এসবিসির নতুন ৩ নীতিমালা: পরিবর্তন আসছে নন-লাইফ বীমা খাতে

গত ৩ বছরে ৩টি নতুন নীতিমালা করেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দেশের একমাত্র পুনর্বীমা প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমা করপোরেশন। এর মধ্যে রয়েছে ফ্যাকাল্টেটিভ পুনর্বীমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম দেয়ার নীতিমালা। বেসরকারি বীমা কোম্পানির সাথে পুনর্বীমা প্রিমিয়াম ও দাবির সমন্বয় বন্ধ করা এবং পুনর্বীমা দাবির টাকা রিকভারির পর তা গ্রাহকের প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। এসব নীতিমালা বাস্তবায়ন করা গেলে দেশের নন-লাইফ বীমা খাতে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর অবৈধ কমিশন ও অতিরিক্ত ব্যয় কমানোসহ গ্রাহক হয়রানি বন্ধ হবে। সেই সাথে কোম্পানিগুলোর আর্থিক সক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে। যা বীমা খাতে নতুন দিনের সূচনা করবেবলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।গত ০১ এপ্রিল থেকে পুনর্বীমার প্রিমিয়াম এবং দাবির সমন্বয় বন্ধ করে সাধারণ বীমা করপোরেশন। আন্তর্জাতিক পুনর্বীমা চর্চার সাথে সামঞ্জস্য রেখে এর পরিবর্তন আনা হয়। ফলে সাধারণ বীমা করপোরেশনকে পুনর্বীমা দাবির টাকা বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলোকে পরিশোধ করবে। অপরদিকে বেসরকারি কোম্পানিরগুলো সময়মত পুনর্বীমার প্রিমিয়াম পরিশোধ করবে। নন-লাইফ বীমা খাতে বড় একটি সমস্যা ছিল পুনর্বীমা প্রিমিয়ামের সাথে পুনর্বীমা দাবির টাকা সমন্বয়। এ কারণে বেসরকারি খাতের অনেক কোম্পানি সময়মত গ্রাহককে বীমা দাবির টাকা পরিশোধ করতে পারত নাবলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরাতাদের মতে, যেসব পলিসির পুনর্বীমা করা হয় তার সামান্য-ই ঝুঁকি নিয়ে থাকে সংশ্লিষ্ট বীমা কোম্পানি। মূলত ঝুঁকির সিংহভাগ হাস্তান্তর করে থাকে পুনর্বীমা কোম্পানি কাছে। ফলে পুনর্বীমা প্রতিষ্ঠান রিকভারির টাকা নগদে না দিয়ে সমন্বয় করার ফলে গ্রাহকদের হয়রানি হতে হয়। পুনর্বীমা কোম্পানি নগদে রিকভারি দিলে এই গ্রাহক হয়রানি বন্ধ হবে।অপরদিকে বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলো পুনর্বীমা প্রিমিয়াম ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পরিশোধ করলে আয়-ব্যয়ের সঠিক চিত্র উঠে আসবে। এছাড়া পুনর্বীমা প্রিমিয়াম বকেয়া বন্ধ হলে অবৈধভাবে কমিশন দেয়াও বন্ধ হবে; কমে আসবে অতিরিক্ত ব্যয়।বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলো সাধারণ বীমা করপোরেশন থেকে পুনর্বীমা রিকভারি নেয়ার পর তা গ্রাহককে না দেয়ার অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিনের। এই অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে সাধারণ বীমা করপোরেশন থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়। যার মূল্য উদ্দেশ্য গ্রাহকের বীমা দাবির টাকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা।২০২১ সালে সাধারণ বীমা করপোরেশনের বোর্ডে এক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়- বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলো রিকভারি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে বীমা গ্রাহককে দাবির টাকা পরিশোধ করতে হবে এবং দাবি পরিশোধের বিষয়টি লিখিতভাবে পুনর্বীমা প্রতিষ্ঠান এসবিসি’কে নিশ্চিত করতে হবে। বেসরকারি নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো সাধারণত ২ ধরনের পুনর্বীমা করে থাকে সাধারণ বীমা করপোরেশনর সাথে। এর মধ্যে ট্রিটি এবং ফ্যাকাল্টেটিভ পুনর্বীমা। ট্রিটি হচ্ছে পুনর্বীমার বার্ষিক চুক্তি। এই চুক্তি অনুসারে বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলো এসবিসিতে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পুনর্বীমা প্রিমিয়াম প্রদান করে এবং এসবিসি প্রকৃত পুনর্বীমা দাবি পরিশোধ করে।অপরদিকে ফ্যাকাল্টেটিভ পুনর্বীমা প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে হয় তাৎক্ষণিকভাবে। কিন্তু ফ্যাকাল্টেটিভ পুনর্বীমার প্রিমিয়াম পরিশোধের কোনো নীতিমালা ছিল না এসবিসি’র। গত মে মাসে ফ্যাকাল্টেটিভ পুনর্বীমা প্রিমিয়াম পরিশোধের নীতিমালা করা হয়। এই নীতিমালা অনুসারে ১৫ দিনের মধ্যে ফ্যাকাল্টেটিভ পুনর্বীমা পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। ১৫ দিনের মধ্যে ফ্যাকাল্টেটিভ পুনর্বীমার প্রিমিয়াম পরিশোধ করা না হলে ফ্যাকাল্টেটিভ পুনর্বীমা কভারেজ বাতিল হবে।এছাড়াও সাধারণ বীমা করপোরেশনের বিশেষ অনুরোধে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক এ কে এম এহসানুল হক এফসিআইআই এবং সৈয়দ ইব্রাহিম হোসেন, এসিআইআই ‘বীমা অবলিখন এবং দাবী’ সম্পর্কিত একটি ম্যানুয়াল তৈরি করে দেন।এসব পরিবর্তনের বিষয়ে সাধারণ বীমা করপোরেশনের সাবেক পরিচালক এ কে এম এহসানুল হক এফসিআইআই বলেন, আমরা যেসব পরিবর্তন এনেছি তা দীর্ঘ দিন ধরে কাঙ্খিত ছিল। বীমা গ্রাহক এবং বীমা খাতের উন্নয়নের স্বার্থে এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে। এসব পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সাধারণ বীমা করপোরেশনের বিগত (২০২১-২০২৩) পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের আন্তরিক সহযোগিতা ছিল। মূলত আমরা এসব পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে।তিনি আরও বলেন, এখন যে বিষয়টি প্রয়োজন তাহলো- নতুন যেসব নিয়ম-নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা। এক্ষেত্রে যারা নতুন পরিচালনা পর্ষদে আসবেন তাদেরকে এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।