ফ্লোর প্রাইস: নিয়ন্ত্রক সংস্থার দূরদর্শী ও কৌশলী সিদ্ধান্ত

Date: 2022-11-29 04:00:22
ফ্লোর প্রাইস: নিয়ন্ত্রক সংস্থার দূরদর্শী ও কৌশলী সিদ্ধান্ত
চলতি বছরের ২৮ জুলাই শেয়ারবাজারে পতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে। এই ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ বিনিয়োগকারীদের রক্ষা করা।ফ্লোর প্রাইসের ভালো ও মন্দ দুটি দিকই রয়েছে। ভালো দিক হলো এটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের রক্ষা করতে রক্ষা কবচের ভূমিকা পালন করেছে। মন্দ দিক হলো ইকটি ইন্সট্রুমেন্টের প্রাইসের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এখন আর এটি ইচ্ছে মতো কমতে পারছে না।এই মন্দ দিকটিকে কাজে লাগিয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল নানাভাবে গুজব ছড়াচ্ছে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার বিষয়ে। অনেক ব্রোকারেজ হাউজও ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার কথা বলছেন। তাদের এই দাবির বিষয়ে অধ্যাপক আল আমিন বলেন, যারা এখন ফ্লোর প্রাইস তুলে দিতে বলছেন, তাদের বিনিয়োগের অবস্থা দেখা প্রয়োজন। কারণ তাদের এখন বাজারে বিনিয়োগ নেই। তারা এখন সুযোগের অপেক্ষায় আছে। ফ্লোর প্রাইস তুলে দিলে তারা আরও কম দামে শেয়ার কিনে লাভে বিক্রি করবে।নিয়ন্ত্রক সংস্থার দৃঢ় ও কৌশলী এ অবস্থানের কারণে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো মুখ খুলে কিছু বলতে পারছে না। কিন্তু তারা নিজেদের পুঁজি গুটিয়ে বাজার থেকে এখন সাইড লাইনে অবস্থান করছে। অপেক্ষায় আছে কম দরে শেয়ার তুলে নেওয়ার। যে কারণে শেয়ারবাজারের মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান গ্রুপিং করে ট্রেড হওয়া কোম্পানিগুলোর শেয়ারকেও ফ্লোর প্রাইসে নামানোর চেষ্টায় রয়েছে।আর মাত্র গুটি কয়েক কোম্পানির শেয়ার সেল প্রেসারের মাধ্যমে ফ্লোর প্রাইসে নামানো হলে, সবগুলো কোম্পানির শেয়ারদরই ফ্লোর প্রাইসে নেমে আসবে। এতে করে শেয়ারবাজারের লেনদেন বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। সাম্প্রতিক দিনকে দিন লেনদেন কমে যাওয়া এর প্রত্যক্ষ প্রমাণ।আজ সোমবার (২৮ নভেম্বর) ডিএসইতে সূচক ও অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বাড়লেও, টাকা অঙ্কে লেনদেন কমেছে। এর আগের কার্যদিবস সূচক পতনের পর আজ মঙ্গলবার সূচক ঘুরে দাঁড়িয়েছে। চলতি সপ্তাহের তিন কার্যদিবসের মধ্যে দুই কার্যদিবস সূচকের উত্থান হলো। যা বাজার ভালো হওয়ার ইঙ্গিত বহন করে। বা বড় পতনের আর সুযোগ নেই।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন কিছুদিন পূর্বে ফ্লোর প্রাইস সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে শেয়ারনিউজকে বলেছিলেন, ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়ার পর তিন মাস শেয়ারবাজার ভালো ছিল। লেনদেন প্রায় তিন হাজার কোটি টাকাও হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে এই টাকাগুলো কোথায় গেলো। কারা এই টাকা ফ্রি করে বসে আছে। কেনই বা বসে আছে? এই বিষয়গুলো তদন্ত করা প্রয়োজন।কিন্তু এখনই ফ্লোর প্রাইস তুলে দিলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পথে বসে যাবে। কারণ ফ্লোর প্রাইস তুলে দিলে মার্জিনে বিনিয়োগকারীদের ফোর্স সেল আসবে। এতে করে তারা ফোর্স সেল দিতে বাধ্য হবে। যা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পথে বসিয়ে দিবে বলে মনে করেন তিনি।শেয়ারবাজার আলোচক ও আমায়া সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসলাম সেরনিয়াবাত বলেছেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বাঁচানোর জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি গত ২৮ জুলাই শেয়ারবাজারে দ্বিতীয় দফা ফ্লোর প্রাইস আরোপ করেছিল। তিনি বলেন, বিএসইসির দূরদর্শী ও কৌশলী সিদ্ধান্তের ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সর্বশান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছেন।ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইএ’র অন্যতম পরিচালক আসলাম সেরনিয়াবাত বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। যে কারণে শেয়ারবাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব লক্ষণীয়। তবে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে সেই মন্দাভাব কাটিয়ে উঠছে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।আসলাম সেরনিয়াবাত বলেন, ব্যাংকগুলোকে শেয়ারবাজারে স্বাভাবিক আচরণে ফেরানোর চেষ্টা করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু তারপরও কিছু কিছু কারণে ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারমুখী হতে পারছে না। সেগুলোকে চিহ্নিত করে সমাধান করা গেলে ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে স্বাভাবিক আচরণে ফিরবে। তখন পর্যায়ক্রমে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার চিন্তাভাবনা করতে পারবে বিএসইসি। এ মূহুর্তে ফ্লোর প্রাইস তুললে সাধারণ বিনিয়োগকারা সর্বস্বান্ত হয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন।তিনি বলেন, ফ্লোর প্রাইস হলো নিয়ন্ত্রক সংস্থার একটি দূরদর্শী ও কৌশলী সিদ্ধান্ত। যা বাজারকে আরেকটি ধস থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে, এজন্য অবশ্যই বর্তমান কমিশন ধন্যবাদযোগ্য।

Share this news