ফ্লোর প্রাইস ভাঙ্গতে শুরু করেছে স্বল্প মূলধনী কোম্পানির শেয়ার

Date: 2023-02-11 16:00:17
ফ্লোর প্রাইস ভাঙ্গতে শুরু করেছে স্বল্প মূলধনী কোম্পানির শেয়ার
শেয়ারবাজারে মিউচ্যুয়াল ফান্ড বাদে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৩৭২টি। এরমধ্যে পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি টাকার আশেপাশে রয়েছে এমন কোম্পানির সংখ্যা ৩১টি। কোম্পানিগুলোকে স্বল্প মূলধনী বা লো-পেইডআপ কোম্পানি বলে আখ্যায়িত করা হয়।কোম্পানিগুলো হলো-এমবি ফার্মা, এমসিএল-প্রাণ, অ্যারামিট লিমিটেড, অ্যাপেক্স স্পিনিং, অ্যাপেক্স ফুড, আজিজ পাইপ, আলহাজ্ব টেক্সটাইল, বিডি ল্যাম্পস, বিডি অটোকারস, বঙ্গজ, দেশ গার্মেন্টস, দুলামিয়া কটন, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, জেমিনি সী ফুড, জিকিউ বলপেন, জুট স্পিনার্স, কেএন্ডকিউ, লিবরা ইনফিউশন, মুন্নু এগ্রো, মনোস্পুল পেপার, নর্দার্ন জুট, ন্যাশনাল টি, ফার্মা এইড, রহিম টেক্সটাইল, রেকিট বেনকিজার, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, সাভার রিফ্যাক্টরিজ, শ্যামপুর সুগার, সোনালী আঁশ, স্টান্ডার্ড সিরামিক ও ঝিলবাংলা সুগার লিমিটেড।কোম্পানিগুলোর মধ্যে যেগুলোর বাজার মূলধন ২২৫ কোটি টাকার নিচে সেসব কোম্পানির শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে দরপতনের হার নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বনিম্ন এক শতাংশ। বাকিগুলোর শেয়ার উপর ফ্লোর প্রাইস আরোপ অব্যাহত রয়েছে। তবে দর বাড়ার ক্ষেত্রে সবগুলো কোম্পানির দর বাড়তে পারবে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ হারে।ফ্লোর প্রাইস আরোপ রয়েছে বা বাজার মূলধন ২২৫ কোটি টাকার উপরে রয়েছে এমন স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলো হলো-আলহাজ্ব টেক্সটাইল, বিডি ল্যাম্পস, অ্যাপেক্স ফুড, জেমিনি সী ফুড, মনোস্পুল পেপার, ন্যাশনাল টি, ফার্মা এইড ও রেকিট বেনকিজার লিমিটেড।ফ্লোর প্রাইস আরোপের কোম্পানিগুলোর মধ্যে জেমিনি সী ফুড, অ্যাপেক্স ফুড ও মনোস্পুল পেপার আগে থেকেই ফ্লোর প্রাইসের অনেক ওপরে লেনদেন হচ্ছে।বাকি ফ্লোর প্রাইসে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে গত সপ্তাহের শেষদিকে আলহাজ্ব টেক্সটাইল ও বিডি ল্যাম্পস ফ্লোর প্রাইস অতিক্রম করে লেনদেন করেছে। কেবল ফার্মা এইড ও রেকিট বেনকিজার এখনো ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে।তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরজুড়েই স্বল্প মূলধনী কোম্পানির শেয়ারে তেজিভাব দেখা যায়। বাজার পতনের সঙ্গে এসব কোম্পানির শেয়ার দর উঠা-নামা নির্ভর করে না। স্বল্প মূলধনী কোম্পানির শেয়ার নিজেদের মতো টানাটানি হয়। তবে গত তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর এক রকম থমকেই ছিল। তেমন একটা টানাটানি হতে দেখা যায়নি। তবে গত দুই সপ্তাহ থেকে কোম্পানিকগুলোর শেয়ার ফ্লোর প্রাইসের গন্ডি পেরিয়ে সামনে এগিয়ে লেনদেন হতে দেখা যাচ্ছে।এই সময়ে কোম্পানিগুলোর লেনদেনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।অন্যদিকে, এক শতাংশ সার্কিট ব্রেকার আরোপের কোম্পানিগুলোর শেয়ার দরও বিদায়ী সপ্তাহজুড়ে তেজিভাব নিয়ে সামনে এগুতে দেখা গেছে। অনেক কোম্পানির শেয়ার ইউটার্নে ফিরেছে।পিই রেশিও: মূল্য আয় অনুপাতের (পিই রেশিও) দিক থেকে স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলো অতিমাত্রায় ঝুঁকির মধ্যে থাকে বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা সব সময় অভিযোগ করে থাকেন। