বিএসইসির হঠকারি সিদ্ধান্তে বাজারে পতন : বাতিলে ডিবিএর চিঠি
শেয়ারবাজারের উন্নয়নে ভালো ভালো কোম্পানি আনা, বিদেশী বিনিয়োগ আনা, বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহন বাড়ানোর মতো অসংখ্য অগ্রাধিকারমূলক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সেসব কাজে খুব একটা ভূমিকা দেখা না গেলেও বাজারের ইতিবাচক ধারায় বা স্বাভাবিক পর্যায়ে হুটহাট করে হঠকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে দেখা যায়। যাতে শেয়ারবাজারে আস্থার সংকট হয় এবং নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সম্প্রতি তেমনিই এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যার পর থেকে বাজার নেতিবাচক ধারায় নিমজ্জিত রয়েছে। এই অবস্থায় বিএসইসিকে তাদের চেকে লেনদেন করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করার আহবান করেছে ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)।ডিবিএ সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও সাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি বিএসইসি চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো হয়েছে।বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে বিদ্যমান আইনে চেক ডিজঅনার হলে কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে। তারপরেও বিএসইসি কেনো চেকে লেনদেন করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল, তা বোধগম্য না। এটা হাস্যকর। এখানে কোন ষড়যন্ত্র আছে কিনা, তা কমিশনের খতিয়ে দেখা দরকার। হয়তো কোন একটি পক্ষ অধ্যাপক শিবলী কমিশনকে বেকায়দায় ফেলতে বা বিতর্কিত করতে এমনটি করে থাকতে পারে।২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর চেক ব্রোকারেজ হাউজের হিসাবে নগদায়ন বা জমা না হওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগকারী লেনদেন করতে পারবে না বলে বিএসইসি এক হঠকারি সিদ্ধান্ত নেয়। যাতে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এরফলে দুইদিনের মাথায় একই বছরের ৮ ডিসেম্বর সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত করতে বাধ্য হয় তৎকালীন কমিশন। কিন্তু গত ১১ অক্টোবর বিএসইসির সেই একই হঠকারি সিদ্ধান্ত কার্যকরের জন্য ডিএসইর মাধ্যমে ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে জানানো হয়েছে।ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে ডিএসইর পাঠানো এক চিঠিতে বিএসইসির সংযুক্ত এক নির্দেশনার বিষয়ে বলা হয়েছে, গত ২২ সেপ্টেম্বর কমিশনার আব্দুল হালিমের সভাপতিত্বে ডিএসইর সিআরও এবং বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে কমিশনের এসআরআই বিভাগের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গৃহিত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে ব্যবস্থা গ্রহন পূর্বক ঊভয় স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষকে আগামি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে বলা হয়ছে।ওই গৃহিত সিদ্ধান্তের মধ্যে ১ নম্বরে রয়েছে, প্রতি ট্রেকহোল্ডার বিনিয়োগকারীর চেক নগদায়নের পরে ক্রয় আদেশ বাস্তবায়ন করবে। এক্ষেত্রে ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বরের নির্দেশনা পরিপালন করতে বলা হয়েছে।এমন হঠকারি সিদ্ধান্তের খবর বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) বাজারে ছড়িয়ে পড়লে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যাতে ওইদিন ডিএসইএক্স ৭ পয়েন্ট কমে যায়। যা ১৬ অক্টোবর) ১৬ পয়েন্ট ও ১৭ অক্টোবর ৬৫ পয়েন্ট কমেছে।বিএসইসির হঠকারি সিদ্ধান্তে যে বাজারে এই পতন হবে, সেটাই সঙ্গে সঙ্গেই টের পেয়েছিল ডিবিএ। যে কারনে তারা ১৬ অক্টোবর বিএসইসিকে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য অনুরোধ করে চিঠি দেয়।চিঠিতে ডিবিএ জানিয়েছে, চেকে লেনদেন না করার নির্দেশনাটি তৎকালীন কমিশন ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর জারী করলে বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাবের ফলে মাত্র দুইদিন পর অর্থ্যাৎ ৮ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে তা স্থগিত করে দেয়া হয়। এমতাবস্থায়, নতুন করে আবারও নির্দেশনাটি কার্যকরের ফলে পূর্বের ন্যায় বাজারে দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশংকা থেকে আমরা এর স্থগিতাদেশ প্রার্থনা করছি।চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে গ্রাহকের চেক নগদায়নের রিয়েল টাইম ব্যাংকিং ব্যবস্থা না থাকার দরুন গ্রাহক চেক জমাদানের মাধ্যমে শেয়ার ক্রয় করার প্রচলন বহু আগে থেকেই চলমান। এই প্রক্রিয়ায় গ্রাহক ব্রোকারেজ হাউজে চেক প্রদানের মাধ্যমে স্বাচ্ছন্দ্যে প্রয়োজন মাফিক শেয়ার ক্রয় করতে সমর্থ হয়। অন্যদিকে, এই প্রক্রিয়ার ফলে ব্রোকারেজ হাউজ এক্সচেঞ্জকে তাদের দৈনিক শেয়ার ক্রয়ের উপর অর্থ নিষ্পত্তিতে কোনরূপ সমস্যায় পড়তে হয় না। তাছাড়া লেনদেনে সুনাম ও স্বচ্ছতা রয়েছে এমন সুপরিচিত ও নির্ভরযোগ্য গ্রাহকের ক্ষেত্রেই ব্রোকারেজ হাউজ কেবলমাত্র চেক গ্রহণের মাধ্যমে শেয়ার ক্রয়াদেশ বাস্তবায়ন করে থাকে। গ্রাহকের চেক নগদায়ন না হওয়ার ফলে সৃষ্ট ঝুঁকি যেহেতু ব্রোকারকেই নিতে হয়, তাই এই ক্ষেত্রে ব্রোকারেজ হাউজ তাদের ঝুঁকির বিষয়টি সর্বোচ্চ বিবেচনা করেই মূলতঃ গ্রাহকভেদে চেকের মাধ্যমেশেয়ার ক্রয়ের অনুমতি দিয়ে থাকে।নতুন নির্দেশনার ফলে শঙ্কা প্রকাশ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, ট্রেকহোল্ডার কোম্পানি গ্রাহকের জমাকৃত চেক নগদায়নের পর ক্রয় আদেশ বাস্তবায়ন করার মর্মে জারীকৃত নতুন নির্দেশনা বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে বাজারের দৈনিক লেনদেন কমে গিয়ে বাজার নিম্নমুখী ধারায় অবস্থান নিতে পারে। বিনিয়োগকারীর একটি বড় অংশ বাজার থেকে তাদের বিনিয়োগ তুলে নিতে পারে। তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়ে বাজার তার শক্তি হারিয়ে দূর্বল হয়ে পড়তে পারে। এমন অবস্থায় দীর্ঘমেয়াদে বাজারের ছন্দ পতন হতে পারে।এই অবস্থায়, দেশে চলমান সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেশের অর্থনৈতিক ধারা অব্যাহত রাখতে, শেয়ারবাজারের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সুসংগঠিত রাখার নিমিত্তে প্রদত্ত নির্দেশনা স্থগিত করতে আপনাকে বিনীতভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।