বিএসইসির নতুন সিদ্ধান্ত শেয়ারবাজারে তারল্য বাড়াবে

অর্থনৈতিক নানা উৎকণ্ঠার কারণে দেশের প্রধান অর্থনীতির চালিকা শক্তি শেয়ারবাজারও খারাপ হতে শুরু করে। শেয়ারবাজারের পতন অধিক থেকে অধিকতর হওয়ার আগেই বেঁধে দেওয়া হয়েছে ফ্লোর প্রাইস। এই ফ্লোর প্রাইস বড় ধরণের পতন থেকে শেয়ারবাজারকে রক্ষার উদ্দেশ্যেই দেওয়া হয়েছে। যা শেয়ারবাজার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বড় ধরনের স্বস্তি হিসাবে দেখা দিয়েছে। তবে এই ফ্লোর প্রাইসও এক সময়ে এসে বিনিয়োগকারীদের অসন্তষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।ফ্লোর প্রাইস আরোপের কারণে বিনিয়োগকারীরদের এখন অর্থের প্রয়োজন হলেও, ফ্লোর প্রাইসে শেয়ার আটকে থাকার কারণে শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না। আবার চাইলেও ফ্লোর প্রাইসের শেয়ার বিক্রি করে অন্য কোন শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারছেন না। এতে করে বিনিয়োগকারীরা এই ফ্লোর প্রাইসের শেয়ার নিয়ে এখন রীতিমতো বিরক্তি বোধ করছেন।এছাড়াও, বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং শেয়ারবাজারের খারাপ অবস্থার কথা চিন্তা করে অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজার থেকে সাইড লাইনে অবস্থান করছেন। যেহেতু বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে অবস্থান করছে, তাই এখনই কোনো বিনিয়োগকারী নতুন করে বাজারে বিনিয়োগ করছেন না। তারা অপেক্ষা করছেন একটি সুযোগের জন্য।এদিকে ক্রমাগত ফ্লোর প্রাইসে ফেরা কোম্পানির শেয়ার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আর কয়েকদিন চলমান থাকলে লেনদেন প্রায় বন্ধের কাছাকাছি পৌঁছাবে। ঠিক এই সময়েই নতুন করে নির্দেশনা জারি করেছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।বিএসইসি নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো বিনিয়োগকারী চাইলে ফ্লোর প্রাইস থেকে ১০ শতাংশ কম দামে শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন। তবে এই লেনদেনে ব্লক মার্কেটে করতে হবে। বিএসইসি এই নির্দেশনা জারির পরের দিনই ঘুরে দাঁড়িয়েছে শেয়ারবাজার। যা শেয়ারবাজারের জন্য একটি ভালো সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ শেয়ারনিউজ২৪.কমকে বলেন, ব্লক মার্কেটে ১০ শতাংশ কমে শেয়ার বিক্রির যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে, তা শেয়ারবাজারের জন্য খুব একটা ভালো হবে না। তার প্রতিফলন আজ ব্লক মার্কেটের লেনদেন লক্ষ্য করলেই বলা যায়। আজ ব্লক মার্কেটে ভালো ভালো কোম্পানিগুলোর শেয়ার তেমন লেনদেন হয়নি। অর্থাৎ ভালো কোম্পানিগুলোর শেয়ার ১০ শতাংশ কম দরে পাওয়া যাচ্ছে না।তারল্য বৃদ্ধির বিষয়ে আবু আহমেদ বলেন, বিএসইসির এই সিদ্ধান্তের কারণে বাজারে তারল্য বৃদ্ধির বিষয়টি সন্দিহান।তবে ব্লক মার্কেটে লেনদেনের সুযোগ করে দেওয়া একটি ভালো উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান।শেয়ারনিউজকে তিনি বলেন, ফ্লোর প্রাইস বেধে দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, শেয়ারবাজারকে একটি বড় ধরনের পতন থেকে রক্ষা করা। এতে করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজি সুরক্ষা হয়েছে। কিন্তু অনেকেই প্রয়োজনে নিজের শেয়ার বিক্রি করে অর্থ অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করতে চাইলেও ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকার কারণে তা সম্ভব হয়নি।