জেগে উঠার অপেক্ষায় বেক্সিমকো লিমিটেড

Date: 2022-12-09 04:00:16
জেগে উঠার অপেক্ষায় বেক্সিমকো লিমিটেড
২০২০ সালের আগস্ট মাসের পর শেয়ারবাজারে যখন গতি ফিরে আসে, তখন থেকেই নতুন চেহারায় আবির্ভত হয় বেক্সিমকো লিমিটেড। শেয়ার দর, লেনদেন, মুনাফা, ডিভিডেন্ড-সব কিছুতেই দেখা যায় নতুন অবয়ব।দেশের শেয়ারবজারে প্রতিদিনই কোটি কোটি শেয়ারের লেনদেন। প্রতিদিন এবং সাপ্তাহিক লেনদেনের বড় অংশ জুড়েই ছিল কোম্পানিটির শেয়ার। দুই বছরের লেনদেনে অন্য কোন কোম্পানি এর ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারেনি।কিন্তু এখন কোম্পানিটির সেই জৌলুস নেই। নেই বিনিয়োগকারীদের বাঁধভাঙ্গা সেই জোয়ারও। মেগা কোম্পানিটি এখন অযত্ন-অবহেলায় যেন ফ্লোর প্রাইসে ঘুমাচ্ছে। কোনো কোনো দিন দুই-চার হাজার শেয়ারের হাতবদল হয়। আবার কেনো কোনো দিন হাজারের নিচেও গড়ায়। কোম্পানিটি যেন এখন ইতিহাসের পাতায় স্থায়ীভাবে স্থান করে নিয়েছে।বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানিটির মুনাফা ও প্রবৃদ্ধি এখন স্থিতিশীল। কোম্পানির শেয়ারের লেনদেনে এভাবে পতন পরিস্থিতি তৈরির কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তারা বলছেন, কোম্পানিটির শেয়ারে যাদের বড় বিনিয়োগ রয়েছে, তারা এখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। যার কারণে এর লেনদেনে এক ধরণের স্থিতিবস্থা বিরাজা করছে। তবে যে কোনো সময় শেয়ারটি আবার জেগে উঠতে পারে। শেয়ারটির বিনিয়োগকারীরা এমটাই আশা করছেন।বেক্সিমকো নিয়ে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, শেয়ারবাজারে গতি পেতে হলে বেক্সিমকোর মতো শেয়ারের গতি ফিরতে হবে। এখন গোটা শেয়ারবাজারে স্থবির অবস্থা বিরাজ করছে। যার কারণে মৌলভিত্তির শেয়ারটির লেনদেদেনে অচলাবস্থায় রয়েছে। এসব শেয়ারের গতি ফিরলে শেয়ারবাজারও চাঙ্গা হয়ে উঠবে।বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায় যে বেক্সিমকো লিমিটেড শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলির মধ্যে ব্যাংকের শেয়ার বাদে সর্বনিম্ন মূল্য আয় অনুপাত বা পিইর শেয়ার। ২০২০ সালের আগস্ট মাসের আগে কোম্পানির শেয়ার ১২ টাকার নিচে লেনদেন হয়েছিল। এর পর থেকে কোম্পানির চেহারা পাল্টাতে শুরু করে। একদিকে শেয়ারটির মুনাফায় উল্লম্ফন, অন্যদিকে লেনদেনে অপ্রতিরোধ্য জোয়ার। কয়েকদিনের মধ্যেই শেয়ারবাজারে শেয়ারটি মুকুটহীন রাজার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। এক বছর পর ২০২১ সালের নভেম্বরে কোম্পানির শেয়ার দর ১৯০ টাকার উপরে উঠে যায়।চলতি বছরের শুরু থেকেই কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক কমতে দেখা যায়। তারপরও শেয়ারবাজারে এর দাপট মোটামুটি অটুট থাকতে দেখা যায়। গত নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত কোম্পানির দাপট ছিল অনেকটাই চ্যালেঞ্জহীন। নভেম্বরের শেষ দিকে শেয়ারটির গতি হঠাৎ মন্থর হয়ে পড়ে। ফ্লোর প্রাইসের কিনারায় আটকে পড়ে। এখন যেন ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত হয়ে চিরনিদ্রায় স্থান নিয়েছে। যে শেয়ারটি এক মাস আগেও লাখ লাখ ক্রেতার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিল, কয়েক দিনের ব্যবধানেই এর চাহিদা প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। তবে বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী যেকোনো সময়ে শেয়ারটি জেগে উঠবে। দাপট নিয়ে আবারও শেয়ারটি শেয়ারবাজারে আপন মহিমায় স্থান করে নেবে।আর্থিক চিত্র: ২০১৭ সালে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ১ টাকা ২৯ পয়সা, ২০১৮ সালে ১ টাকা ৫৫ পয়সা, ২০১৯ সালে ১ টাকা ৬৩ পয়সা, ২০২০ সালে ৫১ পয়সা, ২০২১ সালে ৭ টাকা ৫৩ পয়সা এবং ২০২২ সালে ১৪ টাকা ৩২ পয়সা।ডিভিডেন্ড চিত্র: ২০১৭ সালে কোম্পানিটি ডিভিডেন্ড দিয়েছে ৫ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ বোনাস, ২০১৮ সালে ৫ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ বোনাস, ২০১৯ সালে ৫ শতাংশ ক্যাশ, ২০২০ সালে ৫ শতাংশ ক্যাশ, ২০২১ সালে ৩৫ শতাংশ ক্যাশ এবং ২০২২ সালে ৩০ শতাংশ ক্যাশ।সর্বশেষ চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৩ টাকা ৮৩ পয়সা। যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৪ টাকা ১১ পয়সা। সর্বশেষ শেয়ার দরের ভিত্তিতে এর পিই রেশিও দাঁড়িয়েছে ৭.৫৫ পয়েন্টে।

Share this news