বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে জেএমআই সিরিঞ্জের প্রতারণা
মুনাফার ১০ কোটি টাকার মধ্যে ১ পয়সাও বিনিয়োগকারীদের দেবে না পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেএমআই সিরিঞ্জ অ্যান্ড মেডিকেল ডিভাইস লিমিটেড। ফলে নগদ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হয়ে ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। বিনিয়োগকারীরা বলেন, বিতর্কিত এ কোম্পানি প্রতারণা করেছে।বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। অবশ্য কোম্পানি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য বলছে ভিন্ন কথা। কর্তৃপক্ষের দাবি, বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা নয় বরং নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা পরিপালনের জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।কোম্পানির তথ্য মতে, ২০১৩ সালে তালিকাভুক্ত জেএমআই সিরিঞ্জ জুলাই ২০২১ থেকে ৩০ জুন ২০২২ সালে কর পরবর্তী মুনাফা করেছে ১০ কোটি ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৭৩৫ টাকা। এর আগের বছর মুনাফা করেছিল ৮ কোটি ৯১ লাখ ৮ হাজার ৭২৯ টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে ১ কোটি ১৪ লাখ ৮৯ হাজার ৬ টাকা মুনাফা বেড়েছে।মুনাফা বাড়লেও বিনিয়োগকারীদের এক পয়সাও নগদ লভ্যাংশ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানির পর্ষদ। শুধু তাই নয়, জরিমানা দিয়ে হলেও ৩৬ শতাংশ বোনাস শেয়ার (৭ কোটি ৯৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা) লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পর্ষদ।এ বিষয়ে কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ তারেক হোসাইন খান বলেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা প্রতিপালনের জন্য আমরা মূলধন ৫০ কোটি টাকায় উন্নীত করব। এ জন্য মুনাফা ও রিজার্ভের অর্থ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের যোগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাই বিনিয়োগকারীদের নগদ লভ্যাংশ দেওয়া হবে না।সূত্র মতে, ওষুধ খাতের কোম্পানিটির বর্তমান পরিশোধিত মূলধন ২২ কোটি ১০ লাখ টাকা। ৫০ কোটি টাকায় উন্নীত করতে আরও ২৮ কোটি টাকার প্রয়োজন। সে জন্য কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ৩০ কোটি টাকা মূলধন বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে ২০২২ সালের মুনাফার ১০ কোটি টাকা। এছাড়াও ৩৬ শতাংশ বোনাস শেয়ার (প্রায় ৮ কোটি টাকা) লভ্যাংশ দিয়ে টাকা উত্তোলন করে মূলধন বৃদ্ধি করবে।এদিকে নগদ লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে হতাশ হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। ফলে ৫১১ টাকা থেকে গত ১৮, ১৯ এবং ২০ অক্টোবর তিন দিনে শেয়ারের দাম ৩৮ টাকা ৩০ পয়সা কমে ৪৭২ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।শেলটেক ব্রোকার হাউজের বিনিয়োগকারী নূর মোহাম্মদ হানিফ বলেন, কোম্পানিটি গত বছর ৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। এ বছরও আগের বছর চেয়ে ভালো মুনাফা হয়েছে শুনে শেয়ার কিনেছি। কিন্তু ১৭ অক্টোবর কোম্পানির পর্ষদ সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, নগদ লভ্যাংশ দেবে না। এটা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা।সাদ সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী আনিছুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভালো লভ্যাংশ পাওয়ার আশায় ২০ হাজার শেয়ার কিনেছি, কিন্তু এখন দেখলাম কোনো নগদ লভ্যাংশ দেবে না, হতাশ হয়েছি।তিনি বলেন, বিএসইসির সম্প্রতি বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেওয়াকে নিরুৎসাহিত করেছে। তারপরও এমন সিদ্ধান্ত কখনো প্রত্যাশা করিনি।পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, কী কারণে বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিচ্ছে এটি বিএসইসিকে খতিয়ে দেখা উচিত। যৌক্তিক কারণ না থাকলে বোনাস শেয়ারের প্রস্তাব বাতিল করা উচিত।এ বিষয়ে কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ তারেক হোসাইন খান বলেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা প্রতিপালনের জন্য আমরা মূলধন ৩০ কোটি টাকায় উন্নীত করব। তাই বিনিয়োগকারীদের নগদ লভ্যাংশ না দিয়ে বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছে। এই শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।সূত্র মতে, ওষুধ খাতের কোম্পানিটির বর্তমান পরিশোধিত মূলধন ২২ কোটি ১০ লাখ টাকা। ৩০ কোটি টাকায় উন্নীত করতে আরও ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকার প্রয়োজন। সে জন্য কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ২০২২ সালের মুনাফার ১০ কোটি টাকার ৩৬ শতাংশ বোনাস শেয়ার (প্রায় ৮ কোটি টাকা) লভ্যাংশ দিয়ে টাকা উত্তোলন করে মূলধন বৃদ্ধি করবে।নিয়ম অনুসারে, বোনাস শেয়ার ঘোষণা করায় জেএমআই সিরিঞ্জকে ৭ কোটি ৯৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার উপরে ১০ শতাংশ হারে ৭৯ লাখ ৫৬ হাজার টাকার অতিরিক্ত ট্যাক্স প্রদান করতে হবে। যা কোম্পানিটির ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সমান।এদিকে অর্থ আইন, ২০১৯ এর মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন ধারা ১৬ সংযোজন করা হয়েছে। এ ধারা অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত কোম্পানিকে স্টক ডিভিডেন্ডের কমপক্ষে সমপরিমাণ ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করতে হবে। যদি স্টক ডিভিডেন্ড প্রদানের পরিমাণ ক্যাশ ডিভিডেন্ডের চেয়ে বেশি হয় তাহলে যে পরিমাণ স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান করা হবে বা হয়েছে তার পুরোটার উপরে ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে। কোম্পানিকে সংশ্লিষ্ট কর বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিলের পূর্বে পরিশোধ করতে হবে। এ কর কোম্পানি অন্য কোনো কর দায়িতার সঙ্গে সমন্বয় করা যাবে না।সুতরাং পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে কমপক্ষে বোনাস লভ্যাংশের সমপরিমাণ নগদ লভ্যাংশ দিতে হবে। যদি বোনাসের পরিমাণ নগদের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে পুরো বোনাস শেয়ারের উপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে।