বিটকয়েন: ধরাছোঁয়ার বাইরে যে মুদ্রা!

Date: 2023-06-14 18:00:17
বিটকয়েন: ধরাছোঁয়ার বাইরে যে মুদ্রা!
বিটকয়েন কি?বিটকয়েন কী?-এ প্রশ্নটি অনেকের কাছেও শোনা যায়। তাকীর একই প্রশ্ন। সে ইন্টারনেট থেকে খুঁজে দেখল, বিটকয়েন কী। চলুন আমরাও জেনে নিই, বিটকয়েন কি সে সম্পর্কে। বিটকয়েন তৈরি করা হয় ২০০৯ সালে। সাতোশি নাকামোতো নামক এক ব্যক্তিকে বিটকয়েনের স্রষ্টা বলা হয়। কিন্তু তাকী আশ্চর্য হয়ে দেখল যে এখনো পর্যন্ত উনার পরিচয় রহস্যাবৃত! তাকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি! অবশ্য বিটকয়েন কি প্রশ্নের উত্তর পেয়ে, এরপর ১ বিটকয়েন সমান কত টাকা লিখে সার্চ করলো।বিটকয়েনের দাম দেখে তাকীর উৎসাহ আরও বেড়ে গেল! সে নেট ঘেঁটে দেখতে পেল যে একটি বিটকয়েনের মূল্য ২,১৬১,০২২.৫১ ডলার। তবে, বিটকয়েন এর দাম অনেক ওঠানামা করে। এরপর তাকী জানতে চাইল যে বিটকয়েন আসলে কীভাবে তৈরি হয়। বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে, সেটা জানতে গিয়ে সে দেখল যে বিটকয়েনের অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, এই মুদ্রা কাগজে ছাপা হয় না কিংবা সোনা, রূপা অথবা তামা দিয়েও এই কয়েন বানানো হয় না। প্রকৃতপক্ষে বিটকয়েন একটি ডিজিটাল মুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সি যা দিয়ে শুধু অনলাইনেই বেচাকেনা করা যায়। বিটকয়েন আরও হরেক রকম দিক থেকে অনন্য।কোন রাষ্ট্র বিটকয়েনের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ নয়, ফলশ্রুতিতে বিটকয়েনকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোন সর্বস্বীকৃত সংস্থাও নেই। তার মানে হচ্ছে কখন, কতগুলো বিটকয়েন বানানো হবে, বাজারে বিদ্যমান বিটকয়েন কোথায় রয়েছে অথবা বিটকয়েন জালিয়াতি দেখার জন্য কেউ নেই। বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে সে সম্বন্ধে প্রাথমিক ধারণা পাওয়ার পর তাকীর মনে হল যে ঠিক কীভাবে বিটকয়েন বিনিময় হয়, বিটকয়েন বেচাকেনা শুরু করার আগে সেটাও জানা দরকার!বিটকয়েন এর ইতিহাসসাইবারপাঙ্ক নামের একটি জনগোষ্ঠীর উদ্ভব হলো ১৯৮০’র দশকে। সরকার ও প্রশাসনবিরোধী একটা মনোভাব নিয়েই এটি তৈরি হয়। এদের মধ্যে একটি ধারণা তৈরি হয় যে, সরকারের বা প্রশাসনের হাতে অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ থাকলে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। কেননা সরকার প্রায়শই সবকিছুতে নজরদারী করে থাকে। ফলে এই গোষ্ঠীটি অর্থ লেনদেনে ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দেয়। সেই পদ্ধতির উপর ভিত্তি করেই বর্তমানের এই বিটকয়েন। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে পুরো বিশ্বেই অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়। ওই সময়ই একটি থিসিস পেপার এর আবির্ভাব হয় যার শিরোনাম ছিলোবিটকয়েন: আ পিয়ার-টু-পিয়ার ক্যাশ সিস্টেম। এই পেপার এর লেখক ছিলেন সাতোসি নাকামোতো ছন্দনামের এক ব্যক্তি। নাকামোতো তার এই ৯ পৃষ্ঠার পেপারে বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। কিভাবে কোন প্রকার অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সাহায্য ছাড়া সরাসরি এই ডিজিটাল মূদ্রা একে অপরের কাছে আদান প্রদান করতে সক্ষম। নাকামোতো সাইবারপাঙ্কের সেই ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে।বিটকয়েন বিনিময় পদ্ধতিবিটকয়েনকে অনেক সময় পৃথিবীর সর্বপ্রথম ক্রিপ্টোকারেন্সি হিসেবে অভিহিত করা হয়। বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে? বিটকয়েনের মত ক্রিপ্টোকারেন্সির বিনিময় হয় কম্পিউটারের পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। এই নেটওয়ার্কের মুখ্য উদ্দেশ্যই হচ্ছে ডাটা শেয়ার করা। এই ডাটা হরেক রকমের হতে পারে। যেমন: চলচিত্র, গান, ডকুমেন্ট প্রভৃতি। তাকী তখন কিছুটা দ্বিধায় ভুগতে শুরু করল। ডিজিটাল ডাটা নকল করা সম্ভব, তাহলে কি নকল বিটকয়েনও বানানো সম্ভব? কিন্তু তাকীর সেই দুশ্চিন্তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না। বিটকয়েন ডিজিটাল মুদ্রা হওয়ার পরও যে কেউ চাইলেই নকল বিটকয়েন তৈরি করে জালিয়াতি করতে পারে না। তার মূল কারণ হচ্ছে কোন ভিডিও বা অডিও ফাইলের মত বিটকয়েন চাইলেই নকল করা যায় না।