ফ্লোর প্রাইসের চৌহদ্দিতে দাঁড়িয়ে আছে তালিকাভুক্ত ১৯১ প্রতিষ্ঠান

Date: 2022-10-01 23:00:16
ফ্লোর প্রাইসের চৌহদ্দিতে দাঁড়িয়ে আছে তালিকাভুক্ত ১৯১ প্রতিষ্ঠান
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি দেশের শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক পতন ঠেকাতে গত ২৮ জুলাই দ্বিতীয় দফা ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে। এরপর তিন কার্যদিবসের মাথায় ফ্লোর প্রাইসের প্রতিষ্ঠান ৩৪টিতে নেমে এসেছিল। এটিই ছিল ফ্লোর প্রাইস চৌহদ্দির সর্বনিম্ন সীমারেখা। এর নিচে ফ্লোর প্রাইসের প্রতিষ্ঠান নামেনি। এরপর শেয়ারবাজারে সূচক ও লেনদেনে ঊর্ধ্বগতির চমক থাকলেও ফ্লোর প্রাইসের তালিকা আর খাটো হয়নি, বরং প্রতিদিনই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে।গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহশেষে (১৮-২২ সেপ্টেম্বর) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ফ্লোর প্রাইসে থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১৭২টিতে। এর মধ্যে সমাপ্ত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে (২৫-২৯ সেপ্টেম্বর) ১৩টি প্রতিষ্ঠান ১০ পয়সা ২০ পয়সা উপরে উঠে ফ্লোর প্রাইসের গন্ডি অতিক্রম করতে পারলেও ফ্লোর প্রাইসে ফিরেছে আরও ৩২টি প্রতিষ্ঠান। ফলে সপ্তাহজুড়ে যোগ বিয়োগের পর ফ্লোর প্রাইসের তালিকায় আরও যুক্ত হয়েছে ২১টি প্রতিষ্ঠান। ফলে সব মিলিয়ে সপ্তাহশেষে তালিকাভুক্ত ৩৮৭টি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ফ্লোর প্রাইসে ঠায় নিয়েছে ১৯১টি প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত মোট সিকিউরিটিজের ৪৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এখন ফ্লোর প্রাইসের চৌহদ্দিতে নজরবন্দি।ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর এ পর্যন্ত আট সপ্তাহ পার করেছে দেশের শেয়ারবাজার। এরমধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচক ৫ হাজার ৯৮০ পয়েন্ট থেকে ৫৩২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫১২ পয়েন্টে। সূচকের এমন উত্থানে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম তিন থেকে চারগুণ বেড়েছে। কিন্তু ফ্লোর প্রাইসের অচলায়তনে প্রতিষ্ঠানের মিছিল প্রতিদিনই প্রসারিত হয়েছে।বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে ফ্লোর প্রাইসের প্রতিষ্ঠান লাফ দিয়ে উঠেছে ১৯১টিতে। যেগুলোর মধ্যে সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসই সিংহভাগ শেয়ার ও ইউনিট বিক্রেতাদের চোটপাটে দিনভরই ক্রেতা সংকটে ঘুমাতে দেখা গেছে।