বিদেশিদের বড় বিনিয়োগ আসছে পুঁজিবাজারে

Date: 2023-05-17 01:00:12
বিদেশিদের বড় বিনিয়োগ আসছে পুঁজিবাজারে
পুঁজিবাজারে গত মার্চ মাস থেকে বিদেশিদের বিনিয়োগ বাড়ছে। যা এপ্রিলেও অব্যাহত ছিল। সাইড লাইনে বসে থাকা দেশি বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগে ফিরছেন। ফলে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ নানা ইস্যুতে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা বিনিয়োগকারীরা ফের সক্রিয় হচ্ছেন। এ কারণে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কিছুটা ইতিবাচক প্রবণতায় দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে।ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।ডিএসইর সূত্র মতে, গত এপ্রিল মাসে পুঁজিবাজারে মোট ১৮ কর্মদিবস লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১২ কর্মদিবস উত্থান আর ৬ কর্মদিবস বাজারে পতন হয়। সবমিলে মাসটিতে ১৮ লাখ ৭০ হাজার বিওধারী (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) বিনিয়োগকারীরা শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড এবং বন্ড কেনা-বেচা করেছেন ১০ হাজার ২৯৬ কোটি ২৯ লাখ ৭৮ হাজার ৩৫৪ টাকার।বিএসইসির তথ্য মতে, ১০ হাজার ২৯৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকার মধ্যে দেশি বিনিয়োগকারীরা ১০ হাজার ১১৪ কোটি ৮ লাখ ৪৬ হাজার ৮৪৪ টাকার শেয়ার কেনা-বেচা করেছেন। আর বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনা-বেচা করেছেন ১৮২ কোটি ২১ লাখ ৩১ হাজার ৫১০ টাকার। মোট কেনা-বেচার তুলনায় এ সংখ্যা নেহায়েত কম হলেও বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসের শুরুতে দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিওধারীর সংখ্যা ছিল ৬৩ হাজার ৮টি। এই বিনিয়োগকারীরা ১৩১ কোটি ৪২ লাখ ২৭ হাজার ২৪০ টাকার শেয়ার কিনেছেন। তার বিপরীতে শেয়ার বিক্রি করেছেন ৫০ কোটি ৭৯ লাখ ৪ হাজার ২৭১ টাকা।ঢাকা পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এক ব্যক্তি এবং দুই প্রতিষ্ঠানের বিও হিসাব থেকে গত ২৭ এপ্রিল ইসলামী ব্যাংক, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ এবং বিডিকমে শেয়ার কেনা হয়েছে ১১৪ কোটি ৩১ লাখ ৪৩ হাজার ৯৮৬ টাকার। আর বাকি ১৭ কর্মদিবসে কিনা হয়েছে মাত্র ১৭ কোটি টাকার শেয়ার। তিন বিনিয়োগকারীর মধ্যে বিটিএ ওয়েলথ এমজিটি লি. নামে বিনিয়োগকারী ইসলামী ব্যাংকের ৩ কোটি ৪২ লাখ ৩১ হাজার ৮৪৪ টি শেয়ার কিনেছেন ১১১ কোটি ৫৯ লাখ ৫৮ হাজার ১১৪ টাকা দিয়ে। অর্থাৎ তিনি নতুন করে এ বিনিয়োগ করেছেন।একইদিনে নরওয়ের একজন বিনিয়োগকারী অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের ১ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার কিনেছেন ২ কোটি ৬১ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭২ টাকা দিয়ে। এছাড়াও নকিব আলম খান নামে একজন বিনিয়োগকারী বিডি অটোকারের ৭ হাজার শেয়ার কিনেছেন ১০ লাখ ৪১ হাজার ৪০০ টাকায়।চলতি বছরের এপ্রিল মাসের শুরুতে দেশের পুঁজিবাজারে ৬৩ হাজার ৮টি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিও ছিল। সেখান ১১৪টি বিও কমে মে ৩১ মার্চ দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ৮৯৪টিতে।