ফ্লোর প্রাইস নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কের দায় কি বিএসইসির?
:বিনিয়োগকারীদের পুঁজি ও শেয়ারবাজারের পতন ঠেকাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরে ফ্লোর প্রাইস বেধে দিয়েছিল শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরপর একাধিকবার বিএসইসি থেকে জানানো হয়েছে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি করে ফ্লোর প্রাইস উঠানো হবেনা। অর্থাৎ শেয়ারবাজার ভালো হলেই কেবল ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হবে, তার আগে নয়।কিন্তু এমন খবরের ফাঁকেও হঠাৎ করে ১৬৮টি কোম্পানির শেয়ারদর থেকে ফ্লোর প্রাইস বাতিল করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এই ১৬৮টি কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকার সর্বোচ্চ নির্ধারন ঠিক থাকলেও কমার ক্ষেত্রে ১ শতাংশ বেধে দিয়েছে। এরপর থেকে এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর ক্রমাগতই কমে চলেছে। ইতোমধ্যে এই ১৬৮টি কোম্পানির মধ্যে প্রায় সবগুলোরই শেয়ারদর কমেছে ফ্লোর প্রাইস থেকেও ৪০ শতাংশ করে।বাজারে গুঞ্জন রয়েছে এই ১৬৮টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস উঠানোর ক্ষেত্রেও একটি সার্থান্বেষী চক্র কাজ করেছে। বিভিন্নভাবে বিএসইসিকে ফ্লোর প্রাইস উঠানোর জন্য চাপ দেওয়ার চেষ্টা করেছে। বিএসইসিকে বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে ফ্লোর প্রাইস তুলে দিলে বাজার ভালো হবে। এই আশায় বিএসইসি ১৬৮টি কোম্পানির শেয়ারদর থেকে ফ্লোর প্রাইস বাতিল করলেও তা বাজারের জন্য ভালো হয়নি বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা।অন্যদিকে, ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা বাকি কোম্পানিগুলোর শেয়ার নিয়েও এখন বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত। কারন ওই ১৬৮টি কোম্পানির মতো কখন যে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয় তাতো বলা যায় না। আর ফ্লোর প্রাইস তুলে দিলে ক্রমাগত শেয়ারদর কমতে থাকবে। এতে করে অনেক বেশি ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বিনিয়োগকারীদের। যার ফলে ফ্লোর প্রাইস বেধে দেওয়া কোম্পানিগুলোর শেয়ার নিয়ে এখন বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত।এদিকে শেয়ারবাজার প্রায় প্রতিদিনই ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার কথা বলে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত করছে একাধিক চক্র। আসলেই কি ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হবে নাকি ফ্লোর প্রাইস থাকবে, এ বিষয়টি নিয়ে এখন বিনিয়োগকারীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ফ্লোর প্রাইস নিয়ে বিএসইসির বিনিয়োগকারীদের স্পষ্ট করার সময় এসেছে বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা।বিনিয়োগকারীরা বলছেন, বিএসইসি সকালে বলেছে বাজার ভালো না হলে ফ্লোর প্রাইস উঠানো হবে না। আবার বিকালে ১৬৮টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস বাতিল করেছে। যখন এই ১৬৮টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস বাতিল করা হয়েছে তখন তো বাজার ভালো হয়নি। তাহলে বাজার খারাপ থাকা কালীনই যে বাকি কোম্পানিগুলোর ফ্লোর প্রাইস বাতিল করবে না তার কি নিশ্চয়তা? আর এই কারণেই বিনিয়োগকারীরা ফ্লোর প্রাইস নিয়ে আতঙ্কিত।এই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবসা শিক্ষা অনুষদভুক্ত মার্কেটিং বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান শেয়ারনিউজকে বলেন, ফ্লোর প্রাইস নিয়ে একাধিকবার কয়েকটি চক্র বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এতে করে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও বেশি কমেছে। তাই এখন সময় এসেছে ফ্লোর প্রাইস নিয়ে বিনিয়োগকারীদের স্পষ্ট করার।তিনি বলেন, বিএসইসি থেকে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের বিষয়ে যদি বিনিয়োগকারীদের স্পষ্ট করা হয়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা ফ্লোর প্রাইস নিয়ে আতঙ্কিত হতো না। যা শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের কিছুটা হলেও আস্থা তৈরী করতে পারতো।এই বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম শেয়ারনিউজকে বলেন, কমিশন যা কিছুই করে তা কমিশনের পলিসিগত সিদ্ধান্ত। আর পলিসিগত সিদ্ধান্ত আগে বলে জানানো হয়না। কমিশন যা সিদ্ধান্ত নেয় তাই নোটিশ আকারে প্রকাশ করে বাস্তাবায়ন করা হয়। ১৬৮টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস বাতিলের ক্ষেত্রেও কমিশন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেই তা নোটিশ আকারে প্রকাশ করে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।ফ্লোর প্রাইসের তুলে দেওয়ার বিষয়ে বিএসইসির মূখপাত্র বলেন, এখন পর্যন্ত ফ্লোর প্রাইস বাতিলের বিষয়ে কোন প্রকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।