গত আড়াই বছরে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ঋণাত্মক

Date: 2023-03-26 10:00:26
গত আড়াই বছরে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ঋণাত্মক
গত আড়াই বছরে দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি কোনো বিনিয়োগ আসেনি। উল্টো আগে যে বিনিয়োগ এসেছিল, সেগুলোও বিক্রি করে দিয়ে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। শেয়ারবাজারের যে বেহাল দশা তার জন্য বিদেশি বিনিয়োগের এই করুণ দশাও একটি কারণ বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিট বিনিয়োগের (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) পরিমাণ ছিল ৩৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এর পরের ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এটি কমে ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলারে নেমে আসে।এরপর ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা আরও কমে নেমে আসে ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারে। ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ২৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার ঋণাত্মক হয়। অর্থাৎ ওই বছরে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে যতো বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল, তার থেকে প্রায় ২৭ কোটি ডলার বেশি চলে যায়। গত ২০২১-২২ অর্থবছরেও সেই ঋণাত্মক ধারা অব্যাহত থাকে। সেই বছরও বিদেশি বিনিয়োগ ঋণাত্মক থাকে।সর্বশেষ চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) শেয়ারবাজারে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার ঋণাত্মক হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই তথ্যই বলছে, গত আড়াই বছরে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে নতুন কোনো বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি।শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ঋণাত্মক হলেও দেশে সার্বিক বিদেশি বিনিয়োগ ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। দুই বছরের করোনা মহামারির পর এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলো হোঁচট খেলেও বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ৩০৬ কোটি ৬০ লাখ (৩.০৭ বিলিয়ন) ডলারের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে দেশে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২.৩১ শতাংশ বেশি।২০২১-২২ অর্থবছরের এই সাত মাসে ২৭৩ কোটি (২.৭৩ বিলিয়ন) ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ। এই সাত মাসে দেশে নিট এফডিআই বেড়েছে ৪.১১ শতাংশ। ১৩৪ কোটি ৩০ লাখ ডলারের নিট এফডিআই এসেছে দেশে। গত বছরের এই সময়ে এসেছিল ১২৯ কোটি ডলার।গত ২০২১-২২ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৪৭০ কোটি ৮০ লাখ (৪.৭১ বিলিয়ন) ডলারের এফডিআই এসেছিল দেশে, যা ছিল আগের বছরের (২০২০-২১) চেয়ে ৩৯ শতাংশ বেশি। নিট এফডিআই বেড়েছিল আরও বেশি, ৬১ শতাংশ। গত অর্থবছরে নিট এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। তার আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৩৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ। নিট এফডিআই এসেছিল ১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার।অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে ঘিরে দেশে বিনিয়োগের যে আবহ তৈরি হয়েছে, তার প্রভাব পড়ছে বিদেশি বিনিয়োগে। সংকটের মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াকে দেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গল বলছেন তারা। বিশ্ব পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এফডিআই আরও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা। কিন্তু এই ইতিবাচক ধারার মধ্যে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ না আসায় হতাশ হয়েছেন তারা। দীর্ঘদিন ধরে চলা বাজারের মন্দাবস্থাই এর কারণ বলে মনে করছেন তারা।তবে শেয়ারবাজারে প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের টানতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে রোড শোর আয়োজন করেছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। যদিও রোড শোর কোনো ইতিবাচক ফল এখনো বাজারে পড়তে দেখা যায়নি।

Share this news