ঈদের ছুটি শেষে বাড়ল শেয়ারদর

টানা পাঁচ দিনের ঈদের ছুটি শেষে সােমবার ফের লেনদেন শুরু হয়েছে শেয়ারবাজারে। লেনদেন শুরুর প্রথম দিনে গতকাল ফ্লোর প্রাইসের ওপরে থাকা বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। এর প্রভাবে মূল্য সূচকও সাম্প্রতিক সময়ের তুলনায় বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ২৩ পয়েন্ট বেড়ে ৬২৫২ পয়েন্টে উঠেছে। গত ৫ মার্চের পর বা দেড় মাসেরও বেশি সময়ের মধ্যে এক দিনে এতটা সূচক বাড়েনি। সার্বিক হিসাবে গতকাল ডিএসইতে ৩২৭ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে ৮৭টির দর বেড়েছে,, কমেছে ৩৭টির এবং অপরিবর্তিত বা ফ্লোর প্রাইসে কেনাবেচা হয়েছে ২০২ শেয়ারের। তবে ক্রেতার অভাবে ফ্লোর প্রাইসে পড়ে থাকা ৬৫ শেয়ারের কোনো লেনদেন হয়নি। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ারের দরবৃদ্ধির সঙ্গে সূচক বাড়লেও লেনদেন ঈদের ছুটির আগের শেষ কার্যদিবসের তুলনায় সামান্য কমেছে। গতকাল ডিএসইতে কেনাবেচা হওয়া সব শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৫৫২ কোটি ৫২ লাখ টাকা,, যা আগের কার্যদিবসের তুলনায় ৬ কোটি টাকা কম। ঈদের ছুটির পর এমন লেনদেনকে স্বাভাবিক বলে মনে করেন শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্টরা। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, , দরবৃদ্ধির শীর্ষ তালিকার বেশিরভাগ শেয়ার ছিল গত কিছু প্রান্তিকে লোকসান করা বা অপেক্ষাকৃত দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানির। যেমন– সিমেন্ট খাতের বহুজাতিক কোম্পানি হেইডেলবার্গ সিমেন্টের শেয়ারদর প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে ১৯৭ টাকায় উঠেছে। গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর এ কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইস ১৭৯ টাকা ১০ পয়সায় নামার পর ছয় মাস টানা এ দরে ছিল। গতকাল হঠাৎ শেয়ারটির দরে এমন উল্লম্ফন হয়েছে। ডিএসইতে গতকাল যে পাঁচ কোম্পানির শেয়ার সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দরে কেনাবেচা হয়েছে, হেইডেলবার্গ তার একটি। গত বছরের সেপ্টেম্বরের আগ পর্যন্ত টানা পাঁচ প্রান্তিক লোকসানে ছিল হেইডেলবার্গ সিমেন্ট। করোনাভাইরাস মহামারি-পরবর্তী অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং ডলারের বাজারে অস্থিরতাও কোম্পানিটির লোকসানের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয়। টানা সোয়া এক বছরের লোকসানের পর এমন বৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যায় বাজারসংশ্লিষ্টরা জানান,, সম্প্রতি সিমেন্ট খাতের প্রিমিয়ার সিমেন্ট ভালো মুনাফা করার তথ্য দিয়েছে। কোম্পানিটি হেইডেলবার্গের মতো সংকটে ছিল। প্রিমিয়ার সিমেন্ট মুনাফায় ফেরায় অনেকের ধারণা হেইডেলবার্গও মুনাফায় ফিরতে পারে। আগামী ২৭ এপ্রিল এ কোম্পানি ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন এবং ৩১ মার্চ ২০২৩ সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনার সঙ্গে গত বছরের জন্য লভ্যাংশ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পর্ষদ সভা আহ্বানের তথ্য প্রকাশ করেছে। এ খবর রোববারের দরবৃদ্ধির কারণ– এমন ধারণা হতে পারে। ডিএসইতে দরবৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা স্টাইল ক্রাফট ৩০ জুন ২০২৩ সমাপ্য চলতি হিসাব বছরের প্রথম নয় মাসে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৩ পয়সা লোকসান করেছে। যদিও সর্বশেষ জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি ৭ পয়সা মুনাফা করার তথ্য দিয়েছে, যেখানে গত বছরের একই সময়ে ৬৫ পয়সা লোকসান ছিল। গতকাল শেয়ারটির দর প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে ৯৬ টাকা ২০ পয়সায় কেনাবেচা হয়েছে। দরবৃদ্ধির তৃতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকা খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের দর পৌনে ১০ শতাংশ বেড়ে সর্বশেষ ১০ টাকা ২০ পয়সায় কেনাবেচা হয়েছে। এটি দুর্বল মৌলভিত্তির এবং লোকসানি কোম্পানি হিসেবে পরিচিত। চতুর্থ অবস্থানে থাকা ন্যাশনাল ফিড মিলস সামান্য লাভ বা লোকসানে চললেও কিছুদিন ধরে এর দর বাড়ছে। গতকাল প্রায় ৯ শতাংশ দর বেড়ে সর্বশেষ ১৮ টাকা ২০ পয়সায় কেনাবেচা হয়েছে। পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে,, উল্লিখিত তিন শেয়ারসহ গতকাল ২০ কোম্পানির শেয়ারের দর ৫ থেকে প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। বিপরীতে সোয়া ৫ শতাংশ দর হারিয়ে দরপতনের শীর্ষে ছিল মিডল্যান্ড ব্যাংক। ৩ শতাংশের ওপর দর হারিয়ে এর পরের অবস্থানে ছিল জিল বাংলা সুগার মিলস, তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ, আলহাজ্ব টেক্সটাইল, ন্যাশনাল টি এবং শ্যামপুর সুগার মিলস। গতকাল ডিএসইতে একক কোম্পানি হিসেবে ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের ইউনিক হোটেলের সর্বাধিক ৫৬ কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। একই খাতের সি পার্ল হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের ৪৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। মাত্র চার কোম্পানি নিয়ে গঠিত ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের লেনদেন হয়েছে ১০২ কোটি ৫৭ লাখ টাকার শেয়ার, যা খাতওয়ারি লেনদেনে ছিল সর্বোচ্চ।