বিদায়ী সমাপ্ত সপ্তাহে নতুন করে ফ্লোর প্রাইসে যে ৩২টি প্রতিষ্ঠান ফিরেছে, যেগুলো হলো-এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, গ্রীণ ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, পপুলার লাইফ, সন্ধানী ইন্স্যুরেন্স, রুপালী ইন্স্যুরেন্স, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স, নিটল ইন্স্যুরেন্স, কাসেম ইন্ডাস্ট্রিজ, নাভানা সিএনজি, কেডিএস এক্সেসোরিজ, সোনারগা টেক্সটাইল, এস্কয়ার নিটিং, প্রাইম লাইফ, ইসলামি ফাইন্যান্স, তিতাস গ্যাস, বঙ্গজ, ডমিনেজ স্টিল, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, সিমটেক্স, ফাস্ট সিকিউরিটিজ ইসলামি ব্যাংক, ডেসকো, এসকে ট্রিমস, এসএস স্টিল, উত্তরা ফাইন্যান্স, আরগন ডেনিমস, পদ্মা অয়েল, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস এবং রহিমা ফুডস লিমিটেড।ফ্লোর প্রাইসে সবচেয়ে বেশি অবস্থান করছে মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট। এর পরের অবস্থানে রয়েছে ব্যাংক, বিমা, বস্ত্র, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও প্রকৌশল খাতের শেয়ার। ব্যাংক, বস্ত্র ও বিমা খাতে ৫০ শতাংশের বেশি কোম্পানি এখন ফ্লোর প্রাইসে পূর্ণ বিশ্রামে রয়েছে।তবে ফ্লোর প্রাইসে ঘুমানো বহুজাতিক এবং শীর্ষ লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানির সংখ্যাও নেহাত কম নয়। বহুজাতিক ও শীর্ষ লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো, গ্রামীণফোন, সিঙ্গার বাংলাদেশ, রেনেটা, স্কয়ার ফার্মা, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, ওয়ালটন হাইটেক এখন ফ্লোর প্রাইসের নীরব সাক্ষী। দোর্দণ্ড প্রতাপের ব্লু চিপ খ্যাত কোম্পানিগুলোও এখন ফ্লোর প্রাইসে দন্তহীন নিস্তেজ বাঘের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইর তালিকাভুক্ত ২০ খাতের মধ্যে ফ্লোর প্রাইসে থাকা সর্বোচ্চ রেকর্ড করেছে মিউচুয়াল ফান্ড। এই খাতের ৩৬টি ফান্ডের প্রায় সবগুলোই এখন ফ্লোর প্রাইসের চৌহদ্দিতে বন্দি। সদ্য তালিকাভুক্ত গোল্ডেন জুবিলি ফান্ডও এখন ফ্লোর প্রাইসের নিয়মিত সদস্য।ফ্লোর প্রাইসে এর পরের অবস্থানে রয়েছে বিমা খাত। এ খাতের ৫৪টি কোম্পানির মধ্যে ৩২টি কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হচ্ছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে—অগ্রণী, এশিয়া, বিজিআইসি, গ্রীনডেল্টা, কন্টিনেন্টাল, সিটি, ঢাকা, ইস্টল্যান্ড, এক্সপ্রেস, ফেডারেল, জনতা, কর্ণফুলী, মেঘনা জেনারেল, মার্কেন্টাইল, নিটল, নর্দার্ন, প্যারামাউন্ট, পিপলস, ফিনিক্স, পাওনিয়ার, পপুলার লাইফ, প্রগ্রেসিভ লাইফ, প্রাইম জেনারেল, প্রাইম লাইফ, প্রভাতী, পূরবী, রিপাবলিক, রূপালী জেনারেল, সোনারবাংলা, ও ইউনিয়ন ইন্সুরেন্স।এখাতে বিদায়ী সপ্তাহে প্রগতি জেনারেল, প্রগতি লাইফ ও ইউনাইটেড ইন্সুরেন্স ফ্লোর প্রাইসের গণ্ডি পেরিয়ে সামান্য উপরে লেনদেন হয়েছে।