ফ্লোর প্রাই‌সে রক্ত ক্ষরণ হ‌চ্ছে সাধারণ বি‌নি‌য়োগকারীদের

Date: 2022-10-23 05:00:11
ফ্লোর প্রাই‌সে রক্ত ক্ষরণ হ‌চ্ছে সাধারণ বি‌নি‌য়োগকারীদের
দেশের শেয়ারবাজারের পতন ঠেকাতে দ্বিতীয়বারের মতো ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়া হয় গত ২৮ জুলাই। নিয়ন্ত্রণ সংস্থার বিএসইসি বিনিয়োগকারীদের পুঁজি রক্ষার্থে দ্বিতীয় দফায় ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে। কিন্তু দীর্ঘদিন এই সিদ্ধান্ত অব্যাহত থাকার কারণে নীরব রক্তক্ষরণ হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।বিনিয়োগকারীরা বলছেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ৩৯৬টি কোম্পানির মধ্যে আজ ফ্লোর প্রাইজে অবস্থান করছে ২৮৫টি কোম্পানি। যা তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রায় ৭২ শতাংশ। ক্রমাগতভাবে ফ্লোর প্রাইজের কোম্পানির সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে লেনদেনের অবস্থা আরো মারাত্মক হতে পারে। যা ইতিমধ্যে লক্ষণীয়।সর্বশেষ আজ ২৩ অক্টোবর রোববার ডিএসইতে ২৮৫টি কোম্পানি ফ্লোর প্রাইসে ফেরার কারণে লেনদেনে বড় ভাটা লক্ষ্য করে গেছে। গত দিনের তুলনায় আজ ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ২০০ কোটি টাকা। কোম্পানিগুলোর ফ্লোর প্রাইজে ফেরার এমন মিছিলের ফলে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সাধারন বিনিয়োগকারীদের।একদিকে কোম্পানিগুলোর শেয়ার বৃদ্ধি পাচ্ছে না, অন্যদিকে মার্জিন ঋণের কারণে ইন্টারেস্ট বেড়েই চলেছে। কিছুদিন পর বিনিয়োগকারীদের পোর্টপোলিও শূন্য হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজ বিনিয়োগকারীদের ফোর্স সেল দেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছে। এতে করে বিনিয়োগকারীরা হতাশায় ভুগছে। ব্রোকারেজ হাউজ থেকে বিনিয়োগকালীদের পাঠানো বেশ কয়েকটি চিঠি শেয়ারনিউজ২৪.কম এর হাতে এসেছে।কিন্তু বাজার পতনের জন্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দিলেও মার্জিন ঋণের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। যার ফলে দিনকে দিন নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।এই বিষয়ে করিম নামে এক বিনিয়োগকারী শেয়ারনিউজ২৪.কমকে বলেন, শেয়ারবাজার কয়েকদিন ভালো থাকলে আমার পোর্টপলিও পজেটিভ হয়েছিল ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা। কিন্তু বাজার খারাপ থাকার কারণে আমার পোর্টপলিও পজেটিভ আছে আড়াই লাখ টাকা। কিন্তু এই মুহূর্তে হাউজ থেকে আমাকে ফোর্স সেলের চাপ দিচ্ছে। যা আমাকে মানষিক ও আর্থিকভাবে অনেক বেশি ক্ষতির মুখে ফেলেছে।এই বিষয়ে শেয়ার বাজার বিশ্লেষণ অধ্যাপক আবু আহমেদ শেয়ার নিউজকে বলেন, বিএসইসি পতন ঠেকাতে ফ্লোর প্রাইজ বেধে দিলেও, মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিষয়ে চিন্তা করছে না। এতে করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা দিনের পর দিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যা বিনিয়োগকারীদের অন্তরে নীরব রক্তক্ষরণ চলছে।তিনি আরও বলেন, যদি ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হতো তাহলে শেয়ারের দাম কমলেও কিছু একটা হাতে নিয়ে বিনিয়োগকারীরা সেই শেয়ারগুলো বিক্রির সুযোগ পেতো। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এই বিষয়ে কোন চিন্তা ভাবনা করছে বলে আমার মনে হয় না।অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে বিমুখ হয়ে পড়বে। ইতোমধ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ফ্লোর প্রাইজ দেখে বিরক্ত হয়ে বাজার থেকে চলে যাচ্ছে। কারণ ফান্ডামেন্টাল শেয়ারগুলো ফ্লোর প্রাইজে অবস্থান করছে। যেগুলো ফ্লোর প্রাইজ বেঁধে দেওয়ার পরেও অনেক উপরে ছিল।তিনি আরও বলেন, গুটিকয়েক শেয়ার নিয়ে বাজারে খেলাধুলা হলেও সে বিষয়ে নিরব নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কয়েকটি শেয়ারের পেছনে ফান্ডামেন্টাল শেয়ারের বিনিয়োগকারীরাও ছুটছেন। যার কারণে ফান্ডামেন্টাল কোম্পানিগুলোর শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে নেমে এসেছে।বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদের সাথে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, তিনি কল রিসিভ করেননি।

Share this news