরপর টানা উত্থানের মাধ্যমে শেয়ারটির দর ১৫ মার্চ দাঁড়ায় ৪৫ টাকা ৫০ পয়সায়। মাত্র ৯ দিনে শেয়ারটির দর কারসাজি করে বাড়ানো হয় ২১ টাকা ৯০ পয়সা বা ৯২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এর পর শেয়ারটির দর আবার কিছুটা কমা ও বৃদ্ধির মাধ্যমে গত ২২ সেপ্টেম্বর দাঁড়িয়েছে ৫৫ টাকা ৪০ পয়সায়। তবে আলোচ্য সময় শেয়ারটির দর ৫০ টাকা ৬০ পয়সা পর্যন্ত উঠেছিল। সে হিসাবে গত ৬ মার্চ থেকে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৩২ টাকা বা ১৩৫ শতাংশ ৫৯ পয়সা।এদিকে মাঝে কারসাজি করে ৯ দিনে শেয়ারদর ৪৫ শতাংশের বেশি বাড়লেও গত ১৫ মার্চ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেড়েছে ২২ দশমিক ১৯ শতাংশ। আগের তুলনায় গত কয়েক মাসে কম বাড়লেও বিষয়টিকে কারসাজির অন্তর্ভুক্ত বলছেন সংশ্লিষ্টরা।এদিকে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেনে দেখা যাচ্ছে, গত ৬ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছিল মোট ২ লাখ ১৮ হাজার ২২০টি। এরপর ১০ মার্চ শেয়ার লেনদেন হয় ১ কোটি ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৬৫টি। এতে মাত্র ৩ দিনের মাথায় এক লাফে শেয়ারটির লেনদেন ৫৩ গুণ ছাড়িয়েছে। এরপর থেকে আবার শেয়ার লেনদেন কমতে থাকে। অপরদিকে সাম্প্রতিক লেনদেনে দেখা যায়, গত ১২ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭ লাখ ৭০ হাজার ২৭২টি। এরপর গত ১৮ সেপ্টেম্বর লেনদেন হয়েছে ১ কোটি ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৭০৯টি। এরপর আবার লেনদেন কমতে থাকে এবং গত ২২ সেপ্টেম্বর এসে দাঁড়ায় ৫২ লাখ ৫ হাজার ৭১২টিতে, যা কারসাজির ইঙ্গিত দেয় বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।এছাড়া গত সপ্তাহে শেয়ারদর বৃদ্ধির দিক থেকে সাপ্তাহিক দর বাড়ার শীর্ষে বা টপটেন গেইনারে সবার ওপরে রয়েছে বিডিকম কোম্পানিটির শেয়ার। গত সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৫২ দশমিক ৬২ শতাংশ। এ সময়ে কোম্পানিটির মোট ৩২ কোটি ৪৬ লাখ ৪৪ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে; যার বাজারদর ১৬২ কোটি ৩২ লাখ ২০ হাজার টাকা।দরবৃদ্ধির কারণ হিসেবে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন এবং এর ব্যবসা ও সার্বিক দিক থেকে কোম্পানির শেয়ারদর অনেক বেশি বা অতিমূল্যায়িত বা অস্বাভাবিক। তাই প্রথমে যারা কারসাজি করেছেন, তারা একটানা শেয়ারটির দর বাড়িয়েছেন। এরপর বিএসইসি জরিমানা করলে কোম্পানিটির শেয়ারদর আর বৃদ্ধি পাওয়ার কথা নয়। কারণ এর আগেই কোম্পানিটির শেয়ার অতিমূল্যায়িত বা অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হয়েছে। তাহলে এখনও কেন বাড়ছে? এমন প্রশ্ন তুলে তারা বলেন, যেখানে ডিএসইর প্রশ্নের জবাবে কোম্পানিটি বলছে, শেয়ারদর ও লেনদেন অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির পেছনে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই, সেখানে একটি অতিমূল্যায়িত শেয়ারের দর বৃদ্ধি পাওয়াটা স্বাভাবিক বিষয় নয়।তারা বলছেন, কোম্পানিটির শেয়ারদর এভাবে বেড়ে চলার পেছনে কারসাজি চক্র রয়েছে। এর সঙ্গে আগের কারসাজি চক্রের লোকজনই জড়িত। সেই সঙ্গে এমনও হতে পারে, তাদের সঙ্গে নতুন কেউ যুক্ত হয়েছে। তাই এ বিষয়ে বিএসইসির নজরদারি বাড়ানোর প্রয়োজন বলছেন সংশ্লিষ্টরা। যাতে করে কারসাজি শেষে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন এবং কাউকে ক্ষুদ্র জরিমানা নয় বরং উল্লেখযোগ্য জরিমানা করা উচিত এবং ভবিষ্যতে যাতে কারসাজি করতে না পারে সে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।এ বিষয়ে কোম্পানিটির সচিব একেএম কুতুব উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, কোম্পানির শেয়ারদর ও লেনদেন অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির পেছনে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই) নেই। এ বিষয়ে কয়েকদিন আগে চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) জানানো হয়েছে। এর দুদিন পরই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকেও জানতে চাওয়া হলে একই তথ্য জানানো হয়।কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি ও জরিমানার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করায় এর আগে বিএসইসি জরিমানা করেছে। ঠিক একইভাবে বা অন্য কোনোভাবে যদি এখনও কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি চলে তাহলে কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হোক। কারসাজিকারী যেই হোক না কেন, শেয়ার নিয়ে কারসাজি যাতে বন্ধ হয় এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির হাত থেকে বাঁচেন সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।’

Share this news