শেয়ারবাজারের প্রধান খাত ব্যাংক খাতের ৩৩টি কোম্পানির মধ্যে ২০টি ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হচ্ছে। এবি, এশিয়া, আল-আরাফা, ব্র্যাক, ফাস্ট সিকিউরিটি, আইসিবি ইসলামী, যমুনা, ইসলামী, এমটিবি, এনসিসি, এনবিএল, এনআরবিসি, রূপালী, সাউথইস্ট, সাউথবাংলা, ট্রাস্ট, ইউসিবি, এসআইবিএল, স্ট্যান্ডার্ড, ইউনিয়ন। এখাতে কেবল এক্সিম ব্যাংক ফ্লোর প্রাইস ভেদ করে সামান্য ওপরে উঠেছে। আর আল-আরাফা ফ্লোর প্রাইসের ওপরে উঠে ফের অচলায়তনে ফিরে এসেছে।বস্ত্র খাতে দুই আলিফ, অলটেক্স, আরগন ডেনিম, আনলিমা, সিএন্ডএ, ডেল্টা, ড্রাগন, এস্কয়ার নিট, দুলামিয়া, এনভয়, ইভিন্স, ফ্যামিলি, হামিদ, এইচআর, খান ব্রাদার্স, কেডিএস এক্সেসোরিজ, কাট্টলী, মতিন, এমএল, পিটিএল, মুন্নু ফেব্রিক, মিথুন, নিউ লাইন, পিডিএল, প্রাইম, রহিম, রিজেন্ট, রিং শাইন, আরএন, সাফকো, এসকে ট্রিম, সায়হাম কটন, সায়হাম টেক্সটাইল, শেফার্ড, সুহ্নদ, সিম, তাল্লু, তশরিফা, তুংহাই, ভিএফএস, নূরানী, দুই সায়হাম ও দুই জাহিন। খাতটির ফারইস্ট নিটিং ফ্লোর প্রাইস থেকে উঠে কিছু ওপরে লেনদেন হচ্ছে।আর্থিক খাতে বে লিজিং, বিডি ফাইন্যান্স, ডিবিএইচ, জিএসপি, ফিনিক্স, ডিবিএইচ, ফারইস্ট, ফার্স্ট, ফিনিক্স, লঙ্কাবাংলা, পিএলএফএস, উত্তরা ও ইউনাইটেড। খাতটির মাইডাস ফাইন্যান্স ফ্লোর প্রাইস অতিক্রম করে লেনদেন হচ্ছে। তবে গেল সপ্তাহে উত্তরা ফাইন্যান্স ফ্লোর প্রাইসে ফিরে এসেছে।প্রকৌশল খাতে অ্যাপেলো ইস্পাত, বঙ্গজ, গোল্ডেন সন, ডমিনেজ স্টিল, অলিম্পিক অ্যাক্সেসরিজ, সাভার রিফেক্সটরিজ, কাসেম ইন্ডাস্ট্রিজ, এসএস স্টিল, সুহ্নিদ ইন্ডাষ্ট্রিজ, সিঙ্গার, উসমানিয়া গ্লাস, ওয়ালটন হাইটেক, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড। সমাপ্ত সপ্তাহে আনোয়ার গ্যালভেনাইজিং, এটলাস ও ওয়াইম্যাক্স ফ্লোর প্রাইস অতিক্রম করে কিছু ওপরে উঠতে পেরেছে। তবে এসএস স্টিল ও ডোমিনেজ স্টিল ফ্লোর প্রাইস অতিক্রম করে কিছুটা ঝলক দেখিয়ে ফের ফ্লোর প্রাইসে স্থান নিয়েছে।ওষুধ ও রসায়ন খাতে একটিভ ফাইন, এএফসি এগ্রো, গ্লোবাল হেভি, লিবরা, সালভো, স্কয়ার ফার্মা ও রেনেটা ফ্লোর প্রাইসের যেন স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে আছে।ডিএসইর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য খাতের মধ্যে রয়েছে চামড়া খাতের অ্যাপেক্স ট্যানারি ও ফরচুন সুজ; বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে পদ্মা অয়েল, খুলনা ও সামিট পাওয়ার; সিমেন্ট খাতে এরামিট, ক্রাউন ও হাইডেলবার্গ; টেলিযোগাযোগ খাতে গ্রামীণ ও রবি; খাদ্য খাতে বিচ হ্যাচারি, গেইল, ফু-ওয়াং ফুড, ন্যাশনাল ফিড, মেঘনা পেট ও মেঘনা কনডেন্স মিল্ক।

Share this news