জেমিনির শেয়ারে কারসাজি তদন্তে বিএসইসির কমিটি

Date: 2022-10-25 17:00:16
জেমিনির শেয়ারে কারসাজি তদন্তে বিএসইসির কমিটি
দেশের পুঁজিবাজারে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেমিনি সি ফুডের শেয়ারদর ও লেনদেনে অস্বাভাবিক গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটির শেয়ারদর ও লেনদেনে কারসাজির চেষ্টা, ইনসাইডার ট্রেডিং এবং অন্যান্য কার্যকলাপ তদন্তে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি। কমিটিকে আদেশ জারির আগামী ২০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল বিএসইসি থেকে একটি আদেশ জারি করা হয়। একইসঙ্গে বিষয়টি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) এবং কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি বিষয়টি সব ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংকারদের অবহিত করতে বলা হয়েছে।কমিটির সদস্যরা হলেনÑবিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ রকিবুর রহমান ও সহকারী পরিচালক ফয়সাল ইসলাম।বিএসইসির আদেশে বলা হয়েছে, বিএসইসি জেমিনি সি ফুডের শেয়ারের লেনদেনের ক্ষেত্রে কিছু অস্বাভাবিক মূল্য এবং ভলিউম গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেছে। কমিশন মনে করে এ বিষয়টি বিনিয়োগিকারীদের স্বার্থে তদন্তকরা প্রয়োজন। তদন্তে কোম্পানিটির সাম্প্রতিক অনিরীক্ষিত ও নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা, বাজার কারসাজির প্রচেষ্টা চিহ্নিত করা, ইনসাইডার ট্রেডিং শনাক্ত করা এবং অন্যান্য অসদাচরণ বা প্রতারণামূলক কার্যকলাপ হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানানো হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা এ আদেশ জারির ২০ কার্যদিবসের মধ্যে বিএসইসিতে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে বলে জানিয়েছে কমিশন। তাই সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯-এর (১৯৬৯ সালের অর্ডিন্যান্স নং ঢঠওও) সেকশন ২১ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩-এর (১৯৯৩ সালের ১৫নং আইন) ১৭ক ধারা এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন (সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ) ১৯৯৫-এর বিধি ৬ অনুযায়ী কোম্পানিটির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেয়া হলো। তদন্ত কর্মকর্তারা এ আদেশ জারির ২০ কার্যদিবসের মধ্যে বিএসইসিতে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।প্রসঙ্গত, জেমিনি সী ফুডের সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে এর এনএভি পাঁচ টাকা ৭৬ পয়সা হলেও ১৮ অক্টোবর শেয়ারের মূল্য ৫৬১ টাকা হয়। সেইসঙ্গে কোম্পানির চলতি ২০২১-২২ হিসাববছরের আয়ে এক ভুতুড়ে হিসাব দেখা যায়। কোম্পানি হিসাববছরের প্রথম ছয় মাসে শেয়ারপ্রতি পাঁচ টাকার বেশি আয় করলেও তৃতীয় প্রান্তিকে আয় করেছে মাত্র চার পয়সা। এদিকে ৯ মাসের ব্যবধানে এনএভি বেড়েছে ৫১৯ শতাংশের বেশি। এরপর আবার বছর শেষে কোম্পানির ইপিএস দাঁড়িয়েছে ১২ টাকা ৪৯ পয়সা এবং এনএভি হয়েছে ১৩ টাকা ১০ পয়সা। এতে ৯ মাসের বিপরীতে মাত্র তিন মাসে ইপিএস বেড়েছে সাত টাকা ৩৩ পয়সা বা ১৪২ শতাংশ এবং এনএভি বেড়েছে সাত টাকা ৩৪ পয়সা বা ১২৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অপরদিকে কোম্পানিটির বিগত আর্থিক হিসাবে দেখা গেছে, ২০২০ সালে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৯ টাকা ৮৩ পয়সা। এর আগের ২০১৮ ও ২০১৯ হিসাববছরে যথাক্রমে ইপিএস হয়েছে মাত্র ৭০ ও ৩৭ পয়সা। আর ২০২০ সালে এনএভি ছিল মাত্র ২১ পয়সা। তাই কোম্পানিটির আয়ে এবং আর্থিক প্রতিবেদনে এমন গড়মিলে হিসাবকে কারসাজি বলছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। সেইসঙ্গে এর পেছনে কোনো কারসাজিকারী চক্র জড়িত রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে বিনিয়োগকারী ও বাজারসংশ্লিষ্টরা দাবি জানান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটির সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি।কোম্পানিটির শেয়ার ও লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ১৯ অক্টোবর কোম্পানির শেয়ারদর দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে আসে। গত বছরে ফ্লোর প্রাইস দেয়ার পর কোম্পানির শেয়ার ১৪৪ টাকা ৩০ পয়সায় বেশ কিছুদিন অবস্থান করে। এরপর ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া হলে শেয়ারটির দর কারসাজি চক্র ৭ জুন ১৪১ টাকা ৫০ পয়সায় নামিয়ে আনে এবং পরের দিন থেকে বাড়াতে শুরু করে। এতে ৯ জুন শেয়ারদর বেড়ে দাঁড়ায় ১৫৪ টাকা ৮০ পয়সা। এরপর উত্থান-পতনের মাধ্যমে শেয়ারটির দর প্রথমে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ ৫২৮ টাকার ওপরে ওঠানো হয়। এরপর কারসাজি চক্র শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে গেলে শেয়ারদর কমতে থাকে। কিন্তু কারসাজি তখনও শেষ হয়নি শেয়ারটিতে। এরপর আবার কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারটির দর ধীরে ধীরে কমানো-বাড়ানোর মাধ্যমে ১৯ অক্টোবর দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে নেয়া হয়। এদিন লেনদেন শেষে শেয়ারটির দর দাঁড়ায় ৫৯৩ টাকা ৪০ পয়সা। তবে কোম্পানিটি বছর শেষে লভ্যাংশ ঘোষণা করলে এর পর থেকে শেয়ারের দর আবার কমতে থাকে। এতে গতকাল লেনদেন শেষে শেয়ারদর ছিল ৪৫৭ টাকা ৮০ পয়সা, যা কারসাজিকারী বের হয়ে যাওয়ার চিত্র বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানিটির সচিব এএফএম নজরুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, কমিশন থেকে কেনো চিঠি বা মেইলের মাধ্যমে আমাদের আদেশের বিষয়ে কোনো কিছু জানানো হয়নি। তাই বিএসইসির আদেশের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছু জানা নেই।

Share this news