চামড়াজাত পণ্যে আয় বাড়ল ১৭%

তৈরি পোশাক খাতের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি আয়ের খাত চামড়া, পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য। সদ্যোবিদায়ি অর্থবছরে (২০২২-২৩) চামড়া ও পাদুকা রপ্তানিতে আয় কমলেও বেড়েছে চামড়াজাত অন্যান্য পণ্যে। গেল অর্থবছরে বেল্ট, মানিব্যাগ, লেডিস ব্যাগ, পার্স, ছেলেদের ব্যাগ ও জ্যাকেট ইত্যাদি পণ্য থেকে আয় হয়েছে ৩৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেড়েছে।রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) বার্ষিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিদায়ি অর্থবছরে চামড়া, চামড়ার তৈরি জুতা ও চামড়াজাত অন্যান্য পণ্য থেকে মোট রপ্তানি আয় এসেছে ১২২ কোটি ডলার, যা আগের বছরে ছিল ১২৪ কোটি ৫১ লাখ ডলার।সেই হিসাবে মোট রপ্তানি আয় কমেছে ১.৭৪ শতাংশ। এর মধ্যে চামড়ার জুতা রপ্তানি থেকে আয় কমেছে ৬.৯৩ শতাংশ এবং চামড়ায় কমেছে ১৮.৪৫ শতাংশ। তবে চামড়াজাত অন্যান্য পণ্য থেকে আয় বেড়েছে ১৭ শতাংশ।লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিশেন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি মো. নাসিম মঞ্জুর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে কিছুটা আশার আলো দেখা গেলেও পুরো চামড়া খাতের কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা না গেলে সামনে আরো বেশি সংকট তৈরি হতে পারে। এ জন্য সরকারের নীতিনির্ধারকদের সাভারের চামড়া পল্লীর কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) পুরোপুরি কার্যকর করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনেই উদাহরণ রয়েছে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) সিইটিপি। ইউরোপের কারিগরি সহযোগিতাকে কাজে লাগানো যেতে পারে।’ এ ছাড়া বিশেষায়িত কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সদ্যোবিদায়ি অর্থবছরে চামড়া ও চমড়াজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ১২২ কোটি ডলার, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ১০২ কোটি ডলার। সে হিসাবে গত পাঁচ বছরে এ খাত থেকে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৯.৬০ শতাংশ।ইপিবির তথ্য মতে, গত পাঁচ বছরে চামড়াজাত পণ্যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬২.৫০ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চামড়াজাত পণ্য থেকে আয় হয়েছে ২৪ কোটি ৭২ লাখ ডলার; ২০১৯-২০ অর্থবছরে আয় হয়েছে ২২ কোটি ডলার; ২০২০-২১ অর্থবছরে আয় হয়েছে ২৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার; ২০২১-২২ অর্থবছরে আয় হয়েছে ২৮ কোটি ডলার এবং সদ্যোবিদায়ি অর্থবছরে (২০২২-২৩) আয় হয়েছে ৩৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার।আর চামড়া, পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য থেকে গত পাঁচ বছরে মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসেছে ১০২ কোটি ডলার; ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮০ কোটি; ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯০ কোটি; ২০২১-২২ অর্থবছরে ১২৪ কোটি ৫১ লাখ ডলার এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২২ কোটি ডলার এসেছে।এ বিষয়ে এলএফএমইএবির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. নাজমুল হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সদ্যোবিদায়ি অর্থবছরে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে তা দ্বিগুণ হতে পারত। যদি বৈশ্বিক মন্দা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব না পড়ত। সেই সঙ্গে সাভারের হেমায়েতপুরের ট্যানারি পল্লীর সিইটিপি পুরোপুরি কার্যকর থাকত। তার পরও চামড়াজাত পণ্যে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের ক্রেতা বাড়ছে। চীনবিমুখ ক্রেতারাও বাংলাদেশের প্রতি ঝুঁকছেন।’বেসরকারি সংস্থা গ্র্যান্ড ভিউ রিসার্চের তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে চামড়াজাত পণ্যের বৈশ্বিক বাজার ছিল ২৫ হাজার ৩৮২ কোটি ডলারের। প্রতিবছরই চামড়াজাত পণ্যের বাজার বাড়ছে। সেখানে বালাদেশের হিস্যা মাত্র ৩ শতাংশ।