ব্যক্তিস্বার্থে শত শত কোটি টাকার যাচ্ছেতাই বিনিয়োগ : আদায় নিয়ে শঙ্কা
![ব্যক্তিস্বার্থে শত শত কোটি টাকার যাচ্ছেতাই বিনিয়োগ : আদায় নিয়ে শঙ্কা](https://stocknewsbd.s3.ap-southeast-1.amazonaws.com/4503/2222.jpg)
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স দীর্ঘদিন ভালো ব্যবসা করে আসছিল। কিন্তু কোম্পানিটির শত শত কোটি টাকা পরিচালনা পর্ষদের ব্যক্তিস্বার্থে যাচ্ছেতাই বিনিয়োগে এখন মন্দাবস্থায় নামিয়ে এনেছে। যেসব টাকা চুক্তি ছাড়াই বিনিয়োগের নামে পরিচালকদের কোম্পানিতে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন দীর্ঘসময় ধরে তা আদায় হচ্ছে না। যা আদায়ের সম্ভাবনা নিয়ে দেখা দিয়েছে বড় শঙ্কা। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তা নিয়ে কোন সঞ্চিতি (প্রভিশনিং) গঠন করে না। এতে করে মুনাফা ও সম্পদ যেমন বেশি করে দেখানো হচ্ছে, একইভাবে আড়াল করা হচ্ছে কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা বা দূর্বলতা।কোম্পানিটির সবশেষ আর্থিক হিসাবে নিরীক্ষকের তথ্যে এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।বীমা কোম্পানিটি থেকে সাবসিডিয়ারি প্রাইম ইসলামী লাইফ সিকিউরিটিজে ১৪৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, পিএফআই সিকিউরিটিজে ১৬৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা, বাংলালায়নে ৫ কোটি টাকা ও স্টারলিঙ্ক গ্রুপের ৪ কোম্পানিতে ১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এই ৩৩২ কোটি ৩৭ লাখ টাকার বিনিয়োগকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।নিরীক্ষক জানিয়েছেন, প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স থেকে সাবসিডিয়ারি কোম্পানি প্রাইম ইসলামী সিকিউরিটিজে ৬৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এতে করে কোম্পানিটিতে ১৯ কোটি ৩০ লাখ টাকার লভ্যাংশ পাওনা হয়েছে। যা ২০১৮ সাল থেকে দেখিয়ে আসছে বীমা কোম্পানিটি। তবে ওই লভ্যাংশের মধ্যে সর্বশেষ বছরে ১ কোটি টাকা সংগ্রহ হয়েছে। বাকি অংশ আদায় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন নিরীক্ষক। কারন ব্রোকারেজ হাউজটি সর্বশেষ ২ বছর লোকসান গুণেছে।এছাড়া সাবসিডিয়ারি কোম্পানিটিতে ৮৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ করেছে। যদিও প্রকৃত বিনিয়োগ ৭৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এর বিপরীতে পাওয়া লভ্যাংশের ১১ কোটি ১৫ লাখ টাকা চুক্তি অনুযায়ি মূলধনে রূপান্তর করা হয়েছে। আর ৩ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। বাকি টাকা বিনিয়োগ দেখিয়ে আসছে। কিন্তু ওই বিনিয়োগের বিপরীতে রিটার্ন নিয়ে স্বচ্ছ কোন চুক্তি নেই বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।এদিকে বীমা কোম্পানিটি থেকে বাংলালায়নের জিরো কূপন বন্ডে ২০১৩ সালে (১০% কনভার্টঅ্যাবল) ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। যে অর্থ আদায় নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নিরীক্ষক। তারপরেও কোম্পানিটির এর বিপরীতে কোন প্রভিশনিং গঠন করা হয়নি। এতে করে মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখিয়েছে প্রাইম ইসলামী লাইফ।এছাড়া বীমা কোম্পানিটি থেকে পিএফআই সিকিউরিটিজে ১৬৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ করা হয়েছে। যে অর্থ ২০১৮ সাল থেকে আর্থিক হিসাবে দেখিয়ে আসছে। যে বিনিয়োগের বিপরীতে প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোন লিখিত চুক্তি করেনি। এছাড়া ওই অর্থ আদায় না হওয়া সত্ত্বেও কোন প্রভিশনিং গঠন না করে মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখিয়ে আসছে। তবে বীমা কোম্পানিটি থেকে ওই অর্থ আদায়ে পিএফআই সিকিউরিটিজে বিরুদ্ধে উচ্চ-আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।আর্থিক হিসাবে বীমা কোম্পানিটি থেকে স্টারলিং গ্রুপের ৪ কোম্পানিতে ১৫ কোটি টাকা স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ দেখিয়েছে। যা ২০১৮ সাল থেকে দেখিয়ে আসছে এবং ওই বিনিয়োগের বিপরীতে কোন লিখিত চুক্তি নেই। তারপরেও কোন প্রভিশনিং না করে মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখিয়ে আসছে। তবে কোম্পানিটি থেকে স্টারলিং গ্রুপের বিরুদ্ধে ওই বিনিয়োগ আদায়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে।উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া প্রাইম ইসলামী লাইফের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৩০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এরমধ্যে ৬৩.৯২ শতাংশ মালিকানা রয়েছে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদের হাতে। মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) লেনদেন শেষে কোম্পানিটির শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৫৯.২০ টাকায়।