বিএসইসি-ডিএসইর তৎপরতায় শেয়ারবাজার অনেকটা গতিশীল : ইউনুসুর রহমান
![বিএসইসি-ডিএসইর তৎপরতায় শেয়ারবাজার অনেকটা গতিশীল : ইউনুসুর রহমান](https://stocknewsbd.s3.ap-southeast-1.amazonaws.com/3940/dse-agm.png)
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুসুর রহমান বলেছেন, মহামারি করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে বড় ধরণের নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও সরকারের দূরদর্শিতা এবং আন্তরিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিধারা তুলনামূলকভাবে অনেকটা স্থিতিশীল রয়েছে। এর ফলে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই বিএসইসি এবং ডিএসই’র বহুমূখী কর্মতৎপরতায় দেশের শেয়ারবাজারও অনেকটা গতিশীল হয়ে উঠে৷সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) ডিএসইর মাল্টিপারপাস হলে প্রতিষ্ঠানটির ৬১তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) তিনি এ কথা বলেন।ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস বাজারে গতিশীল অবস্থা থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে (জানুয়ারি-জুন) ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে করোনার মহামারিতে বিধ্বস্ত বিশ্ব যখন ধীরে ধীরে ছন্দে ফেরার প্রত্যাশা করছিল তখনি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ সেই গতি মন্থর করে দেয়৷ ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত শুরুর পর থেকেই অস্থিরতা দেখা দেয় বিশ্বের শেয়ারবাজারে৷ দেশের শেয়ারবাজারও এ অবস্থা থেকে বাদ পড়েনি৷নানাবিধ অস্থিরতায় শেয়ারবাজারের লেনদেন ও সূচক কমতে থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, টানা দরপতনে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে৷ বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে বিএসইসির পক্ষ হতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়৷ শেয়রবাজারের চলমান দরপতনের সাথে যুক্ত হয় বিশ্ব অর্থনীতির নানামূখী সংকটের প্রভাব৷ বিশ্বজুড়ে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে বিপাকে পড়ে ছোট অর্থনীতির দেশগুলো৷ অর্থনীতিতে দেখা দেয় অস্থিরতা৷ করোনা-পরবর্তী বৈশ্বিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের মধ্যে হঠাত চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ২০২১ সালের শেষভাগ থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য বাড়তে থাকে৷ বিশেষ করে জ্বালানি তেল, গ্যাস, গম, ভুট্টা, ভোজ্যতেল ও সারসহ বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ চেইন ও রফতানি বাধাগ্রস্থ হয়৷ এর প্রভাবে প্রায় সব দেশেই মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনৈতিক মন্দার পূর্বাভাস লক্ষণীয় হয়ে ওঠে৷ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মূল্যস্ফীতি বিগত আট-নয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়৷ মূল্যস্ফীতির কারণে উন্নয়নশীল দেশের অনেকেই নিজ দেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে৷ রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপের মিত্রদের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে শুধু রাশিয়া নয় বিশ্বের প্রায় সব দেশই কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ বৈশ্বিক অর্থনীতির বৈরী পরিস্থিতির প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন আর্থিক সূচকেও নেতিবাচক ধারা পরিলক্ষিত হয়৷ এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিও অনেকটা চাপের মুখে পড়ে৷ডিএসইর অর্জন সম্পর্কে তিনি বলেন, বর্তমান পরিচালনা পরিষদ দায়িত্ব গ্রহন করার পর থেকেই ত্রুটিবিহীন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম প্রদানের মাধ্যমে ডিএসই’র ভাবমূর্তি বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আসছে। বিশ্বায়ন এবং তথ্যপ্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও বিকাশের ফলে বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য মডেল এবং অর্থনৈতিক লেনদেনের প্রেক্ষাপট ও গতিপ্রকৃতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। শেয়ারবাজারের সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন ব্যবস্থাসহ সকল ক্ষেত্রেই ডিজিটালাইজেশনের ওপর ব্যাপক কার্যক্রম গৃহিত হয়েছে। এছাড়াও বাজারের গতিকে ধরে রাখতে ডিএসই বিভিন্ন গ্রুপ অব কোম্পানিজ, টেক স্টার্টআপ এবং গ্রোথ স্টেজ কোম্পানিকে বাজারে আনার মাধ্যমে পণ্যের বৈচিত্র্য আনয়নেও কাজ করছে। এ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় শেয়ারবাজারে প্রথমবারের মতো ইসলামী সুকুক বন্ড তালিকাভুক্তির মাধ্যমে শেয়ারবাজারে সম্ভাবনার এক নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা বাজার মূলধন নিয়ে ডিএসই’র ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে বহুল প্রতিক্ষিত সরকারি সিকিউরিটিজের লেনদেনের শুরু হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ৬টি কোম্পানি নিয়ে স্মল ক্যাপিটাল প্ল্যাটফর্মের লেনদেনের শুভসূচনা করে। খুব শীঘ্রই শেয়ারবাজারে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড-এ (এটিবি) লেনদেন শুরু হবে। তাছাড়া এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) চালুর কার্যক্রমও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।