দেশের পুঁজিবাজার উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি

Date: 2023-02-24 16:00:14
দেশের পুঁজিবাজার উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেছেন, ‘‌সংশ্লিষ্ট আইনের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের পুঁজিবাজার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। একই সঙ্গে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্টে কাজ করতে হবে।’ এ সময় পুঁজিবাজারের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন ও টেকসই ত্বরান্বিত লক্ষ্যে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কসহ সহযোগিতা আরো বৃদ্ধির পরামর্শ দেন তিনি।ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনসের (আইওএসকো) এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল কমিটির (এপিআরসি) ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী সভার সমাপনী অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এ সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ও আইওএসকোর এপিআরসি ভাইস চেয়ার অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলিম উল্লাহ, আইওএসকো বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান ও এপিআরসির চেয়ার সেগুরু আরিজুমি এবং আইওএসকোর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল তাজিনদার সিংহ বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।আইওএসকোর এপিআরসির এ সভার মাধ্যমে দেশের পুঁজিবাজারের প্রতি বিদেশীদের আগ্রহ বাড়বে উল্লেখ করে ড. মসিউর রহমান বলেন,দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে অর্থায়নের উৎস ব‍্যাংকের মাধ‍্যমে সম্ভব না। পুঁজিবাজারই সন্দেহাতীতভাবে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্র। দেশের উদ্যোক্তারা তুলনামূলক ব্যাংকঋণে বেশি আগ্রহী। এ মনোভাব পাল্টানো গেলে সরকারের রাজস্ব ও মুদ্রানীতির সঙ্গে সংগতি রেখে পুঁজিবাজারও এগিয়ে যাবে।‘‌বাংলাদেশ আজ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ এবং আগামীতে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হবে। এমন সময়ে দেশে প্রথমবারের মতো আইওএসকোর এপিআরসি সভার আয়োজন দেশ ও আমাদের পুঁজিবাজারকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরো পরিচিতি বাড়াবে। একই সঙ্গে দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ও আস্থাও বাড়বে। এর মাধ্যমে বৈশ্বিক পুঁজিবাজারের নীতিনির্ধারণে বাংলাদেশের অংশগ্রহণও বৃদ্ধি পাবে।’অনুষ্ঠানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলিম উল্লাহ বলেন, ‘দেশের পুঁজিবাজার মূলধনি বাজারনির্ভর হলেও এখন কমোডিটি মার্কেটসহ নতুন অনেক পণ্য আসছে। উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশে পুঁজিবাজারের সম্ভাবনা অনেক। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।’ এ সময় তিনি আইওএসকো এপিআরসির মতো সভা বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হওয়া দেশের জন্য অত্যন্ত সম্মানের বলে মন্তব্য করেন।আইওএসকো বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান ও এপিআরসির চেয়ার সেগুরু আরিজুমি বলেন, ‘‌বিশ্বের অর্থনীতির অত্যন্ত সংকটের এ সময়ে বিশ্বের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ও বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় কাজ করছে। এপিআরসির মতো সভার মাধ্যমে এর সদস্যদের মাঝে এক থেকে অন্যদের শেখার ও বোঝার অসাধারণ সুযোগ তৈরি হয়েছে।’ বাংলাদেশে নিখুঁত এ সভা আয়োজনের জন্য তিনি বিএসইসি চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানান।আইওএসকোর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল তাজিনদার সিংহ বলেন, ‘‌আইওএসকো রঙে ভরা ক্যানভাস। এখানে বহু দেশ একত্র হয়ে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ করছে। বিশ্বের প্রায় ৯৫ ভাগ পুঁজিবাজার আইওএসকোর অন্তর্ভুক্ত। আমরা পুরো বিশ্বজুড়েই কাজ করি এবং আমাদের তৈরি করা মানদণ্ডই বিশ্বজুড়ে অনুসরণ করা হয়। আইওএসকো বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা, বাজারের বিশুদ্ধতা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।’অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘‌বাংলাদেশের শেয়ারবাজার অত‍্যন্ত সম্ভাবনাময়। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে কাজ করছে বিএসইসি। দেশে প্রথমবারের মতো আইওএসকো-এপিআরসির এ ধরনের সম্মেলন বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। ২০৩০ সালে বাংলাদেশ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দেশ হবে।’প্রথমবারের মতো ঢাকায় আইওএসকো-এপিআরসির দুদিনব্যাপী সভা শুরু হয় গত বুধবার। এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় অনুষ্ঠিত হয় সুপারভাইজরি পরিচালক সভা। যা শেষ হয় দুপুর ১২টায়। একই দিনে বেলা দেড়টায় শুরু হয় এনফোর্সমেন্ট পরিচালক সভা। যা শেষ হয় বিকাল ৪টায়। সভা দুটির সভাপতিত্ব করে বিএসইসির চেয়ারম্যান এবং আইওএসকো এপিআরসির ভাইস চেয়ার অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।সভা দুটিতে বাংলাদেশসহ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, হংকং, জাপান, ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, নেপালসহ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যান্য দেশের শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাসহ তাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সভায় সারা বিশ্বের শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো নিয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠান আইওএসকোর সচিবালয় ও স্পেনের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।পরের দিন বৃহস্পতবার সকাল ৯টায় শুরু হয় এপিআরসি পূর্ণাঙ্গ সভা। শেষ হয় বিকাল ৪টায়। এর মাধ্যমে দুইদিনব্যাপী সভার সমাপ্ত হয়। সভাটির উদ্বোধন করেন আইওএসকো-এপিআরসির চেয়ার শিগেরু আরিজুমি। ওই অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য ও সভার অলোচ্যসূচির অনুমোদন করেন শিগেরু আরিজুমি ও শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।এপিআরসির সভায় বাংলাদেশ, ভারত, হংকং ও সিঙ্গাপুরের প্রতিনিধিরা বিনিয়োগ শিক্ষা ও বিনিয়োগ আচরণ, নিয়ন্ত্রক প্রযুক্তি, অনলাইনে ব্রোকারেজ ও পরামর্শ পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তত্ত্বাবধান, নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানে তৃতীয় পক্ষের সেবা গ্রহণের সমস্যা ও সমাধান, বিনিয়োগকারীর সিদ্ধান্তের ওপর প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের মানের প্রভাব, যারা ভুয়া গ্রাহক হিসাব খুলে এর মাধ্যমে বাজার কারসাজি ও ইনসাইডার ট্রেডিং করে তাদের খুঁজে বের করার চ্যালেঞ্জ, সফিস্টিকেটেড সিন্ডিকেট কর্তৃক বিভিন্ন উপায়ে শেয়ারের বাজারমূল্য বৃদ্ধি ও তার ওপর নজরদারিসহ পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়।আইওএসকো প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালে। এর প্রধান কার্যালয় স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে। মূলত পুঁজিবাজারের উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, সক্ষমতা বাড়ানো, আন্তর্জাতিক মান প্রণয়ন ও মনিটরিং করাই আইওএসকোর কাজ। বর্তমানে আইওএসকোর এপিআরসির সাধারণ সদস্য সংখ্যা ২৪ ও সহযোগী সদস্য ৯। গত বছর ইলেকট্রনিক ভোটিংয়ে চীনের প্রার্থীকে পরাজিত করে আইওএসকোর এপিআরসির ভাইস চেয়ার নির্বাচিত হন বিএসইসি চেয়ারম্যান।

Share this news