ফ্লোর প্রাইস উঠলে পথে বসবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা
গত ২৮ জুলাই শেয়ারবাজারে পতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে। এই ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ বিনিয়োগকারীদের রক্ষা করা।কিন্তু এখন প্রকাশ্যে না বললেও একটি স্বার্থান্বেষী মহল নানাভাবে গুজব ছড়াচ্ছে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার বিষয়ে। তবে ফ্লোর প্রাইস না তোলার ব্যপারে এখন দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।ফ্লোর প্রাইসের বিষয়ে বিএসইসির দৃঢ় অবস্থানে থাকার কারণে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো মুখ খুলে কিছু বলতে পারছে না। কিন্তু তারা নিজেদের পুঁজি গুটিয়ে বাজার থেকে এখন সাইড লাইনে অবস্থান করছে। অপেক্ষায় আছে কম দরে শেয়ার তুলে নেওয়ার। যে কারণে শেয়ারবাজারের মধ্যস্থাকারী প্রতিষ্ঠান গ্রুপিং করে ট্রেড হওয়া কোম্পানিগুলোর শেয়ারকেও ফ্লোর প্রাইসে নামানোর চেষ্টায় রয়েছে।এরই প্রেক্ষিতে গত কয়েকদিন ধরে যেসব কোম্পানির শেয়ারগুলো ফ্লোর প্রাইসের ওপরে লেনদেন হচ্ছিল, সেসব কোম্পানির শেয়ারের ব্যাপক সেল প্রেসার দিচ্ছে। যাতে কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর ফ্লোরে আসার অবস্থা সৃষ্টি হয়।সবগুলো কোম্পানি ফ্লোর প্রাইসে: বর্তমানে শেয়ারবাজারে লেনদেন হয় কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার। এই কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার সেল প্রেসারের মাধ্যমে ফ্লোর প্রাইসে নামানো হলে, সবগুলো কোম্পানির শেয়ারদরই ফ্লোর প্রাইসে নেমে আসবে। এতে করে শেয়ারবাজারের লেনদেন বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্ঠি করার চেষ্টা করছে ওই পক্ষটি, এমনটাই অভিযোগ করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজ ঘুরে জানা গেছে, সবগুলো কোম্পানির শেয়ারদর ফ্লোর প্রাইসে নামানো হলে বিএসইসি ফ্লোর প্রাইস নিয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত দিতে বাধ্য হবে। আর বিএসইসি বাধ্য হয়ে হয়তো ফ্লোর প্রাইস তুলে দিবে অথবা নতুন করে সার্কিট ব্রেকার বেঁধে দিবে। এতে করে সুযোগ সন্ধানীরা আরও কম দরে শেয়ার কিনে নিজেদের পায়দা লুটতে পারবে।ফ্লোর প্রাইস তুলে দিলে পথে বসবে বিনিয়োগকারীরা: শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ফ্লোর প্রাইস তুলবে না বলে আজও সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে। বিএসইসির এই সিদ্ধান্তুকে সাধুবাদ জানিয়েছে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টারা। আবার অনেকে বলছেন শেয়ারবাজারকে নিজের গতিতে চলতে দেওয়া উচিত। এভাবে আর কতদিন ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দিয়ে শেয়ারবাজারের গতি রোধ করবে।এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন শেয়ারনিউজকে বলেন, ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়ার পর তিন মাস শেয়ারবাজার ভালো ছিল। লেনদেন প্রায় তিন হাজার কোটি টাকাও হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে এই টাকাগুলো কোথায় গেলো। কারা এই টাকা ফ্রি করে বসে আছে। কেনই বা বসে আছে? এই বিষয়গুলো তদন্ত করা প্রয়োজন।অনেক ব্রোকারেজ হাউজও ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার কথা বলছেন। তাদের এই দাবির বিষয়ে অধ্যাপক আল আমিন বলেন, যারা এখন ফ্লোর প্রাইস তুলে দিতে বলছেন, তাদের বিনিয়োগের অবস্থা দেখা প্রয়োজন। কারণ তাদের এখন বাজারে বিনিয়োগ নেই। তারা এখন সুযোগের অপেক্ষায় আছে। ফ্লোর প্রাইস তুলে দিলে তারা আরও কম দামে শেয়ার কিনে লাভে বিক্রি করবে।কিন্তু এখনই ফ্লোর প্রাইস তুলে দিলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পথে বসে যাবে। কারণ ফ্লোর প্রাইস তুলে দিলে মার্জিনে বিনিয়োগকারীদের ফোর্স সেল আসবে। এতে করে তারা ফোর্স সেল দিতে বাধ্য হবে। যা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পথে বসিয়ে দিবে বলে মনে করেন তিনি।