এটিবি প্ল্যাটফর্মকে জনপ্রিয় করতে নিয়ম পাল্টাবে বিএসইসি

Date: 2023-08-06 21:00:08
এটিবি প্ল্যাটফর্মকে জনপ্রিয় করতে নিয়ম পাল্টাবে বিএসইসি
প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিকল্প লেনদেন ব্যবস্থা বা অলটারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) চালু হওয়ার অর্ধেক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি শুরু হওয়া প্ল্যাটফর্মটিতে এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র একটি একক কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। যা ভাবিয়ে তুলছে খোদ শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি)।বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত নীতিগত জটিলতার কারনেই এটি এখনও কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিজেও মনে করছে এই প্ল্যাটফর্মে আরও বেশি কোম্পানিকে উৎসাহিত করার জন্য তাদের নীতিমালা সহজ করা উচিত। বিএসইসি বলছে, এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে কমিশন।এটিবি প্ল্যাটফর্মকে এড়িয়ে থাকার অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে লেনদেন সম্পন্ন করতে দীর্ঘ সময়ের বাঁধা। এটিবিতে তালিকাভুক্ত কোনোও শেয়ার কেনার ৯০ দিন পরেই কেবল কোন বিনিয়োগকারী সেই শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন ।কোনো বিনিয়োগকারী যদি নিয়ম লঙ্ঘন করে এর আগে শেয়ার বিক্রি করে, তাহলে শেয়ার বিক্রি থেকে পাওয়া মুনাফা বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং তা শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারী সুরক্ষা তহবিলে জমা করা হবে।এই নীতিটিই এটিবি প্ল্যাটফর্মকে চাঙ্গা ও জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা বলে মনে করেন বিএসইসি এবং ডিএসইর শীর্ষ-কর্মকর্তারা।বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়াত উল ইসলাম এই বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, নীতিগত কিছু জটিলতার কারণে এটিবি বাজার জনপ্রিয় হতে ব্যর্থ হয়েছে এবং তার মধ্যে একটি হল শেয়ার বিক্রির জন্য ৯০ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করা।তিনি এর সাথে যোগ করে বলেন, এই নিয়মটি মূলত এটিবি বাজারে কারসাজি রোধ করার জন্য করা হয়েছিল, তবে এখন এই নিয়মটিই বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। তাই আমরা মনে করি, এর পরিবর্তন দরকার। আমরা এই প্ল্যাটফর্মটিকে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে জনপ্রিয় করার জন্য নীতিগুলো সহজ করার জন্য কাজ শুরু করেছি।এটিবি বাজারের বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার জন্য ভিন্ন উপায় বিবেচনায় আনার বিষয়টিও যোগ করেন তিনি।গত বছরের (২০২২ সাল) মে মাসে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বলেছিল, দেশের ৭৬টি ওপেন-এন্ড মিউচুয়াল ফান্ড, ১৮টি ইক্যুইটি সিকিউরিটি এবং ১৫টি ডেট সিকিউরিটি এটিবিতে তালিকাভুক্তির জন্য প্রস্তুত রয়েছে।এই বিষয়ে ডিএসইর চেয়ারম্যান হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বলেন, এটিবি বাজার কেন জনপ্রিয় হতে পারেনি তার কারণ আমরা ইতিমধ্যেই খুঁজে পেয়েছি। সেগুলো সমাধানের চেষ্টাও চলছে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এসএমই প্ল্যাটফর্মের মতো এটিবি প্ল্যাটফর্মকে সক্রিয় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।এটিবি মার্কেটের দামের সার্কিট ব্রেকারের নিয়মকেও অন্য আরেকটি বাধা হিসেবে দেখেন বিনিয়োগকারীরা। এই নিয়মের কারণে প্রতিটি তালিকাভুক্ত শেয়ারের দাম প্রথম দুই কার্যদিবসে মাত্র ৪ শতাংশ বৃদ্ধি বা হ্রাস পেতে পারে। তৃতীয় কার্যদিবসে এই সিকিউরিটিজের লেনদেন বন্ধ হয়ে যায় এবং চতুর্থ কার্যদিবসে ৫ শতাংশ করে সার্কিট ব্রেকার আরোপ করা হয়। এছাড়াও বিনিয়োগকারীরা এটিবির কোনো শেয়ার কেনার থেকে কোনো মার্জিন সুবিধা পান না।উল্লেখ্য, এটিবি প্ল্যাটফর্মটি মূলত কর্পোরেট বন্ড, বিকল্প বিনিয়োগ তহবিল এবং চিরস্থায়ী মিউচুয়াল ফান্ড সহ তালিকাভুক্ত এবং তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের লেনদেনের সুবিধার্থে চালু করা হয়েছিল।এটিবিতে তালিকাভুক্তির জন্য কোন ন্যূনতম মূলধনের সীমা নেই। ডিরেক্টরেট অফ জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস (RJSC)-এর সাথে নিবন্ধিত যেকোন তালিকাভুক্ত কোম্পানি এই প্ল্যাটফর্মে শেয়ার লেনদেন করতে পারবে।বর্তমানে, লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ এটিবি মার্কেটে একমাত্র তালিকাভুক্ত কোম্পানি। অন্যদিকে বেঙ্গল মিট এবং এএফসি হেলথ তালিকাভুক্তির পাইপলাইনে রয়েছে।লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্সের সহযোগী প্রতিষ্ঠান লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ ২.৬৯ কোটি টাকার শেয়ার ইস্যু করে এবিটি বাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে।উল্লেখ্য, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১-এ, বিএসইসি’র একটি নির্দেশিকা ওভার-দ্য-কাউন্টার (OTC) মার্কেটের ১৮টি কোম্পানিকে এটিবি প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তর করতে বলেছিল। সেভাবেই শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ২০২০ সালের আগস্টে ডিএসই অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড রেগুলেশন, ২০২২ অনুমোদন করেছিল। তবে, এটিবিকে একটি গতিশীল এবং পরিচ্ছন্ন প্ল্যাটফর্ম হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য, ওটিসি বাজার কোম্পানিগুলো এখনও পর্যন্ত এটিবিতে তালিকাভুক্ত হয়নি।

Share this news