ব্যবসা দূর্বল হলেও চলছে খেলাধুলা, বিনিয়োগ ফেরতে লাগবে ২৯৯ বছর

Date: 2022-09-28 03:00:09
ব্যবসা দূর্বল হলেও চলছে খেলাধুলা, বিনিয়োগ ফেরতে লাগবে ২৯৯ বছর
শেয়ারবাজারে গেম্বলিং আইটেমে পরিণত হওয়া ওরিয়ন ইনফিউশনের ব্যবসা ও মুনাফা আহামরি কিছু না। তবে কৃত্রিমভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দর আকাশচুম্বি করা হয়েছে। যার সঙ্গে বাস্তবতার কোন মিল নেই। ফলে কারসাজি ছাড়া কোম্পানির ব্যবসা দিয়ে আড়াইশ বছরেও বর্তমান দরের বিনিয়োগ ফেরত পাওয়া যাবে না।দূর্বল মুনাফার ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার কয়েক মাস ধরে টানা হল্টেড বা সর্বোচ্চ সীমায় দর বৃদ্ধি হচ্ছে। তবে ব্যবসা দূর্বল হওয়ার কারনে কোম্পানিটি থেকে বর্তমান বিনিয়োগই ফেরত পেতে অপেক্ষা করতে হবে ২৯৯ বছর। যদি শেয়ারটির দর আরও বাড়ে, তাহলে এরচেয়ে বেশি অপেক্ষা করতে হবে। যে কোম্পানিটিতে বিনিয়োগে মূল্য-আয় (পিই) অনুপাত ঝুকিঁপূর্ণ বিবেচনায় মার্জিন ঋণ অযোগ্য হয়ে পড়েছে।বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মূল্য-আয় অনুপাত (পিই রেশিও) বিশ্লেষণ একটি অন্যতম হাতিয়ার। যার মাধ্যমে সহজেই বোঝা যায় বিনিয়োগ ফেরত পেতে কত সময় লাগবে। এই পদ্ধতিতে ওরিয়ন ইনফিউশন থেকে বিনিয়োগ ফেরত পেতে লাগবে ২৯৯ বছর।দেখা গেছে, ২৭ সেপ্টেম্বর লেনদেন শেষে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৫৭০.৪০ টাকা। আর কোম্পানিটির ২০২১-২২ অর্থবছরের ৯ মাসে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১.৪৩ টাকা। এ হিসাবে বছরে ইপিএস হবে ১.৯৯ টাকা। যাতে করে ৫৭০.৪০ টাকার বিনিয়োগ ফেরতে লাগবে ২৯৯ বছর।তবে কোম্পানির ভিত্তি ছাড়াও অনেক সময় দূর্বল কোম্পানির শেয়ার থেকে কারসাজির মাধ্যমে মুনাফা করা যায়। সেক্ষেত্রে একটি পক্ষ লাভবান হলেও অন্য একটি পক্ষকে বড় লোকসান গুণতে হয়। আর সেই দলে থাকে সাধারন বিনিয়োগকারীরা। যারা আবার এজন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে শুরু করে সরকারকে দোষারোপ করে থাকে। অথচ তাকে ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ার কিনতে কেউ বাধ্য করে না।অথচ কোম্পানিটির অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি নিয়ে কয়েক দফায় সতর্ক করেছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ। তারা গত ২ মাসে ৪ দফায় শেয়ারটির দর বৃদ্ধির পেছনে কোন কারন নেই বলে জানিয়েছে। এরমধ্যে গত ৪ আগস্ট, ২৮ আগস্ট, ৩০ আগস্ট ও ২০ সেপ্টেম্বর সতর্ক করেছে তারা।ডিএসই ছাড়াও বাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে শেয়ারটির অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ ও সাধারন বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া নিয়ে ভয় দেখা গেছে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ আল-আমিন বলেন, গত ২ মাসে ১টি কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ল ৪৫৭%। এটা কি বাজার সাপোর্ট করে? এটা কি স্বাভাবিক? যদি না হয়ে থাকে, তাহলে এই দর বৃদ্ধিতে কারা ভূমিকা রাখল, তাদের খুজে বের করতে হবে। কারন এমন অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির শেয়ারেই পরবর্তীতে সাধারন বিনিয়োগকারীরা আটকে যায়।এমন অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি পাওয়া ওরিয়ন ইনফিউশনের ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৬১ কোটি ২২ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি থেকে ২ কোটি ৯১ লাখ টাকার নিট মুনাফা হয়েছে। এতে করে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১.৪৩ টাকা। যে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ (এনএভিপিএস) রয়েছে মাত্র ১৩.৫৫ টাকার।দেখা গেছে, গত ১৯ জুলাই ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার দর ছিল ৯৮.৪০ টাকা। যে শেয়ারটি ২৭ সেপ্টেম্বর লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৫৭০.৪০ টাকায়। এরমধ্যে গত ২১ সেপ্টেম্বর শেয়ারটি ৬০০ টাকার উপরে উঠেছিল।গেম্বলারদের পক্ষে শেয়ারটির এই অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি সহজ হওয়ার পেছনে কারন হিসেবে রয়েছে স্বল্পমূলধন। ২০ কোটি ৩৬ লাখ টাকার স্বল্পমূলধনী ওরিয়ন ইনফিউশনের ২ কোটি ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৭৬০টি শেয়ার রয়েছে। এরমধ্যে ফ্রি ফ্লোট বা লেনদেনযোগ্য শেয়ারের সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ ৯১ হাজার ৬৬১টি বা ৫৯.৩৯%।

Share this news