আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের ডিভিডেন্ড জটিলতা, আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা

Date: 2022-11-06 01:00:12
আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের ডিভিডেন্ড জটিলতা, আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি আনোয়ার গ্যালভানাইজিং লিমিটেড ৩০ জুন, ২০২২ অর্থবছরের জন্য ১০০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এরমধ্যে ২০ শতাংশ ক্যাশ এবং ৮০ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড।৮০ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড ঘোষণা করায় আনোয়ার গ্যালভেনাইজিংয়ের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি মিলেছিল। কিন্তু এখন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। শেয়ারবাজার কর্তৃপক্ষ বলছে, কোম্পানিটি আইন মেনে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেনি। এর ফলে নিয়মের বাইরে যে পরিমাণ বোনাস ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হয়েছে তার বিপরীতে তাদের ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। এছাড়া ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকায় উন্নীত করতে বলেছে বিএসইসি।বোনাস ডিভিডেন্ডের বিপরীতে ১০ শতাংশ করা প্রদান এবং চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি করার বিষয়ে এখন কোম্পানিটি বলছে, তারা বেশি ডিভিডেন্ড দিতে পারবে না। যেহেতু তাদের মুনাফার টাকা বাজার মূলধন বৃদ্ধিতে এবং কর দিতে চলে যাবে।নিয়ম অনুযায়ী, ক্যাশ ও বোনাসের ডিভিডেন্ড সমান হতে হবে। কিন্তু ২০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ডের বিপরীতে ৮০ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছে কোম্পানিটি। এতে আইনের ব্যত্যয় হয়েছে।এই অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। ১০০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণায় তাদের মধ্যে যে স্বস্তি দেখা গিয়েছিল, এখন সেই স্বস্তি হতাশায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে যারা চড় দামে কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন, তাদের মধ্যে এথন আতংক ভর করেছে। কারণ এখন এই কোম্পানির শেয়ার দর কমে যেতে পারে।আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের কর পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ১৯ কোটি ৩৫ লাখ ৩২ হাজার ৭২৪ টাকা। তাতে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ১১ টাকা ৫৪ পয়সা। ২০২১ সালে ইপিএস ছিল ৩ টাকা ৯২ পয়সা।বর্তমানে কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ৬৭ লাখ ৭০ হাজার ৬০০টি। ২০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণার ফলে বিনিয়োগকারীদের জন্য নির্ধারিত ডিভিডেন্ডের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৪১ হাজার ২০০ টাকা। এরপরও বিগত অর্থবছরে কোম্পানিটির মুনাফার অর্থ অবশিষ্ট থাকে প্রায় ১৬ কোটি টাকা। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থার শর্ত পূরণ করতে গিয়ে বিনিয়োগকারীদের বেশি মুনাফা দিতে পারছে না কোম্পানিটি। ফলে বড় অংকের মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।আয়কর অধ্যাদেশে নতুন ধারা অনুযায়ী, অর্থ আইন, ২০১৯ এর মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন ধারা (১৬ নম্বর) সংযোজন করা হয়েছে। এ ধারা অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে নিবন্ধিত কোম্পানিকে স্টক ডিভিডেন্ডের কমপক্ষে সমপরিমাণ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে হবে। যদি স্টক ডিভিডেন্ড দেওয়ার পরিমাণ ক্যাশ ডিভিডেন্ডের চেয়ে বেশি হয় তাহলে যে পরিমাণ স্টক ডেভিডেন্ড দেওয়া হবে বা হয়েছে তার পুরোটার ওপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে। এই কর কোম্পানিকে সংশ্লিষ্ট কর বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিলের আগে পরিশোধ করতে হবে। এটি অন্য কোনো করের সঙ্গে সমন্বয় করা যাবে না।এই বিষয়ে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ক্যাশ ও বোনাসের ডিভিডেন্ড সমান হতে হবে। কিন্তু ২০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ডের বিপরীতে ৮০ শতাংশ বোনাস শেয়ার ডিভিডেন্ড দিয়েছে আনোয়ার গ্যালভানাইজিং। এতে আইনের ব্যত্যয় হয়েছে।তিনি বলেন, কোম্পানি আইন অনুসারে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ডিভিডেন্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন এজিএমে পাস হলে এই প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য কমিশনে আবেদন করবে। কোম্পানি যদি যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারে তবে বিএসইসি প্রস্তাব বিবেচনা করবে। যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারলে বোনাস ডিভিডেন্ডের বিষয়টি কমিশন বাতিল করতে পারে।

Share this news