বারাকা পতেঙ্গায় আইনের ব্যত্যয় : বছর না যেতেই ইস্যু মূল্যের নিচে শেয়ার
![বারাকা পতেঙ্গায় আইনের ব্যত্যয় : বছর না যেতেই ইস্যু মূল্যের নিচে শেয়ার](https://stocknewsbd.s3.ap-southeast-1.amazonaws.com/4699/BPPL.jpg)
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার ৮ মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে আসা বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার কর্তৃপক্ষ ২০২১-২২ অর্থবছরের আর্থিক হিসাবে শ্রম আইন অনুযায়ি ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ) গঠন করেনি। যারা এর আগের অর্থবছরে গঠন করেছিল। যে কোম্পানিটির শেয়ার এখন ক্রেতার অভাবে ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে।এমনিতেই বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোতে আগে থেকেই সাবসিডিয়ারি কর্ণফুলি পাওয়ার ও বারাকা শিকলবাহা পাওয়ারে ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ) গঠন না করে শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। এবার বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারেও একই রকম করেছে।কিন্তু ২০০৬ সালের শ্রম আইনের ২৩২ ধারা অনুযায়ি, প্রতি বছর নিট মুনাফার ৫% ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ) গঠন করা এবং তা কর্মীদের মধ্যে বিতরন করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার কর্তৃপক্ষ ২০২১-২২ অর্থবছরের ব্যবসায় এই ফান্ড গঠন করেনি। তবে বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার এসোসিয়েশেন (বিআইপিপিএ) ওই ফান্ড গঠনের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি চেয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে। যা মঞ্জুর না হতেই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কার্যকর করা শুরু করে দিয়েছে।এর মাধ্যমে কোম্পানিগুলো কয়েক কোটি টাকার নিট মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখিয়েছে। দেখা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকার নিট মুনাফা করা বারাকা পতেঙ্গায় ১ কোটি ৬ লাখ টাকার ডব্লিউপিপিএফ ফান্ড গঠন করা হয়েছিল। তবে ওই অর্থবছরে সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোরসহ নিট মুনাফা হয়েছিল ১০৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা। পুরোটার উপর ফান্ড গঠন করলে হতো ৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা।এদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরে সাবসিডিয়ারিসহ কোন কোম্পানিতেই ডব্লিউপিপিএফ ফান্ড গঠন করেনি বারাকা পতেঙ্গা কর্তৃপক্ষ। অথচ ২০২১-২২ অর্থবছরে সমন্বিতভাবে (কনসোলিডেট) নিট মুনাফা হয়েছে ৪২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর উপরে ৫% হারে ফান্ড গঠন করলে হতো ২ কোটি ১১ লাখ টাকা।২০২১ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১৭৩ কোটি টাকা। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদদের মালিকানা ৬১.৮৫ শতাংশ। কোম্পানিটির সোমবার (২৩ জানুয়ারি) লেনদেন শেষে শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ২৯.৩০ টাকায়।অথচ কোম্পানিটির কাট-অফ প্রাইস ৩২ টাকা। যে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন শুরু হওয়ার ৮ মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে ওই প্রাইসের নিচে নেমে আসে। সর্বপ্রথম গত বছরের ৬ মার্চ শেয়ারটি কাট-অফ প্রাইসের নিচে নামে। যে শেয়ারটি শেষ কয়েক মাস ধরে ফ্লোর প্রাইস ২৯.৩০ টাকায় আটকে আছে।তারপরেও বিনিয়োগকারীদের চাহিদা কম থাকা এমন কোম্পানিটির উদ্যোক্তা/পরিচালকেরা ৩২ টাকার কাট-অফ প্রাইসে খুশি হতে পারেননি। বিএসইসির বুক বিল্ডিংয়ে কাট-অফ প্রাইস নির্ধারনে নতুন কড়াকড়ি আরোপের কারনে ৩২ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল কোম্পানিটির কাট-অফ প্রাইস। অন্যথায় যোগ্য নামের অযোগ্যরা কারসাজির মাধ্যমে প্রাইস কোথায় নিয়ে যেত, তা অকল্পনীয়। যা তারা বিগত অনেক কোম্পানিতে করে দেখিয়েছে।বারাকা পাওয়ারের জন্য গড় ৩০.৫০ টাকা করে প্রতিটি শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ২২৫ কোটি টাকা শেয়ারবাজার থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। সাধারন বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৯ টাকা করে ইস্যুর কারনে গড় প্রাইস ৩০.৫০ টাকায় নেমে আসে। এই ইস্যু মূল্যের কোম্পানিটি থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ারপ্রতি প্রাপ্তি ১ টাকা। অর্থাৎ ৩০.৫০ টাকা বিনিয়োগের বিপরীতে প্রাপ্তি ১ টাকা বা ৩.২৮ শতাংশ। যার চেয়ে ঝুঁকিমুক্ত ব্যাংকে এফডিআরে আরও বেশি পাওয়া যায়।