জীবন বিমার শেয়ারে আগ্রহ বাড়ছে চার কারণে

Date: 2023-06-24 05:00:05
জীবন বিমার শেয়ারে আগ্রহ বাড়ছে চার কারণে
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত জীবন বিমা কোম্পানির সংখ্যা ১৫টি। গেল কিছুদিন ধরেই এই ১৫ কোম্পানি তালিকাভুক্ত বাকি ৩৮৫ কোম্পানিকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। অর্থাৎ জীবন বিমার ১৫ কোম্পানি গোটা বাজারকে এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে। শেয়ারদর বৃদ্ধি এবং লেনদেনে শীর্ষ স্থান দখল করে রেখেছে জীবন বিমা কোম্পানিগুলো। জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর শেয়ারে হঠাৎ এমন আগ্রহের কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় চারটি কারণ। এই চার কারণেই তেজিভাব আরও শক্তিশালী হচ্ছে জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর।এই চারটি কারণের মধ্যে রয়েছে আইডিআরএ’র নতুন এক সিদ্ধান্ত, মুদ্রানীতির সুবিধা, শেয়ার ব্যবসা এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীদের সাক্রিয় অংশগ্রহণ। এই চার কারণে জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর শেয়ারের চাহিদা ক্রমাগতই বাড়ছে। ফলশ্রুতিতে বাড়ছে কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরও।আইডিআরএ’র নতুন সিদ্ধান্তবিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র সাম্প্রতিক এক সিদ্ধান্তের ফলে লাইফ ইন্স্যুরেন্স বা জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন এক দিগন্ত উম্মোচিত হয়েছে। নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে এখন থেকে নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স বা সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি লাইফ ইন্স্যুরেন্স বা জীবন বিমা কোম্পানিগুলোও স্ট্যান্ডালোন হেলথ ইন্স্যুরেন্স পলিসি বিক্রি করতে পারবে।এর আগে ২০১৪ সালে লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর ওপর স্বাস্থ্য বিমা সংক্রান্ত স্ট্যান্ডালোন পলিসি বিক্রিতে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। ফলে এতো দিন স্বাস্থ্য বিমার এসব পলিসি শুধু নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স বা সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোই বিক্রি করতে পারত।গত ২৫ মে আইডিআরএ জিএডি সার্কুলার নম্বর- ১২/২০২৩ জারির মাধ্যমে লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর ওপর থেকে সেই বিধি-নিষেধ তুলে নিয়েছে। এতে জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন করে অধিক্ষেত্র তৈরি হয়েছে এবং মুনাফার বাড়তে ক্ষেত্র উম্মোচিত হয়েছে।নতুন মুদ্রানীতির সুবিধাবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে বড় পরিবর্তন এনে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের জন্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে ঋণের সুদের হার, রিজার্ভ গণনার পদ্ধতি, মুদ্রা সরবরাহ নীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে।এতোদিন ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুদের হার নির্ধারণ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সাধারণত নয় অথবা ১০ শতাংশের বেশি ব্যাংকগুলো সুদ নিতে পারতো না। এর সাথে মিল রেখে তাদের আমানত সংগ্রহ করতে হতো।কিন্তু এখন থেকে ঋণে সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা আর থাকছে না। এখন থেকে ঋণের সুদের হার হবে বাজারভিত্তিক। তবে এজন্য একটি রেফারেন্স রেট থাকবে।ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের লেনদেন রেটের গড়ের সাথে তিন শতাংশ বাড়তি হার যোগ করে ব্যাংকগুলো আরও পাঁচ শতাংশ মার্জিন যোগ করে ঋণের সুদহার নির্ধারণ করবে। বর্তমানে ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের গড় সাত দশমিক ১০ শতাংশ।এতে করে জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর লাইফ ফান্ডের অর্থ বর্তমানের তুলোনায় বেশি হারে সুদ পাবে। এতে করে জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর মুনাফা বাড়বে আগের তুলোনায় অনেক বেশি। আর মুনাফা বাড়লে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের জন্য বেশি ডিভিডেন্ড দিতে পারবে। এরই কারণে জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর শেয়ারের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের।শেয়ারবাজার থেকে মুনাফাজীবন বিমা কোম্পানিগুলোর সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানিগুলোর শেয়ারবাজারে যে পরিমাণ বিনিয়োগের শর্ত রয়েছে সেই পরিমান অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে ভালো মুনাফা করেছে। এছাড়াও, কয়েকটি কোম্পানি শর্তের বাহিরেও অতিরিক্ত বিনিয়োগ করে ভালো মুনাফা করেছে। যা থেকে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো মুনাফা দিতে পারবে বলে প্রত্যাশা করছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। যার ফলে জীবন বিমা কোম্পানির শেয়ারে বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ।প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণশেয়ারবাজারের বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগ নিয়ে আটকে থাকতে হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। কিন্তু সেই দিক থেকে জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর শেয়ারে বিনিয়োগ নিয়ে আটকে থাকতে হচ্ছে না। যার ফলে এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীদেরও অংশগ্রহণ বাড়ছে। যার ফলে গত দুই মাস ধরেই এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারে হোল্ডিং বাড়াচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীরা। যা কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভুমিকা রাখতে এই চার কারণকেই সামনে আনছেন শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা।

Share this news