এস আলমের চার ব্যাংকের ৭ হাজার কোটি টাকা ধার
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। এই চার ব্যাংকের মোট ধারের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। অন্যদিকে ইসলামী ব্যাংক একাই নেয় ৮ হাজার কোটি টাকা।ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো পরিচালিত হয় শরিয়াহ নীতিমালার আলোকে। সাধারণভাবে এ ধরনের ব্যাংক সুদভিত্তিক কোনো লেনদেন করতে পারে না। আবার নির্ধারিত শরিয়াহ উপকরণের বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধার দিতে পারে না। তবে সংকটে পড়ে এসব ব্যাংকের হাতে শরিয়াহভিত্তিক পর্যাপ্ত উপকরণ না থাকায় ‘ডিমান্ড প্রমিসরি নোট’ অর্থাৎ কোনো কারণে ব্যাংক বসে গেলে বা দেউলিয়া হলে সম্পদ বিক্রির অর্থ থেকে সর্বপ্রথম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায় মেটানোর শর্তে অর্থ নিয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডারের আলোকে ‘লেন্ডার অব দ্য লাস্ট রিসোর্ট’ বা শেষ ভরসার ঋণদানকারী হিসেবে ব্যাংকগুলোকে বিশেষ ধার দেওয়া হয়।সুদভিত্তিক ধারের কারণ হিসেবে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানিয়েছে, সম্প্রতি গ্রাহকদের অতিরিক্ত আমানতের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত চলতি হিসাবে এসব ব্যাংকের জমা কমে গেছে। এতে সিআরআর ঘাটতি দেখা দিয়েছে। নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ৩৪ দিন, সোশ্যাল ইসলামী ৩০ দিন ও ইউনিয়ন ব্যাংকের ১৮ দিন সিআরআরে ঘাটতি হয়েছে। আর গ্লোবাল ইসলামী শুধু ডিসেম্বর মাসে ৭ দিন সিআরআর সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। সিআরআর সংরক্ষণ এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্রাহক চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে ব্যাংকগুলো ধারের আবেদন করে।জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর বার্ষিক আর্থিক বিবরণীতে যেন সিআরআর ঘাটতি দেখাতে না হয়, সে জন্য বছরের শেষ কর্মদিবস গত ২৯ ডিসেম্বর বিশেষ ধার দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এক দিনের জন্য নেওয়া ধারের সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ওই দিন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ধার করে ৩ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। গত ২৮ ডিসেম্বর ব্যাংকটির সিআরআর ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা। এসআইবিএলের ৮৯৯ কোটি টাকার ঘাটতির বিপরীতে ধার করে দেড় হাজার কোটি টাকা। ইউনিয়ন ব্যাংকের ৫২৩ কোটি টাকা ঘাটতির বিপরীতে ধারের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। আর গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ১০৭ কোটি টাকা ঘাটতির বিপরীতে ধার নেয় ৭০০ কোটি টাকা।বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, কয়েকটি ব্যাংকের নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ বের করার তথ্য ফাঁসের পর এসব ব্যাংক থেকে অনেকে আমানত তুলে নিয়েছেন। ডিসেম্বর ভিত্তিতে কোনো ব্যাংকের সিআরআর ও এসএলআর ঘাটতি হলে বার্ষিক আর্থিক বিবরণীতে তার প্রতিফলন হয়। এ প্রবণতা আমানতকারীদের আস্থার সংকট বাড়ায়। এমন প্রেক্ষাপটে তাদের এক দিন মেয়াদি ধার দেওয়া হয়। যদিও এখনও এসব ব্যাংকের সিআরআর ঘাটতি অব্যাহত আছে।বিদ্যমান নিয়মে কোনো ব্যাংকের মোট তলবি ও মেয়াদি দায়ের সাড়ে ৩ শতাংশ দৈনিক ভিত্তিতে এবং দ্বিসাপ্তাহিক ভিত্তিতে ৪ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিধিবদ্ধ নগদ জমা বা সিআরআর রাখতে হয়। আর সহজে বিনিময়যোগ্য সম্পদ বা এসএলআর হিসেবে ইসলামী ব্যাংকগুলোকে রাখতে হয় সাড়ে ৫ শতাংশ।