৩১ কোম্পানি পরিদর্শনের অনুমতি পেল ডিএসই

কোম্পানি চালু আছে কিনা, থাকলে প্রকৃত অবস্থা কী, তা জানতে অবশেষে তালিকাভুক্ত ৩১ কোম্পানির প্রধান কার্যালয় ও কারখানা সরেজমিন পরিদর্শন করার অনুমতি পেয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। সর্বশেষ গত বছরের ৪ ডিসেম্বর অনুমতি চেয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) চিঠি দিয়েছিল ডিএসই। এর পর গত সোমবার স্টক এক্সচেঞ্জটিকে সম্মতি জানিয়েছে সংস্থাটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।আগে তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রধান কার্যালয় ও কারখানা পরিদর্শনে বিএসইসির অনুমতি লাগত না। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ পরিদর্শনে গিয়ে কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা যাচাই করত স্টক এক্সচেঞ্জ। পরে নিয়ন্ত্রক সংস্থা স্টক এক্সচেঞ্জের এ ক্ষমতা খর্ব করে পূর্বানুমোদনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। তবে অনুমতি চেয়েও মাসের পর মাস পার হলেও অনুমতি না দেওয়ার বহু নজির সৃষ্টি করেছে বিএসইসি।এ অবস্থার মধ্যে সোমবার ৩১ কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা জানতে স্টক এক্সচেঞ্জটি অনুমতি দিয়েছে। এর মধ্যে ৯টি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বস্ত্র খাতের কোম্পানি ১০টি। বাকি ১২টি অন্য খাতের। তালিকার ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলো হলো– রূপালী এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে রয়েছে ফারইস্ট, এফএএস, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, প্রিমিয়ার লিজিং, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল এবং উত্তরা ফাইন্যান্স। এ ছাড়া বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলো হলো– আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং, ড্রাগন সোয়েটার, সিএনএটেক্স, ডেল্টা স্পিনার্স, জেনারেশন নেক্সট, আরএন স্পিনিং, তাল্লু স্পিনিং, তুংহাই নিটিং এবং কাট্টলী টেক্সটাইল। অন্য কোম্পানিগুলো হলো– জুট স্পিনার্স, বিচ হ্যাচারি, ইমাম বাটন, খুলনা প্রিন্টিং, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, অলিম্পিক অ্যাক্সেসরিজ, সাইফ পাওয়ারটেক, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, শ্যামপুর সুগার এবং জিল বাংলা সুগার। এসএমই বাজারে তালিকাভুক্ত অপর দুই কোম্পানি হলো– হিমাদ্রি এবং ইউসুফ ফ্লাওয়ার মিলস।আর্থিক খাতের ৯ কোম্পানির মধ্যে রূপালী ব্যাংক এবং উত্তরা ফাইন্যান্স মুনাফায় আছে। তবে বাকি সাতটি লোকসানে। ২০২২ সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাদের পুঞ্জীভূত লোকসান ৯ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। বস্ত্রসহ অন্য খাতগুলোর ২২ কোম্পানির মধ্যে ১১টি লোকসানে। এর মধ্যে বন্ধ রয়েছে অনেক।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডিএসই ৪২ কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা জানতে সরেজমিন পরিদর্শনে গত বছর অনুমতি চেয়েছিল। এর মধ্যে অনুমতি পেয়ে ১২টির সরেজমিন তদন্ত শেষে বিএসইসিকে প্রতিবেদনও দিয়েছে। এ ছাড়া দুলামিয়া কটন, ফ্যামিলিটেক্স, নর্দার্ন জুট, রিজেন্ট টেক্সটাইল এবং উসমানিয়া গ্লাস যে বন্ধ, তা ওয়েবসাইটে তথ্য প্রকাশ করেছে। এদিকে তালিকাভুক্ত অ্যাপোলো ইস্পাত, বিডি ওয়েল্ডিং, সেন্ট্রাল ফার্মা, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, মেঘনা পেট, মিথুন নিটিং, আরএসআরএম স্টিল, সুহৃদ, ইয়াকিন পলিমার, অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন, ঢাকা ডাইং, গোল্ডেন সন, জিকিউ বলপেন, খান ব্রাদার্স পিপি, কেয়া কসমেটিক্স, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, ল্যুব-রেফ, নূরানি ডাইং, রিং শাইন, জাহিন স্পিনিংসহ প্রায় ৩০টি কোম্পানির উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ আছে বলে গুঞ্জন আছে। আরামিট লিমিটেড, আরামিট সিমেন্ট, ডেল্টা স্পিনার্স, ফরচুন শুজ, ইন্দো-বাংলা ফার্মা, সাভার রি-ফ্যাক্টরিজসহ আরও অন্তত ২০ কোম্পানির অবস্থাও বেশ নাজুক। ফরচুন শুজ টানা দুই বছর শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেও তা দিতে পারেনি।এসব কোম্পানির বিষয়ে ডিএসই কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না– জানতে চাইলে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এটিএম তারিকুজ্জামান সমকালকে বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জ চাইলেই তালিকাভুক্ত কোম্পানি পরিদর্শন করতে পারে না। এ জন্য অনুমতি নিতে হয়। গত বছর ৪২টি কোম্পানির পরিদর্শন চেয়ে অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছিল। এর মধ্যে ১২টির বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদনও কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। এর পর কমিশনের পক্ষ থেকে এখন অবধি কিছু জানানো হয়নি।ডিএসইর এমডি বলেন, ‘আমরা অসমর্থিত কিছু সূত্রে জানতে পারছি, বর্তমানে বেশ কিছু তালিকাভুক্ত কোম্পানির উৎপাদন বা ব্যবসা কার্যক্রম পুরোপুরি বা প্রায় বন্ধ আছে। কোম্পানিগুলোর এ বিষয়ে তথ্য দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তারা কোনো তথ্য দেয়নি। ফলে বিনিয়োগকারীদের প্রকৃত অবস্থা জানাতে সরেজমিন পরিদর্শন করা প্রয়োজন। নির্দিষ্ট কিছু বিষয় বিবেচনায় তালিকা করে পরিদর্শনের অনুমতি চাওয়া হয়। দীর্ঘদিন অনুমতি না পেয়ে গত ডিসেম্বরে ফের চিঠি দেয় ডিএসই।’তিনি বলেন, কোম্পানির আয়-ব্যয় ও মুনাফাসহ অত্যাবশ্যক কিছু তথ্যের ভিত্তিতে বিনিয়োগকারীরা ওই কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। এ তথ্য কোম্পানিরই দেওয়ার কথা। না দিলে তা প্রকাশে বাধ্য করা স্টক এক্সচেঞ্জের দায়। এ দায় পালনে বিএসইসির অনুমতি গ্রহণের বাধ্যবাধকতা না থাকাই স্রেয়।