ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে ফার্মা খাতের ১১ কোম্পানির শেয়ার

Date: 2023-01-14 04:00:12
ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে ফার্মা খাতের ১১ কোম্পানির শেয়ার
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের ৩৪টি কোম্পানির মধ্যে ১১টি শেয়ারদর ‘মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও’ স্বাভাবিকের চেয়ে উপরে অবস্থান করছে। যার কারণে এই ১১টি কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ এখন ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী এই ১১টি কোম্পানির পিই রেশিও ৪০ বা তার বেশি।সাধারণত পিই রেশিও ১৪ থেকে ১৮ এর মধ্যে থাকা পর্যন্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা নিরাপদ ধরা হয়। কিন্তু এর চেয়ে বেশি হলে বিনিয়োগে ভাবতে হবে। কারণ পিই রেশিও যত বেশি হবে ঝুঁকিও তত বেশি হবে। তবে যদি কোম্পানির আয় সামনে বাড়ার সম্ভাবনা থাকে তবে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। কারণ সেক্ষেত্রে আয় বাড়ার পর পিই রেশিও কমে যাবে। তাছাড়া পিই রেশিও কম হলেও যদি সামনে কোনো কোম্পানির আয় কমে যাওয়ার কারণ থাকে তবে ওই কোম্পানিতেও বিনিয়োগ করা উচিত হবে না।মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও ৪০ এর বেশি থাকা এই ১১টি কোম্পানির মধ্যে রয়েছে একটিভ ফাইন, এএফসি এগ্রো, এম্বি ফার্মা, বিকন ফার্মা, জেএমআই হাসপাতাল, জেএমআই সিরিঞ্জ, কহিনূর কেমিক্যাল, ওরিয়ন ইনফিউশন, ফার্মা এইড, রেকিট বেনকিজার এবং ওয়াটা কেমিক্যিালস লিমিটেড।পিই রেশিও কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ:শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সূচকের বাইরে বিবেচনাযোগ্য আরেক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক ‘মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও। এটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আগে জেনে নিন মূল্য আয় অনুপাতের মানে কী। শেয়ারবাজারের একটি কোম্পানির শেয়ারের দাম এবং ওই কোম্পানির আয়ের অনুপাতের তুলনাটিই পিই রেশিও হিসেবে পরিচিত।শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো বছরে চারবার আয়ের হিসাব প্রকাশ করে। এর মধ্যে বার্ষিক আয়ের হিসাবটিই একমাত্র নিরীক্ষিত। বাকি তিনটি আর্থিক প্রতিবেদন সাধারণত অনিরীক্ষিত থাকে। এসব আর্থিক প্রতিবেদন ও আয়ের ভিত্তিতে কোম্পানির পিই রেশিওর পরিবর্তন ঘটে। যে কোম্পানির পিই রেশিও যত কম, সেই কোম্পানিতে বিনিয়োগে ঝুঁকিও তত কম। এ কারণে যেকোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের ওই কোম্পানির পিই রেশিও খতিয়ে দেখা জরুরি বলে মনে করেন শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞরা।শেয়ারবাজারে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের অনেকে মার্জিন সুবিধাও নিয়ে থাকেন। মার্জিন বিতরণের ক্ষেত্রেও মার্জিনদাতা সিকিউরিটিজ হাউজগুলো পিই রেশিও বিবেচনায় নেয়। সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী, কোনো কোম্পানির পিই রেশিও ৪০ বা তার বেশি হলে ওই কোম্পানির শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে মার্জিন সুবিধা পাওয়া যায় না।পিই রেশিও হিসাব:ধরা যাক, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ‘এ’কোম্পানির আর্থিক বছর শেষ হয়েছে। বছর শেষে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৫ টাকায়। বাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৫০ টাকা। তাহলে কোম্পানিটির পিই রেশিও দাঁড়াবে ১০-এ। অর্থাৎ একটি কোম্পানির শেয়ারের দামকে ওই কোম্পানির ইপিএস দিয়ে ভাগ করে যে ভাগফল পাওয়া যায়, তা-ই কোম্পানিটির পিই রেশিও।শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পিই রেশিও একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক সূচক। তবে আমাদের শেয়ারবাজারে অনেক কোম্পানির ক্ষেত্রে পিই রেশিওর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ। কারণ, যে ইপিএসের ভিত্তিতে পিই রেশিও হিসাব করা হয়, বেশির ভাগ কোম্পানির ক্ষেত্রে সেই ইপিএসের বিশ্বাসযোগ্যতা বেশি প্রশ্নবিদ্ধ। তাই সূচক হোক বা পিই রেশিও—শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের গুরুত্বপূর্ণ এ দুই নির্দেশকের কোনোটিই পরিপূর্ণ, নির্ভুল ও বিশ্বাসযোগ্য নয়। তাই বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের আগে দেখতে হবে আরও অনেক কিছু।ফার্মা খাতের এই ১১টি কোম্পানির মধ্যে একটিভ ফাইন পিই রেশিও ৪০.২১, এএফসি এগ্রোর ৩৯.১৭, এম্বি ফার্মার ৪৮০.৯০, বিকন ফার্মার ৭২.৮০, জেএমআই হাসপাতালের ৪০.১৪, জেএমআই সিরিঞ্জের ৭২.৫৯, কহিনূর কেমিক্যালের ৪০.০৫, ওরিয়ন ইনফিউশনের ১৬১.৪৭, ফার্মা এইডের ৯৯.৩৩, রেকিট বেনকিজারের ৩৯.৪৮ এবং ওয়াটা কেমিক্যিালস লিমিটেড ১৭২.৫৯ পয়েন্টে পিই রেশিও অবস্থান করছে।

Share this news