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে কিছু কিছু কোম্পানির মুনাফা বাড়ায় কোম্পানিগুলোর পিই রেশিও সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে। এরমধ্যে বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ার মার্জিনেবল অবস্থায় চলে এসেছে। তবে কয়েকটি কোম্পানির মুনাফা নেতিবাচক হওয়ায় বা লোকসান বেড়ে যাওয়ার সেগুলোর ঝুঁকি আরও বেড়ে যেতে দেখা গেছে।সর্বশেষ শেয়ার দর অনুযায়ি মুনাফায় থাকা কোম্পানিগুলোর পিই রেশিও হলো-এমবি ফার্মা ৪০৩.৯২, এমসিএল-প্রাণ ৩২.৮০, অ্যারামিট লিমিটেড ৬১.০৮, অ্যাপেক্স স্পিনিং ৩৩.২৩, অ্যাপেক্স ফুড ৪০.৭৩, বিডি ল্যাম্পস ৩৬.০১, বিডি অটোকারস ১৪০.৮০, বঙ্গজ ৪৮০.৮৩, দেশ গার্মেন্টস ১২০.৯৮, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ১২৩.৩৭, জেমিনি সী ফুড ৩৫.১৮, কেএন্ডকিউ ৪৬১.১৫, মুন্নু এগ্রো ৩৩৭.৩২, মনোস্পুল পেপার ৪৬.৭৯, ন্যাশনাল টি ১৭৮.৩০, ফার্মা এইড ৩২১.৪২, রহিম টেক্সটাইল ২৪২.৫৫, রেকিট বেনকিজার ৩৯.৪৪, সোনালী আঁশ ১২৭.৫০।আর লোকসানের কারণে আলহাজ্ব টেক্সটাইল, আজিজ পাইপ, দুলামিয়া কটন, জিকিউ বলপেন, জুট স্পিনার্স, লিবরা ইনফিউশন, নর্দার্ন জুট, রেনউইক যগেনশ্বর, সাভার রিফ্যাক্টরিজ, শ্যামপুর সুগার ও স্টান্ডার্ড সিরামিকের পিই রেশিও নেগেটিভ।রিজার্ভ: রিজার্ভের দিক থেকে কিছু কিছু স্বল্প মূলধনী কোম্পানি অনেক এগিয়ে রয়েছে। কোম্পানিগুলোর রিজার্ভ শেয়ারবাজারে সর্বোচ্চ রিজার্ভে থাকা কোম্পানিগুলোর শীর্ষ তালিকায় অবস্থান করছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে এমসিএল-প্রাণের রিজার্ভ রয়েছে পরিশোধিত মূলধনের ৭.১৫ গুণ, অ্যারামিট লিমিটেড ১৪.২২ গুণ, অ্যাপেক্স স্পিনিং ৪.৬৫ গুণ, অ্যাপেক্স ফুড ৭.৫৭ গুণ, বিডি ল্যাম্পস ৮.৫৯ গুণ, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ১৬.১৩ গুণ, জিকিউ বলপেন ১১.২৫ গুণ, কেএন্ডকিউ ৬.৩৮ গুণ, লিবরা ইনফিউশন ১২৫ গুণ, মুন্নু এগ্রো ১৬.৩৯ গুণ, মনোস্পুল পেপার ৩.৪৮ গুণ, নর্দার্ন জুট ৭.১৬ গুণ, ন্যাশনাল টি ৩.৮৭ গুণ, ফার্মা এইড ৮.৮৮ গুণ, রহিম টেক্সটাইল ২.৭৯ গুণ, রেকিট বেনকিজার ১৯.০৬ গুণ ও সোনালী আঁশের ১০.৪২ গুণ।ডিভিডেন্ড: স্বল্প মূলধনী কোম্পানির মধ্যে এমবি ফার্মা, এমসিএল-প্রাণ, অ্যারামিট লিমিটেড, অ্যাপেক্স স্পিনিং, অ্যাপেক্স ফুড, বিডি ল্যাম্পস, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, জেমিনি সী ফুড, মুন্নু এগ্রো, মনোস্পুল পেপার, ফার্মা এইড, রেকিট বেনকিজার ও সোনালী আঁশ বরাবরই বিনিয়োগকারীদের ভালো ডিভিডেন্ড দেয়। সর্বশেষ বছরেও কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের ভালো ডিভিডেন্ড দিয়েছে।গত দুই সপ্তাহের বাজার ট্রেন্ড পর্যালোচনায় দেখা যায়, স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোর শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। যে কারণে গত দুই সপ্তাহ যাবত স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোর শেয়ার সামনের দিকে উঁকিঝুঁকি দিতে শুরু করেছে। বিদায়ী সপ্তাহের শেষদিন বৃহস্পতিবার বিডি ল্যাম্পের শেয়ারকে অনেক শক্তিমত্তা নিয়ে সামনে এগুতে দেখা গেছে। চলতি সপ্তাহে রেকিট বেনকিজারের ডিভিডেন্ড ঘোষণার জন্য বোর্ড সভার তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। এই উপলক্ষে কোম্পানিটির শেয়ারও হয়তো ফ্লোর প্রাইসের গন্ডি পেরিয়ে সামনে এগুতে পারে বলে বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামনের সপ্তাহে স্বল্প মূলধনী কোম্পানির শেয়ার দর ও লেনদেন বাড়তে পারে। তবে বিনিয়োগকারীদের ভেবেচিন্তে স্বল্প মূলধনী কোম্পানির শেয়ারে এন্ট্রি দিতে হবে।

Share this news