আইপিও অনুমোদনে ডকুমেন্ট কেন্দ্রীক সিদ্ধান্তে বাধ্য হয় কমিশন’

আইপিও প্রক্রিয়ায় যেসব আইনকানুন রয়েছে তা সবার মেনে চলা উচিত৷ অনেক বিষয় রয়েছে যা ডকুমেন্ট দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। এ বিষয়গুলো ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দিয়ে বুঝতে হয়। আরও দেখতে হয় কোম্পানির পরিচালকদের অন্য কোন কোম্পানি রয়েছে কিনা এবং সে কোম্পানিগুলোকে তারা কীভাবে পরিচালিত করছে। এছাড়াও ইএসজি রিপোর্টিংয়ের মতো নতুন নতুন নির্দেশিকা ও মূল্যায়ন তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে কমিশন ডকুমেন্ট কেন্দ্রীক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। এই ডকুমেন্ট তৈরিতে কমিশনের কোন হাত নেই। কমিশন অডিটরদের অডিট রিপোর্টকে পর্যাপ্ত ধরে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। গত ৩০ নভেম্বর ডিএসই ট্রেনিং একাডেমি আয়োজিত ২ দিনব্যাপী “ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিংস (আইপিও): প্রসেসেস অ্যান্ড প্রসিডিউরস” শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপণী দিনে বিএসইসি’র কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন ডিএসই’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. সাইফুর রহমান মজুমদার, এফসিএ, এফসিএমএ, বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম এবং ডিএসই’র উপ-মহাব্যবস্থাপক ও ডিএসই ট্রেনিং একাডেমির প্রধান সৈয়দ আল আমিন রহমান৷তিনি আরও বলেন, কমিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো আইপিও’র দালিলিক প্রমাণের দিকে খেয়া রাখা। আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে কমিশন ৪টি বিষয় খেয়াল রাখে। প্রথমটি হলো-ইস্যুয়ার প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা কেমন ও তাদের মানসিকতা কী। দ্বিতীয়টি হলো-য়ে সকল বিনিয়োগকারী আইপিওতে বিনিয়োগ করেছে, তাদের বিভিন্ন বিষয় জানা। তৃতীয়টি হলো-কোম্পানিটি কোনো রেগুলেটরি ক্রাইসিস তৈরি করবে কিনা সেটি লক্ষ রাখা এবং চতুর্থটি হলো-যে সকল প্রতিষ্ঠান দেশ ও জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে যেতে পারে, এমন প্রতিষ্ঠান তালিকাভূক্ত না করা।এই প্রশিক্ষণের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনো আইপিও আবেদনের যথাযথ মূল্যায়ন যখন আপনাদের আকাঙক্ষার সাথে সংযুক্ত হয়, সেটিই হলো কমিশনের স্বার্থকতা। কমিশনের কাছে যে পরিমাণ আইপিও আবেদন আসে তার অর্ধেকেরও বেশি নাম আপনারা জানতে পারেন না। কারণ সেগুলোর কিছু ক্রুটি বা অসংগতির কারণেই আমাদের টেবিল থেকে ফিরে যায়।ড. শেখ শামসুদ্দিন আরও বলেন, অনেক সময় অডিটরদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷ এই জিনিসগুলো পরিবর্তনের চেষ্টা করা হচ্ছে৷ আইপিও প্রসেসটাকে ডিজিটালাইজড করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এজন্য বিএসইসি বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে ৮ থেকে ১০ মিলিয়ন ডলার অর্থায়নের চেষ্টা করছে। এই ডিজিটালাইজেশন ফিনটেক টেকনোলজি ব্যবহার করে করা হবে। এজন্য সরকারের ইতিবাচক সম্মতি পাওয়া গিয়েছে৷ আশা করা যাচ্ছে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ফান্ডটি পাওয়া যাবে৷ বিএসইসি সে ফান্ড নিয়ে পুরো আইপিও প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করবে৷ তিনি আরও বলেন আপনারা লক্ষ করে দেখবেন অনেক সময় আইপিও অনুমোদনের জন্য কালক্ষেপণ হয়। এজন্য বিএসইসি ও ডিএসই দায়ী থাকে না। কোম্পানির তথ্য ঘাটতির জন্য মূলত এটি হয়ে থাকে। সবশেষে তিনি বলেন এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে যে সমস্ত বিষয় শিখছেন তা শুধুমাএ শেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে এই অর্জিত জ্ঞান আপনাদের কর্মক্ষেএে প্রয়োগ করে ভালো কোম্পানিগুলোকে কমিশনের কাছে নিয়ে আসবেন। ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলেই পুঁজিবাজার ও দেশের কল্যাণ হবে।প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রসপেক্টাস মূল্যায়নে বিএসইসি এবং এক্সচেঞ্জগুলোর ভূমিকা, রেড-হেয়ারিং প্রসপেক্টাসের বিশেষত্ব, প্রসপেক্টাসের প্রয়োজনীয়তা ও বিষয়বস্তু, সংক্ষিপ্ত সংস্করণ প্রসপেক্টাস, মূল্যায়ন প্রতিবেদন এবং আর্থিক বিবৃতি মূল্যায়ন, প্রসপেক্টাসের যাচাই-বাছাই পদ্ধতি, প্রসপেক্টাস ভেটিং পদ্ধতি, আবেদনপত্রের প্রয়োজনীয়তা এবং বিষয়বস্তু, সিকিউরিটিজ বিতরণ প্রক্রিয়া, লক ইন বিধান, ডিফল্ট এবং শাস্তিমূলক বিধানের পরিণতি এবং আইপিও অনুমোদন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোকপাত করেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম৷