বিডিকমের শেয়ারে আলাদিনের চেরাগ

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি বিডিকম অনলাইনের শেয়ারের দাম মাত্র আট কার্যদিবসে বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এর মধ্যে বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসেই কোম্পানিটির শেয়ারটির দাম বেড়েছে। সপ্তাহের শেয়ার দাম বৃদ্ধির ভিত্তিতে কোম্পানি সাপ্তাহিক দাম বৃদ্ধির শীর্ষ ১০ কোম্পানির শীর্ষ কোম্পানিতে উঠেছে।কোম্পানিটির শেয়ারের এমন দাম বৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক বলছে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। আর কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বলছে, শেয়ারের দাম বাড়ার পেছনে কোনো কারণ তাদের জানা নেই।প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দাম হু হু করে বাড়তে থাকায় ডিএসই থেকে বিডিকম অনলাইন কর্তৃপক্ষের কাছে নোটিশ পাঠানো হয়। সেই সঙ্গে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে বার্তাও প্রকাশ করেছে ডিএসই। কিন্তু তারপরও শেয়ারটির দাম বাড়ার প্রবণতা মোটেও থামেনি।কোম্পানিটির শেয়ার এক আলোচিত জুয়াড়ীর কবলে পড়ায় গেল সপ্তাহের একাধিক কার্যদিবসে দিনের সর্বোচ্চ দামে শেয়ারটির বিপুল পরিমাণ শেয়ারের ক্রয় আদেশ থাকলেও শূন্য হয়ে পড়ে বিক্রয় আদেশের ঘর। ফলে কোম্পানিটি ডিএসইতে দাম বাড়ার শীর্ষে উঠে এসেছে।ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, গত সপ্তাহজুড়ে বিডিকম অনলাইনের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৫২ দশমিক ৬২ শতাংশ। টাকার অংকে বেড়েছে ১৯ টাকা ১০ পয়সা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৫৫ টাকা ৪০ পয়সায়, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৩৬ টাকা ৩০ পয়সা।কোম্পানিটির শেয়ারের এমন দামবৃদ্ধির ধারা শুরু হয় দ্বিতীয় দফা গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে। ১২ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৩২ টাকা ১০ পয়সা। সেখান থেকেই বাড়তে বাড়তে ৫৫ টাকা ৪০ পয়সায় উঠেছে।ডিএসই থেকে পাঠানো নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিডিকম কর্তৃপক্ষ জানায়, সম্প্রতি শেয়ারের যে অস্বাভাবিক দাম ও লেনদেন বেড়েছে সে সংক্রান্ত কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য তাদের কাছে নেই।এর আগে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিডিকমের শেয়ার দাম ছিল ২০ টাকার ঘরে। শেয়ারবাজারে আলোচিত বিনিয়োগকারী শেয়ারটিতে এন্ট্রি দেন। তারপর উত্থান-পতনের খেলা জমিয়ে চলতি বছরের মার্চের মাঝামাঝি নাগাদ শেয়ারটির দাম ৪৫ টাকায় উঠানো হয়। তারপর মুনাফা তোলা শুরু হলে শেয়ারটির দাম পতন প্রবণতায় ফিরে। এক পর্যায়ে শেয়ারটি ৩০ টাকার নিচে চলে যায়। এই সময়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি শেয়ারটির পেছনে কোনো কারসাজি হয়েছে কি না, তা প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-কে তদন্ত করার দায়িত্ব দেয়।বিডিকম ২০০২ সালে শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত হয়। সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছে।এর আগে ২০২০ সালেও কোম্পানিটি একই হারে লভ্যাংশ দেয়। তবে ২০১৯ সালে ৬ শতাংশ নগদ ও ৬ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি।৫৭ কোটি ৮ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির শেয়ারসংখ্যা ৫ কোটি ৭০ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০টি। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৬৪ দশমিক ৪০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ।