বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর শেয়ার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের শঙ্কা

Date: 2023-02-14 04:00:19
বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর শেয়ার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের শঙ্কা
দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়টি বিদ্যুৎ কোম্পানি রয়েছে। কোম্পানিগুলোর সরকারের সঙ্গে চুক্তি থাকায় আয়ের একটি নিশ্চয়তা ছিল। যার কারণে এসব কোম্পানির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের বেশ আগ্রহ ছিল। এতে করে বাজারে কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরও বাড়তে থাকে। তবে টাকার অবমূল্যায়ন ও বিদ্যুতের দাম পরিশোধে বিলম্বের কারণে এ খাতের কোম্পানিগুলো এখন লোকসানের পাশাপাশি নগদ অর্থের সংকটে পড়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানিগুলোয় বিনিয়োগকারীদের ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে পড়ছে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। এতে করে শঙ্কা তৈরী হয়েছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে।সর্বশেষ চলতি ২০২২-২৩ হিসাব বছরের প্রথমার্ধ বা ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর’২২) লোকসান গুনতে হয়েছে খাতটির চার কোম্পানিকে। হিসাব বছরের প্রথমার্ধে বাকি পাঁচটি মুনাফা থাকলেও আয় কমেছে আগের বছরের তুলনায়। এতে করে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর শেয়ার নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে বিনিয়োগকারীরা।বারাকা পাওয়ার লিমিটেড চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে ৮ কোটি ৮ লাখ টাকা কর-পরবর্তী নিট লোকসান করেছে। আগের বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির ৩৭ কোটি ৮ লাখ টাকা নিট মুনাফা হয়েছিল।একইভাবে বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেডের প্রথমার্ধে নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ৪৫ কোটি ১২ লাখ টাকায়। আগের বছরের একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফা ছিল ৫৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা।ডরিন পাওয়ার জেনারেশনস অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেডের চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে ১৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা ছিল ৭৯ কোটি ৬ লাখ টাকা।এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের নিট মুনাফা চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে ৬ কোটি ৫ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা ছিল ১৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।জিবিবি পাওয়ার লিমিটেড চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে ৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা নিট মুনাফা করেছে। আগের বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা ছিল ৬ কোটি ৭ লাখ টাকা।খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে ৭৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা নিট লোকসান গুনেছে। আগের বছরের একই সময়ে ৭১ কোটি ৩০ লাখ টাকা নিট লোকসান ছিল।শাহজীবাজার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে ২২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ৫৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা নিট মুনাফা হয়েছিল।সামিট পাওয়ার লিমিটেড চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে ৩০৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা নিট মুনাফা করেছে। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা ছিল ৩৪৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের নিট মুনাফা চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে ৫৮৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা ছিল ৬৯৯ কোটি ৯ লাখ টাকা।বিদ্যুৎ খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, গত বছরের মে মাসের পর থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে আইপিপি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিল বিলম্বিত হতে শুরু করে। একপর্যায়ে বকেয়া বিল জমতে জমতে সাড়ে ছয় মাসের জমে যায়, যার পরিমাণ ২২ হাজার কোটি টাকা। যদিও এখন এর পরিমাণ কিছু কমে ১৭ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। বিপুল পরিমাণ এ অর্থ বকেয়া থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন চলতি মূলধন সংকটে পড়েছে। এতে কোম্পানিগুলোর নগদ প্রবাহ ঋণাত্মক অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে।অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণেও অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে বড় অংকের লোকসান গুনতে হচ্ছে। ডলারের প্রাপ্যতা সংকটের প্রভাবে এলসি খুলতে পারছে না অনেকেই। তার ওপর দেশের বেসরকারি খাতের নেয়া বিদেশী ঋণের বড় অংশই বিদ্যুৎ খাতের। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এ ঋণ পরিশোধ করতে গিয়েও বেশ চাপের মধ্যে পড়েছেন খাতটির উদ্যোক্তারা। সব মিলিয়ে চতুর্মুখী এ চাপের কারণে বেসরকারি বিদ্যুৎ খাতের মধুচন্দ্রিমার সময় শেষ হয়ে গেছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

Share this news