ইমাম বাটনে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ

Date: 2022-11-10 20:00:09
ইমাম বাটনে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ
ঋণে জর্জরিত ও দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে উৎপাদন বন্ধ থাকা এবং ১২ বছর লভ্যাংশ না দেয়া ও ৪ বছর এজিএম না করায় দেশের পুঁজিবাজারের ‘জেড’ ক্যাটাগরির তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইমাম বাটনে দুজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সম্প্রতি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নিয়োগকৃত স্বতন্ত্র পরিচালকদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে কমিশন। এছাড়া বিষয়টি কোম্পানির পর্ষদের শেয়ারহোল্ডার, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও), সেক্রেটারিসহ ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই-সিএসই), সেন্ট্রাল ডিপেজটরি বাংলাদেশের (সিডিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।নিয়োগকৃত স্বতন্ত্র পরিচালকরা হলেনÑমাহমুদ সবুজ অ্যান্ড কো-এর ব্যবস্থাপনা অংশীদার এবং আইসিএবির কাউন্সিল মেম্বার মো. মাহমুদুল হোসেইন ও ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস অনুষদের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাসুম ইকবাল।বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড একটি তালিকাভুক্ত কোম্পানি। যা ১৯৯৬ সালে আইপিও’র মাধ্যমে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানি ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বার্ষিক সাধারণ সভা করেনি এবং ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। এছাড়া কোম্পানিটি ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে কমিশনে নিরীক্ষিত বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন এবং ত্রৈমাসিক আর্থিক প্রতিবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এবং একইভাবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (তালিকাকরণ) প্রবিধান- ২০১৫ এর ১৭ এবং ১৮ নং ধারা লঙ্ঘন করেছে।অপরদিকে কোম্পানিটিকে ২০১১ সালে স্টক এক্সচেঞ্জে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছিল। সেই সঙ্গে কোম্পানি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থাপনের প্রথম দিন থেকে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে তার পরিচালনা পর্ষদের পুনর্গঠন করতে ব্যর্থ হয়। তাই গত ২৪ আগস্ট বিএসইসি এবং ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে দুজন নতুন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কমিশন ২০২১ সালের ২২ মার্চের নির্দেশনার অধীনে প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে কোম্পানিতে উল্লেখিত দুই ব্যক্তিকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ করে। এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।এ বিষয়ে কোম্পানির বর্তমান সচিব আরবিন্দ নাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বিষয়ে এখনও আমরা কোনো চিঠি পায়নি। তবে আগস্ট মাসে বিএসইসির সঙ্গে যে সভা হয়েছে সেখানে এ বিষয়ে বলা হয়েছিল।কোম্পানির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোম্পানির অবস্থা ভালো না এবং উৎপাদন কার্যক্রম অনেক বছর ধরে বন্ধ। তবে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ হওয়ার পর, বাকি যেসব শেয়ারহোল্ডাররা রয়েছে তাদের পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।উল্লেখ্য, মোহাম্মদ আলী ইমাম বাটনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চট্টগ্রাম ভিত্তিক ইমাম গ্রুপের মালিক। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ৮০০ কোটি টাকার ঋণখেলাপির জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়ের করা ৫৫টি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে পালিয়ে যান।এদিকে ২ ডিসেম্বর ২০২০ এ আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে বিএসইসি আইনি পদক্ষেপে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত মোহাম্মদ আলীকে দেশত্যাগে নিষেধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিল। পরে ২২ ডিসেম্বর তিনি হঠাৎ ঘোষণা করেন যে তিনি আগামী ৩০ দিনের মধ্যে ডিএসইর মাধ্যমে কোম্পানির ৬৫ হাজার শেয়ার কিনবেন। খবরটি প্রকাশের পর, ইমাম বাটনের শেয়ারের দাম সেদিন ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু ডিএসইর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি তার ঘোষণা অনুযায়ী শেয়ার কিনেননি।মোহাম্মদ আলী একসময় ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এনসিসি) পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন। এই পদ ব্যবহার করে তিনি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। পরে তাকে এনসিসি বোর্ড থেকে বাদ দেয়া হয় এবং বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণ খেলাপি হয়ে যায়।ইমাম বাটন ২০১১ সাল থেকে লোকসান করে আসছে। বর্তমানে ডিএসইতে ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানি হিসেবে রয়েছে। কোম্পানিটি ১৯৯৬ সালে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়। এর পরিশোধিত মূলধন ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কোম্পানির উদ্যোক্তা এবং পরিচালকদের কাছে ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কাছে ৬০ দশমিক ৯১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

Share this news