ব্যাংক ঋণে সুদহার বাড়লে কার লাভ কার ক্ষতি?
![ব্যাংক ঋণে সুদহার বাড়লে কার লাভ কার ক্ষতি?](https://stocknewsbd.s3.ap-southeast-1.amazonaws.com/6611/bank-2.jpg)
:বাংলাদেশে দীর্ঘ দিন ধরে ৬-৯ শতাংশ হারে যে সুদহার চলমান রয়েছে সেখান থেকে সরে এসে সুদের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়ার প্রভাব খুব বেশি প্রতীয়মান হবে দুটি ক্ষেত্রে। একটি হচ্ছে মূল্যস্ফীতি এবং আরেকটি বিনিয়োগ। এই দুই ক্ষেত্রেই সুদের হার বাড়ার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ইতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ীদের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হবে এবং এই সময়ে সুদের হার বাড়ানো কোন ভাবেই উচিত হবে না বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী নেতারা।এর আগে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থা আইএমএফ এর কাছ থেকে ঋণ নেয়ার সময়ও শর্ত হিসেবে সুদের হার বাড়ানোর কথা বলেছিলে। দ্রব্যমূল্য ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবার পরেও সুদের হার বাড়ানোর বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখনে সে অবস্থান পরিবর্তন করে সুদের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা আগামী জুলাই মাস থেকে কার্যকর হবে।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, বর্তমানে মুদ্রা বাজার পরিস্থিতির কারণে সুদের হারও ব্যাপকভাবে উঠানামা করছে। ফলে নির্ধারিত সুদ হার দিয়ে মুদ্রা বাজারের সাথে তাল মেলাতে পারছে না ব্যাংকগুলো। এজন্য সুদের হার পরিবর্তন করতে হচ্ছে।মূল্যস্ফীতি কমবেসুদের হার কম থাকলে ব্যাংক ঋণ নিতে আগ্রহী হয় গ্রাহকরা। ফলে কম সুদে ঋণ নিলে বাজারে অর্থের যোগান বাড়ে। কিন্তু ব্যাংকে আমানত বা সঞ্চয় বাড়ে না। ফলে দেখা দেয় মূল্যস্ফীতি। এই মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতেই সুদের হার বাড়ানো হয়, যাতে ঋণ নিতে মানুষ কম আগ্রহী হয় এবং বাজারে অর্থের যোগান কমে।বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮.৭৮ শতাংশ। এর আগে ২০২২ সালের অগাস্টে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশে রেকর্ড ৯.৫ শতাংশ হয়েছিল। এটি গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল।এর আগে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর ও এর আগে মে মাসে রেপো সুদহার (যে হারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেয়) বাড়িয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই মুহুর্তে সুদের হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নির্ধারণ করা আছে।এই মূল্যস্ফীতির কথা মাথায় রেখেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থার শর্ত সত্ত্বেও এতোদিন ব্যাংক ঋণের সুদের হার না বাড়িয়ে বরং তা ৯ শতাংশে নির্ধারিত করে রেখেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।সুদের হার বাড়লে তা আসলে পক্ষান্তরে মূল্যস্ফীতি কমাতে ভূমিকা রাখে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়লে ঋণের চাহিদা কমে যায়। আর ঋণের চাহিদা কমে গেলে সামষ্টিকভাবে চাহিদা কমে। এ কারণে মূল্যস্ফীতির উপর একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। ব্যাংকে যদি পর্যাপ্ত ঋণের সুবিধা থাকে তাহলে বিনিয়োগ বাড়বে। একই সাথে আমদানিও বাড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতবিদরা।উদোক্তারা বেশি ঋণ পেলে সেই ঋণ বেশি বিনিয়োগ করে যন্ত্রপাতি, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ, সিমেন্ট, লোহার মতো কাঁচামাল আমদানির জন্য। ফলে এটি উৎপাদন ব্যবস্থাকে গতিশীল করে। আর সার্বিকভাবে উৎপাদন বাড়লে তা মূল্যস্ফীতি কমিয়ে দেয় বলে জানান তারা।বিনিয়োগ নিয়ে দ্বিমতবিশ্বজুড়ে জ্বালানির দাম বেড়েছে এবং দেশে মূল্যস্ফীতিও রয়েছে। গত ছয় মাসে ডলারের বিপরীতে টাকার ব্যাপক দরপতন হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা এ পরিস্থিতির খেসারত দিচ্ছেন। সুদের হার বাড়ানো হলে তাদের ব্যবসার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে তারা মনে করছেন।ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা প্রথমে ব্যাংকের চলমান খারাপ অবস্থার উন্নয়ন চান। এর পর ব্যাংকগুলো সিদ্ধান্ত নেবে যে তারা সুদের হার বাড়াতে চায় নাকি চায় না।বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্বল্প মেয়াদে কিছু নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সুদের হার যদি নয় শতাংশ নির্ধারণ করে রাখা হয় তাহলে ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণদানে আগ্রহ হারায়। কারণ এ খাতে ঋণ দিতে গেলে তাদের ব্যয় বেশি হয় যা নয় শতাংশ সুদ দিয়ে পোষানো যায় না।