বিএসইসির হঠকারি সিদ্ধান্তে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব

Date: 2022-10-16 07:00:08
বিএসইসির হঠকারি সিদ্ধান্তে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব
শেয়ারবাজারের উন্নয়নে ভালো ভালো কোম্পানি আনা, বিদেশী বিনিয়োগ আনা, বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহন বাড়ানোর মতো অসংখ্য অগ্রাধিকারমূলক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সেসব কাজে খুব একটা ভূমিকা দেখা না গেলেও বাজারের ইতিবাচক ধারায় বা স্বাভাবিক পর্যায়ে হুটহাট করে হঠকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে দেখা যায়। যাতে শেয়ারবাজারে আস্থার সংকট হয় এবং নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সম্প্রতি তেমনিই এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যাতে উৎসাহ যুগিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ।২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর চেক ব্রোকারেজ হাউজের হিসাবে নগদায়ন বা জমা না হওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগকারী লেনদেন করতে পারবে না বলে বিএসইসি এক হঠকারি সিদ্ধান্ত নেয়। যাতে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এরফলে দুইদিনের মাথায় একই বছরের ৮ ডিসেম্বর সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত করতে বাধ্য হয় তৎকালীন কমিশন। কিন্তু গত ১১ অক্টোবর বিএসইসির সেই একই হঠকারি সিদ্ধান্ত কার্যকরের জন্য ডিএসইর মাধ্যমে ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে জানানো হয়েছে।এমন হঠকারি সিদ্ধান্তের খবর বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) বাজারে ছড়িয়ে পড়লে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যাতে ওইদিন ডিএসইএক্স ৭ পয়েন্ট কমে যায়। যা আজ (১৬ অক্টোবর) কমেছে ১৬ পয়েন্ট।ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে ডিএসইর পাঠানো এক চিঠিতে বিএসইসির সংযুক্ত এক নির্দেশনার বিষয়ে বলা হয়েছে, গত ২২ সেপ্টেম্বর কমিশনার আব্দুল হালিমের সভাপতিত্বে ডিএসইর সিআরও এবং বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে কমিশনের এসআরআই বিভাগের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গৃহিত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে ব্যবস্থা গ্রহন পূর্বক ঊভয় স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষকে আগামি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে বলা হয়ছে।ওই গৃহিত সিদ্ধান্তের মধ্যে ১ নম্বরে রয়েছে, প্রতি ট্রেকহোল্ডার বিনিয়োগকারীর চেক নগদায়নের পরে ক্রয় আদেশ বাস্তবায়ন করবে। এক্ষেত্রে ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বরের নির্দেশনা পরিপালন করতে বলা হয়েছে।অথচ দেশের শেয়ারবাজারে অধিকাংশ লেনদেনই হয় চেক জমা দিয়ে। যখন যার প্রয়োজন, সে বিনিয়োগ করে এবং চেক জমা দেয়। ফলে ব্রোকারেজ হাউজে টাকা না থাকলেও তাৎক্ষনিক বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু এইসব বিনিয়োগকারীদেরকে তাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেটাকে হঠকারি ও শেয়ারবাজারের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এমনিতেই নগদে লেনদেন বন্ধ করে আগেই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদেরকে বাজারের প্রতি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বিজনেস আওয়ারকে বলেন, ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর চেকে লেনদেন বন্ধ করার পরে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। যেটা বাজারবান্ধব না হওয়ার কারনে দুইদিনের মাথায় (৮ ডিসেম্বর) স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্তু সেই জিনিসটাকে আবারও সামনে তুলে আনাটা দুঃখজনক। এতে করে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হবেন।তিনি বলেন, আমাদের দেশে নগদে শেয়ারবাজারে লেনদেন করার সুযোগ নেই। এই অবস্থায় কাউকে যদি চেকে লেনদেন করতে দেওয়া না হয়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা যথাসময়ে বিনিয়োগ করতে পারবেন না। কারন বিনিয়োগকারীকে চেক ব্রোকারেজ হাউজের হিসাবে নগদায়ন না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সাধারনত দিনের লেনদেন শেষে নিট হিসাব করে চেক প্রদান করে। তারা অগ্রিম চেক জমা দেয় না। কিন্তু এখন যদি অগ্রিম চেক জমা দেওয়ার পরে লেনদেন করতে হয়, সেটাও তাদেরকে নিরুৎসাহিত করবে।একই বিষয়ে ডিএসইর সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বিজনেস আওয়ারকে বলেন, আমাদের বিনিয়োগকারীরা কবে কি পরিমাণ লেনদেন করবে, তা আগে থেকেই নির্ধারন করে না। তারা যখন বিনিয়োগ প্রয়োজন মনে করে, তখনই কিনে। ফলে আগে থেকেই ব্রোকারেজ হাউজে টাকা ফেলে রাখে না। তারা সাধারনত লেনদেনের দিন শেষে নিট টাকার চেক জমা দেয়। এখন এই সুযোগটা যদি বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়াটা স্বাভাবিক। অনেকটা এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদেরকে তাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে করে চেকে লেনদেন করার সুযোগ বন্ধ করার সিদ্ধান্তটা সুদূরপ্রসারি বাজারবান্ধব হয়েছে, সেটা বলা যাচ্ছে না।তিনি বলেন, একজন বিনিয়োগকারী আজকে মনে করল ১টি শেয়ার বিনিয়োগযোগ্য। কিন্তু সে যদি এখন চেক দিয়ে কিনতে না পারে, তাহলে সে কি ওই চেক নগদায়ন বা ব্রোকারেজ হাউজের হিসাবে জমা হওয়ার জন্য অপেক্ষা করবে? ওইসময়তো শেয়ারটির দর বেড়ে যেতে পারে। তখন সেই বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে। আর কোন বিনিয়োগকারীই কবে শেয়ার কিনবে, সেই আশায় ব্রোকারেজ হাউজে অগ্রিম টাকা দিয়ে বসে থাকবে না।

Share this news