গ্রামীণফোনের কাছে বাংলাদেশ রেলওয়ের পাওনা ১৬৬ কোটি টাকা

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি গ্রামীণফোন লিমিটেড ২০০২ থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন স্টেশনসংলগ্ন এলাকায় প্রায় চার লাখ বর্গফুট খোলা জায়গা ইজারা নিয়ে ব্যবহার করছে। এসব জমির লাইসেন্স ফি বাবদ ১৬৬ কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে। মামলা জটিলতার কারণে গ্রামীণফোনের কাছ থেকে বকেয়া আদায় করতে পারছে না রেলওয়ে।বাংলাদেশ রেলওয়ের ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভূমি ব্যবস্থাপনা শীর্ষক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে গ্রামীণফোনের কাছে বিপুল পরিমাণ বকেয়া অনাদায়ী থাকার জন্য রেলওয়ের কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা ও অদক্ষতাকে দায়ী করা হয়েছে।প্রতিবেদবনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নীতিমালায় (২০২০) মোবাইল ফোন কোম্পানি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্দিষ্ট হারে লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। বিভাগীয় শহর এলাকায় প্রতি বর্গফুট জমির ইজারা নিতে হলে মোবাইল ফোন কোম্পানি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে বার্ষিক ৩৩৫ টাকা লাইসেন্স ফি দিতে হয়। জেলা শহরের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুট জায়গার জন্য এর ফির পরিমাণ ২২৩ টাকা।প্রতিবেদনে বলা হয়, তথ্য প্রযুক্তি খাতের কোম্পানিগুলোকে প্রতি বছর লাইসেন্স ফি নবায়ন করতে হয়। এর ব্যত্যয় হলে লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণের তিন মাসের মধ্যে ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে লাইসেন্স হালনাগাদ করা যায়। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান টানা তিন বছর লাইসেন্স ফি না দেয় তাহলে প্রথম বছরের জন্য ১০ শতাংশ, দ্বিতীয় বছরের জন্য ২০ শতাংশ ও তৃতীয় বছরের জন্য ৩০ শতাংশ হারে জরিমানা আদায় করা হবে।প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের ৭৫টি স্টেশনের ২ লাখ ১৭ হাজার ৯২০ বর্গফুট জমি ইজারা নেয় গ্রামীণফোন লিমিটেড। এ পরিমাণ জমির বিপরীতে ২০১৬ সাল পর্যন্ত লাইসেন্স ফি বাবদ বকেয়া পড়েছে ৭৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। সময়মতো বকেয়া পরিশোধ না হওয়ায় জরিমানার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আর ভ্যাট ও উৎসে আয়কর ধরা হয়েছে ৮ কোটি টাকা। সবমিলে পূর্বাঞ্চল রেলওয়েতে গ্রামীণফোনের বকেয়ার পরিমাণ ৯৬ কোটি ২৬ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।অন্যদিকে ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের ইজারা বাবদ গ্রামীণফোনের কাছে আদায়যোগ্য বকেয়ার হিসাবই করেনি রেলওয়ে। এর বদলে ২০২১ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে নিয়মিত লাইসেন্স ফি আদায়ের কথা জানিয়েছেন পূর্বাঞ্চল রেলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী।গ্রামীণফোন বকেয়ার টাকা কেন পরিশোধ করছে না, জানতে চাইলে পূর্বাঞ্চল রেলের প্রধান এই ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা বলেন, ‘রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা, ২০০৬-এ বলা আছে, নির্ধারিত লাইসেন্স ফি ২০০২ সাল থেকে কার্যকর হবে। গ্রামীণফোনের আপত্তি মূলত এই ইস্যু নিয়ে। ২০০৬ সালের নীতিমালায় লাইসেন্স ফির পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু গ্রামীণ ২০০২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বর্ধিত ফি দিতে রাজি হচ্ছে না। এ নিয়ে আদালতে এখনো মামলা চলমান থাকায় ২০০২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে বকেয়া আদায় করা সম্ভব হয়নি।’সুজন চৌধুরী আরো জানান, ভূ-সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নীতিমালাটি ২০২০ সালে হালনাগাদ করা হয়েছে। এতে লাইসেন্স ফির পরিমাণ আরো বেড়েছে। ২০২১ সাল থেকে গ্রামীণফোনের কাছ থেকে লাইসেন্স ফি আদায় শুরু হয়েছে। তবে ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বকেয়া লাইসেন্স ফি আদায় করা সম্ভব হয়নি। মূলত চলমান মামলার জন্যই টাকা অনাদায়ী রয়েছে।রেলওয়ে সূত্র বলছে, পূর্বাঞ্চলের মতো পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতেও লাইসেন্স ফি বাবদ বিপুল পরিমাণ বকেয়া অনাদায়ী রয়েছে গ্রামীণফোনের। পশ্চিমাঞ্চল রেলে সবমিলে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৪১৪ বর্গফুট জমি ইজারা নিয়েছে গ্রামীণফোন। এর মধ্যে ৯ হাজার ৯৬০ বর্গফুট জমি বিভাগীয় শহরে। অবশিষ্ট ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৫৩ বর্গফুট জমি জেলা শহরে ইজারা নিয়েছে গ্রামীণফোন।পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে ২০০২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত লাইসেন্স ফি বাবদ গ্রামীণফোনের বকেয়া রয়েছে ৩৭ কোটি ৭৯ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। আর ২০১৪ থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বকেয়ার পরিমাণ ৩২ কোটি ১০ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।তবে বকেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা রেজাউল করিম গণমাধ্যমের কাছে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।রেলওয়ের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই অঞ্চল মিলে গ্রামীণফোনের কাছ থেকে ১৬৬ কোটি টাকা লাইসেন্স ফি বকেয়া থাকার জন্য রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলা ও অদক্ষতাকে দায়ী করেছে বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের কার্যালয়। পাশাপাশি দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশও করেছে সংস্থাটি।