ইউনুসুর রহমান বলেন, দুইটি ট্রেকহোল্ডার কোম্পানী এপিআই কানেক্টিভিটি স্থাপন করে তাদের নিজস্ব ওএমএস এর মাধ্যমে লেনদেন শুরু করছে। এছাড়াও ডিএসই থেকে ১১টি ট্রেকহোল্ডার কোম্পানিকে এপিআই ইউএটি সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। অচিরেই এসকল কোম্পানি নিজস্ব অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ওএমএস) এর মাধ্যমে সরাসরি লেনদেন করতে পারবে। ডিএসই’র বর্তমান বোর্ডের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হল এক্সচেঞ্জের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন আধুনিক ডেটা সেন্টার তৈরি করা। এই উদ্দেশ্যে ট্রেকহোল্ডারদের ট্রেডিং এর সুবিধার্থে ম্যাচিং ইঞ্জিন ও অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ওএমএস) হোস্ট করার জন্য ডিএসই টাওয়ার নিকুঞ্জে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ১০৬টি রেকের সুবিধা সম্বলিত একটি টায়ার-৩ ডেটা সেন্টারের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ডেটা সেন্টারের হার্ডওয়ার স্থাপনের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে যে প্রয়োজনীয় সফট্ওয়্যার সংযোজনের পর শীঘ্রই ডাটা সেন্টার চালু করা সম্ভব হবে।ডিএসই’র সেবা ও কার্যক্রম ব্যাপকভাবে প্রযুক্তি নির্ভর হওয়ায় এর প্রযুক্তিগত ঝুঁকিও অনেক বেশি। কোন দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেশের শেয়ারবাজারের কার্যক্রমকে অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিতে পারে। সম্ভাব্য ঝুঁকি ও বিপর্যয় রোধের মাধ্যমে শেয়ারবাজারের কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্নভাবে সচল রাখতে মোনায়েম বিজনেস ডিসট্রিক্ট এ ২৪ রেকের একটি ডিজাস্টার রিকভারি (ডিআর) সাইট স্থাপনের কাজও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ডেটা সেন্টার এবং ডিআর প্রবর্তনের মাধ্যমে ডিএসই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে প্রবেশ করবে এবং ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের উপস্থিতিতে বার্ষিক সাধারণ সভায় ২০২২ সালের ৩০ জুন তারিখে সমাপ্ত অর্থবছরের কোম্পানির পরিচালকমন্ডলীর প্রতিবেদন, নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী গ্রহণ, বিবেচিত ও অনুমোদিত হয়। এছাড়াও ৩০ জুন ২০২২ তারিখে সমাপ্ত অর্থবছর পরিচালনা পর্ষদের সুপারিশকৃত ৬ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয় এবং পরবর্তী অর্থবছরের জন্য নিরীক্ষক নিয়োগ ও তাঁদের পারিতোষিক নির্ধারণ করা হয়।এছাড়াও ডিএস্ই’র পরিচালনা পর্ষদের ২টি শূন্য পদে নির্বাচনে মোহাম্মদ শাহজাহান ও মোঃ শাকিল রিজভীকে পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত ঘোষনা করেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ এ হাফিজ এবং ৬১তম বার্ষিক সাধারণ সভায় তারা পুনরায় আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচালনা পর্ষদে অন্তর্ভূক্ত হন।সভায় প্রাইলিংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ডাঃ মোঃ জহিরুল ইসলাম, আইডিএলসি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সাইফুদ্দীন, সিএফএ, আলি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম আকবর আলী, গ্রীনল্যান্ড ইক্যুইটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম রাজিব আহসান, শ্যামল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সাজেদুল ইসলাম, রশিদ ইনভেস্টমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ রশিদ লালী, গ্লোবাল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিচার্ড ডি রোজারিও, পূবালী ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ আহসান উল্ল্যাহ, ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ কাউছার আল মামুন এবং এ্যাংকর সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ জেড এম নাজিম উদ্দিন বক্তব্য দেন।পরে ডিএসই’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সা্ইফুর রহমান মজুমদার, এফসিএ, এফসিএমএ ইক্যুইটি মার্কেটের উন্নয়ন, এসএমই মার্কেট, অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি), ইটিএফ বাস্তবায়ন, বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন-সরকারি সিকিউরিটিজ মার্কেট, কর্পোরেট বন্ড মার্কেট সহ শেয়ারহোল্ডারদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন৷