দুর্বল বাজারে পুঁজি রক্ষায় বিনিয়োগকারীদের অস্থিরতা

Date: 2023-08-05 21:00:10
দুর্বল বাজারে পুঁজি রক্ষায় বিনিয়োগকারীদের অস্থিরতা
দেশের পুঁজিবাজার সূচকের পতনের মধ্য দিয়ে গত সপ্তাহ পার করেছে। এতে টানা দুই সপ্তাহ ধরে পতন হয়েছে পুঁজিবাজারে। গত সপ্তাহে সূচকের সঙ্গে লেনদেন কমেছে ৯ শতাংশ। এ সময়ে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটদর অপরিবর্তিত ছিল। বিনিয়োগকারীদের মুনাফা সংগ্রহে বিক্রির চাপ এবং বর্তমানে রাজনৈতিক আন্দোলনের ভয়ে বাজারে অস্থিরতা লক্ষ করা গেছে। বিদায়ী সপ্তাহে বাজারে ক্রয় ও বিক্রয়Ñউভয় দিক থেকে বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় ছিলেন। সেই সঙ্গে বর্তমান দুর্বল বাজারে বিনিয়োগকারীদের তহবিল সুরক্ষায় বিক্রির চাপে এ পতন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।আলোচ্য সপ্তাহে পতনেও সাধারণ বিবিধ খাতের শেয়ার কেনায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি ছিল। ফলে সবচেয়ে বেশি কেনার চাপ থাকায় সপ্তাহটিতে দর বৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে আলোচ্য খাতের শেয়ার। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের বিক্রির চাপ থাকায় বিমা খাতের দর সবচেয়ে বেশি কমেছে। খাতটি লেনদেনের শীর্ষে থেকেও পতনের সম্মুখীন হয়েছে।বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৯৬৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল তিন হাজার ২৫৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এ সময়ের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ২৯২ কোটি ৮২ লাখ টাকা বা ৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ। ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫৯২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৬৫১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। গত সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৪০৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ৭৬টির, দর কমেছে ৯৬টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২০৬টি কোম্পানির। লেনদেন হয়নি ১৫টি কোম্পানির শেয়ার।গত সপ্তাহে সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৯ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩২৯ দশমিক ৮৬ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ৭ দশমিক ৩ পয়েন্ট এবং শরিয়াহ্ সূচক ডিএসইএস ১ দশমিক শূন্য ৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ১৫২ দশমিক ৫২ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৩৭২ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে।বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে পতনের ধারা টানা দুই সপ্তাহ ধরে অব্যাহত রয়েছে। কারণ বিনিয়োগকারীদের মাঝে মুনাফা সংগ্রহের প্রবণতা বেশি ছিল। এছাড়া বর্তমানে রাজনৈতিক আন্দোলনের পুনরুত্থানের ভয় বাজারে লক্ষ করা গেছে। ফলে এ উদ্বেগের কারণে বাজার অস্থিরতার সম্মুখীন হয়েছে। বাজারে কেনা-বেচার উভয় দিকে সক্রিয় থাকায় বিনিয়োগকারীরা তাদের বিক্রি অব্যাহত রেখেছেন। এতে দুর্বল বাজার থেকে তহবিল রক্ষা করার জন্য বিনিয়োগকারীরা ছুটোছুটি করছেন। সেই সঙ্গে ক্রমাগত সংশোধনের ফলে লাভজনক বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে সপ্তাহ শেষে বিক্রেতাদের দাপট শীর্ষে থাকায় বাজার নেতিবাচক অবস্থায় শেষ হয়েছে বলে জানান তারা।এদিকে গত সপ্তাহে আগ্রহ বেশি থাকা বিবিধ খাতের শেয়ারদর বেড়েছে ১ দশমিক ৬০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে ছিল আইটি খাত। খাতটিতে ১ দশমিক ১০ শতাংশ শেয়ারদর বেড়েছে। শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ শেয়ারদর বেড়ে তৃতীয় স্থানে ছিল সেবা ও আবাসন খাত। এছাড়া গত সপ্তাহে বিক্রির চাপ সবচেয়ে বেশি থাকা বিমা খাতের শেয়ারদর কমেছে ৪ শতাংশ। ১ দশমিক ৩০ শতাংশ শেয়ারদর কমে দ্বিতীয় স্থানে ছিল পাট খাত। তৃতীয় স্থানে থাকা ট্যানারি খাতের শেয়ারদর কমেছে শূন্য দশমিক ৯০ শতাংশ।অন্যদিকে গত সপ্তাহে লেনদেনের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বিমা খাতে। খাতটিতে গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ৩২ দশমিক ৬০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ লেনদেন হয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল বিবিধ খাত।এদিকে গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৪ দশমিক ৪৪ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহ শেষে পিই রেশিও দাঁড়িয়েছিল ১৪ দশমিক ৪২ পয়েন্টে।অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গত সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ৬১ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৪৯ কোটি ৩৭ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এ সময় তালিকাভুক্ত ২৭৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ৬৯টির, দর কমেছে ৭৯টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১২৭টি কোম্পানির।সিএসইতে দু’টি বাদে বাকি চার ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান সূচক সিএএসপিআই দশমিক ১৪ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৬৮৯ দশমিক ৬৯ পয়েন্টে। সিএসই ৫০ সূচক দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, সিএসসিএক্স সূচক দশমিক ১৪ শতাংশ এবং সিএসআই সূচক দশমিক ২১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ১ হাজার ৩১১ দশমিক ৪৮ পয়েন্টে, ১১ হাজার ১৭২ দশমিক ৩১ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ১৭২ দশমিক ৩২ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই৩০ সূচক দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ এবং সিএসইএসএমইএক্স ১ দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ১৩ হাজার ৩৫৭ দশমিক ৪৪ পয়েন্টে এবং ২ হাজার ২৯২ দশমিক ৯০ পয়েন্টে।

Share this news