কিন্তু ব্লক মার্কেটে ১০ শতাংশ কম দামে শেয়ার বিক্রি করা সেই বিনিয়োগকারী নিজের প্রয়োজন মেটাতে পারবেন। অথবা অন্য কোনো শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারবেন।সেসব বিনিয়োগকারীদের জন্যও একটি ভালো বিনিয়োগের সুযোগ তৈরী হয়েছে।অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, বিএসইসির এই সিদ্ধান্তের কারণে শেয়ারবাজারে নতুন করে তারল্য প্রবেশ করবে। যা শেয়ারবাজারের লেনদেনের গতি বৃদ্ধি করবে। নতুন তারল্যের যোগানে যদি লেনদেনের গতি বৃদ্ধি পায়, তাহলে শেয়ারবাজার থেকে আতঙ্ক দূর হয়ে যাবে।আর আতঙ্ক দূর হলে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে। যা শেয়ারবাজারের গতি পরিবর্তন করতে পারে। সব মিলিয়ে বিএসইসির এই সিদ্ধান্তকে শেয়ারবাজারের জন্য ভালো উদ্যোগ বলে মনে করেন তিনি।অন্যদিকে, বিএসইসির ফ্লোর প্রাইসের ১০ শতাংশ কম দামে ব্লক মার্কেটে শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্তের কারণে শেয়ারবাজারে তারল্য বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগি অধ্যাপক আল আমিনও।অধ্যাপক আল আমিন ফেসবুকে লিখেন, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা নতুন যেই নির্দেশনা দিয়েছে, তাতে তারল্য কিছু বাড়বে বলে আমি মনে করি। এখানে ক্রেতা-বিক্রেতার পারস্পরিক সম্মতিতে ব্লক মার্কেটে ফ্লোর প্রাইসের চেয়ে ১০% কম মূল্যে ক্রয়-বিক্রয় হবে,মূল বাজারে ফ্লোর প্রাইস বহাল থাকবে। এখানে ১০% কমে যিনি ক্রয় করছেন তিনি যদি এক বছরও অপেক্ষা করেন,অন্যান্য যেকোন সঞ্চয় স্কিমের চেয়ে এটা কম লাভজনক হবে না। আর যিনি বিক্রয় করছেন,হয়তো তার খুব প্রয়োজন অথবা উনি তার বিনিয়োগ অন্য কোন শেয়ারে করতে পারেন,যেখানে তিনি হয়ত ১০% বেশি মুনাফা পাবেন বলে প্রত্যাশা করছেন। আমাদের দেশের পুঁজিবাজারের দুর্ভাগ্য ফেসবুক ভিত্তিক নানা গুজবে অনেকে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন,এটাকেই কাজে লাগায় নানা প্রতারক চক্র। আপনি কি কখনো শুনেছেন,বড় কোন বিনিয়োগকারী,অথবা এমন কোন নির্ভরযোগ্য ফেসবুক পেইজ আছে,যেটা ফলো করে আপনি অনেক বেশি লাভবান হয়ে গেছেন? অবশ্যই না।কারণ ঐসব ফেসবুক গ্রুপ কারো কারো দালাল হিসাবে কাজ করে,যেসব বিনিয়োগকারী কম বুঝেন তাদের বেশি ক্ষতি হয় ঐসব গুজবে কান দিয়ে। তাই দোষটা কার?যিনি ফেসবুকের গুজব বিশ্বাস করেন,নাকি যিনি গুজব ছড়িয়ে থাকেন?আমি মনে করি যিনি গুজব বিস্বাস করেন,বেশি দোষ তার। ঐসব ফেসবুক গ্রুপের কি দায়,আপনাকে মুনাফা করিয়ে দেয়ার?আপনাকে মুনাফা অন্য কেউ কেন করিয়ে দিবে,কোন স্বার্থ ছাড়া? তাই ঐসব দালাল গ্রুপের খপ্পরে পড়ে, আপনি পুঁজি হারাবেন?নাকি বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে,সময় নিয়ে বিনিয়োগ করবেন,সম্পূর্ন আপনাদের সিদ্ধান্ত। আমরা খুব সহজেই অন্যের কথায় প্রভাবিত হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে,অন্যকে দোষারোপ করি,কখনো নিজের অজ্ঞতাকে দোষ দেই না। সবাইকে পুঁজিবাজারে কেন আসতে হবে? যারা বুঝবে শুধু তাদের আসা উচিৎ, না বুঝলে নানা দালাল গ্রুপ আপনাকে যা বুঝাবে আপনি তাই বুঝে নিজ দায়িত্বে নিজেদের ক্ষতি করতেই পারেন,কিন্তু কাউকে এটার জন্য দায়ী করা ঠিক হবে না। কারণ আপনার ঝুকি নেয়ার সক্ষমতার উপর নির্ভর করে,আপনার বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত। তাই কোন গুজবে কান না দিয়ে,কোন দালাল চক্রের হাতে না পড়ে, নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বিনিয়োগ করুন আর নিজের পুঁজির নিরাপত্তা দিন।