ডিএসইতে এপ্রিল মাসে ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকার লেনদেনের মধ্যে এ বিনিয়োগকারীরা ১৮২ কোটি টাকার শেয়ার কেনা-বেচা করেছেন। এর মধ্যে ১৩১ কোটি ৪২ লাখ টাকার শেয়ার কিনে বিক্রি করেছেন ৫০ কোটি ৭৯ লাখ ৪ হাজার ২৭১ টাকা।ঠিক এক বছর আগে, অর্থাৎ ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছিল ১২ হাজার ১০৫ কোটি ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৬১২ টাকা। সে সময় বিদেশিদের শেয়ার কেনা-বেচা বাবদ লেনদেন হয়েছিল ৩০৮ কোটি ৯৪ লাখ ১৫ হাজার ২৭২ টাকা।৩০৮ কোটি টাকার লেনদেনের মধ্যে গত বছর ৬৪ কোটি ২৮ লাখ ৭৮ হাজার ৪৮৯ টাকার শেয়ার কিনেছেন। তার বিপরীতে বিদেশিরা শেয়ার বিক্রি করেছেন ২৪৪ কোটি ৬৫ লাখ ৩৬ হাজার ৭৮২ টাকার। অর্থাৎ ১৮০ কোটি ৩৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৯৩ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। সে হিসাবে আগের বছরের চেয়ে বিদেশিদের লেনদেন কমেছে ১২৬ কোটি টাকা।আগের বছর যেখানে ১৮০ কোটি টাকা নিট বিনিয়োগ কমেছিল। এ বছর ৮০ কোটি টাকার নিট বিনিয়োগ এসেছে। যা বাজারের জন্য এই মুহূর্তে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে।চলতি বছরের মার্চ মাসে বিদেশিদের ৮৭ কোটি ৫১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। এর মধ্যে শেয়ার কিনেছে ৪৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকার, তার বিপরীতে বিক্রি করেছে ৪২ কোটি ১ লাখ ৫৮ হাজার ১৫৭ টাকা। ওই মাসেও নিট বিনিয়োগ এসেছে ৩ কোটি ৪৮ লাখ ৩৬ হাজার ৭৫২ টাকা। সেই ধারাবাহিকতায় এপ্রিলে নিট বিনিয়োগ আর বাড়ল।তবে তার আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে বিদেশিদের লেনদেন হয়েছিল ১৯২ কোটি টাকা। তার মধ্যে তারা ৮৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার কিনেছিল। বিপরীতে বিক্রি করেছিল ১০২ কোটি ৪৬ লাখ ৫৯ হাজার ৮৭৬ টাকার শেয়ার। অর্থাৎ ১২ কোটি টাকার নিট বিনিয়োগ নেগেটিভ ছিল।তার আগের মাস অর্থাৎ চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে বিদেশিরা ১৭৪ কোটি ৮৪ লাখ ২৯ হাজার ৮৩৫ টাকার শেয়ার কেনা বেচা করেছিল। এর মধ্যে ২১ কোটি টাকার শেয়ার কেনার বিপরীতে বিক্রি করেছে ১৩৫ কোটি টাকার শেয়ার। নিট বিনিয়োগ নেগেটিভ ছিল।২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিদেশিরা মোট ১৩৭ কোটি ৬ লাখ ৫ হাজার ১৩৮ টাকার শেয়ার কেনা-বেচা করেছিল। ৩৬ কোটি ১ লাখ টাকার শেয়ার কেনার বিপরীতে ১০১ কোটি ৪ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছিলেন বিদেশিরা।২০২২ নভেম্বর মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ২৬২ কোটি ৬৩ লাখ ৯৫ হাজার ৩১৬ টাকার শেয়ার কেনা বেচা করেছিল। তার মধ্যে ১৯১ কোটি ৮৯ লাখ ১৭ হাজার ৮৭৩ টাকার শেয়ার কিনেছে, বিপরীতে বিক্রি করেছেন ৭০ কোটি ৭৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৪২ টাকা। অর্থাৎ সে মাসে নিট বিনিয়োগ ছিল ১২১ কোটি ১৪ লাখ ৪০ হাজার ৪৩১ টাকার। সে হিসেবে চার মাস পর আবার শেয়ার কেনার প্রবণতা বেড়েছে।

Share this news