ব্যয় বৃদ্ধির চাপে তালিকাভুক্ত চামড়া খাতের কোম্পানিগুলো
চলতি হিসাব বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিক ব্যবসায়িকভাবে ভালো যায়নি দেশের পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত চামড়া খাতের কোম্পানিগুলোর। যদিও বড় কোম্পানিগুলো এ সময়ে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ভালো আয় করেছে। তবে বিভিন্ন ধরনের ব্যয় বৃদ্ধির চাপে কর-পরবর্তী নিট মুনাফায় তেমন প্রবৃদ্ধি হয়নি। এমনকি লোকসান গুনতে হয়েছে কয়েকটি কোম্পানিকে। দেশের পুঁজিবাজারে চামড়া খাতের ছয়টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। সেগুলো হলো এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড, এপেক্স ট্যানারি লিমিটেড, বাটা সু কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড, ফরচুন সুজ লিমিটেড, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার লিমিটেড ও সমতা লেদার কমপ্লেক্স লিমিটেড। এর মধ্যে সমতা লেদার কমপ্লেক্স এখনো চলতি হিসাব বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।চলতি ২০২২-২৩ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এপেক্স ফুটওয়্যারের আয় হয়েছে ৪২৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ২৮১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটির আয় বেড়েছে ৫০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে এ মুনাফা ছিল ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা বেড়েছে ১০ দশামিক ৯২ শতাংশ। আলোচ্য প্রান্তিকে এর আগের হিসাব বছরের একই সময়ের তুলনায় যে হারে আয় বেড়েছে সে হারে নিট মুনাফা করতে পারেনি কোম্পানিটি। এর কারণ হিসেবে কোম্পানিটি জানিয়েছে, তাদের চলতি হিসাব বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে উৎসে করসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যয় বেড়েছে।তালিকাভুক্ত চামড়া খাতের আরেক কোম্পানি এপেক্স ট্যানারির চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে বিক্রি হয়েছে ২৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে বিক্রি ছিল ২৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটির বিক্রি কমেছে ১৫ দশমিক ২২ শতাংশ। বিক্রি কমার পাশাপাশি রাসায়নিক খরচ ও বিক্রি বাবদ কমিশন বৃদ্ধি পাওয়ায় আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানিটিকে লোকসান গুনতে হয়েছে। প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যেখানে কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছিল ১৪ লাখ টাকা।তালিকাভুক্ত চামড়া খাতের বহুজাতিক কোম্পানি বাটা সুর হিসাব বছর গণনা করা হয় জানুয়ারি-ডিসেম্বর সময়ে। কোম্পানিটি সর্বশেষ চলতি ২০২২ হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির আয় হয়েছে ২১৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ১৪২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির আয় বেড়েছে ৫১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আয় বাড়লেও আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানিটি নিট লোকসান থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি। আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে এ লোকসান ছিল ১১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। তবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট লোকসান কমেছে ৪৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ। তবে চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) কোম্পানিটি কর-পরবর্তী নিট মুনাফায় ফিরেছে। আলোচ্য তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির নিট মুনাফা হয়েছে ২৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে নিট লোকসান হয়েছিল ১৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। চলতি ২০২২-২৩ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে চামড়া খাতের আরেক কোম্পানি ফরচুন সুজের কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে এ মুনাফা হয়েছিল ১৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে ৭ দশমিক ৯২ শতাংশ। আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ১৩ পয়সা। যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ইপিএস ছিল ১ টাকা ২৩ পয়সা।তালিকাভুক্ত চামড়া খাতের আরেক কোম্পানি লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে বিক্রি হয়েছে ৫ লাখ টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে বিক্রি ছিল ৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটির বিক্রি কমেছে ৯৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। বিক্রি কমার পাশাপাশি বিভিন্ন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানিটিকে লোকসান গুনতে হয়েছে। চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ৮১ লাখ টাকা। এর আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যেখানে কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছিল ৭ লাখ টাকা।