আদতে বিটকয়েন ব্লকচেইন নামক একটি বিশাল বৈশ্বিক ডাটাবেজের একটি এন্ট্রি। ব্লকচেইন বিটকয়েনের সমস্ত বিনিময়ের হিসাব রাখে। এখন পর্যন্ত ব্লকচেইনে ১৪৮,৯৪৫ মেগাবাইট ডাটা জমা হয়েছে।কিন্তু এই ব্লকচেইনের হিসাব কে রাখে? তাকী দেখেতে পেল যে যেহেতু বিটকয়েনের কোন নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ নেই, সেহেতু ব্লকচেইনের হিসাব রাখার জন্যও কোন স্বীকৃত কর্তৃপক্ষ নেই। বিটকয়েন অ্যাকাউন্ট (যাকে “ওয়ালেট” বলা হয়)-এর মধ্যে বিনিময়ের হিসাব রাখার কাজটি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষেরা করে থাকেন। তাকী ঠিক করল সেও বিটকয়েন বিনিময়ের হিসাব রাখবে। সে প্রথমেই একটি বিশেষ ধরণের সমস্যা সমাধানকারী কম্পিউটার কিনে ফেলল। তারপর, নিজের বাসার ছাদে একটি শক্তিশালী সোলার প্যানেল বসিয়ে দিল। কারণ, এই কম্পিউটারগুলো ব্যবহার করতে প্রচুর বিদ্যুৎ শক্তি প্রয়োজন হয়। তাকীর পক্ষে বিদ্যুৎ বিল দিয়ে এই খরচ চালানো সম্ভব নয়। তার চেয়ে নিজস্ব সোলার প্যানেল দিয়ে সে অনেক অর্থ সাশ্রয় করতে পারবে।এবার তাকী কম্পিউটারে বসে হিসাব রাখা শুরু করল। বিটকয়েনের যখন বিনিময় হয়, তখন বিনিময়কারীরা সেই বিনিময়ের ঘোষণা দেন এবং তাকীর মত হিসাবরক্ষকেরা ব্লকচেইনে সেই তথ্যটি হালনাগাদ করে। অনেকে একই তথ্য হালনাগাদ করার ফলশ্রুতিতে দেখা যায় যে কেউ যদি জালিয়াতি করার চেষ্টা করে, সেই চেষ্টা ধরা পড়ে যায়। তথ্য হালনাগাদ করতে করতে তাকীর প্রথম ব্লক যখন পূরণ হয়ে গেল, তখন সে নতুন ব্লক ব্যবহার করা শুরু করল। এভাবে একের পর এক ব্লক ব্যবহার করে তাকী তথ্যের ব্লকচেইন বানাতে লাগল। তাকী ব্লকচেইন হালনাগাদ করার সময় বিটকয়েন বিনিময়ের তিনটি বিষয়কে লিপিবদ্ধ করে থাকে। যথা:প্রেরকের ওয়ালেট নম্বরপ্রাপকের ওয়ালেট নম্বরকয়টি বিটকয়েন পাঠানো হচ্ছেকিন্তু এত মানুষের কাছে অ্যাকাউন্ট নম্বরের তথ্য থাকা তাকীর কাছে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে হল। যে কেউ চাইলেই আরেকজনের বিটকয়েন ওয়ালেট থেকে নিজের ওয়ালেটে বিটকয়েন পাঠিয়ে দিতে পারে। একদিন টিএসসিতে চা খেতে খেতে এই ঝুঁকির কথা সে নাহিয়ান ভাইকে বলল। তখন নাহিয়ান ভাই ওকে বললেন, “এই ঝুঁকি এড়ানোর জন্যই ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবহার করা হয় এবং এজন্যই বিটকয়েনকে একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি বলা হয়।” তাকী: “কিন্তু ভাই, এই ক্রিপ্টোগ্রাফি কীভাবে কাজ করে?” নাহিয়ান ভাই: “বিটকয়েনের ওয়ালেটের ক্ষেত্রে দুইটি চাবি/কী ব্যবহার করা হয়। একটি হচ্ছে প্রাইভেট কী এবং অপরটি হচ্ছে পাবলিক কী। এই চাবি দুইটি অনন্য এবং এর দ্বারাই বিটকয়েনের বিনিময়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়। ধরা যাক, আমি বিটকয়েনের ডাটা পাঠাব, প্রাইভেট কী দিয়ে আমি সেই ডাটা চিহ্নিত করে দিব।পরবর্তীতে আমার পাবলিক কী দিয়ে ডাটাটি যাচাই করা হয়, যদি প্রাইভেট কীর চিহ্ন এবং পাবলিক কীর চিহ্ন মিলে যায়, তাহলে সবাই বুঝতে পারবে যে ডাটাটি আসলেই আমি পাঠিয়েছি। এই দুইটি চাবির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে ক্রেডিট কার্ড নাম্বার অথবা স্বাক্ষরের মত এটি নকল করা যায় না।” তাকী: “বাহ! যাক, দুশ্চিন্তা মুক্ত হলাম!” নাহিয়ান ভাই: “হ্যাঁ, বিটকয়েন চুরি করা প্রায় অসম্ভবই বলা চলে। বিটকয়েনের তুমুল জনপ্রিয়তার পেছনে এটাও একটা কারণ।”

Share this news