৩ কোম্পানির শেয়ার রমরমা : বেড়েছে ১,৩১৯ কোটি টাকার মূলধন

পুঁজিবাজারে প্রায় দেড় বছর পর গত সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস থেকে বেশিরভাগ শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হয়েছে। ওই সপ্তাহে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির সমন্বিত বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় দুই কোম্পানির বাজার মূলধন কমেছে ১২ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।বাজার মূলধন বিবেচনায় দেশের পুঁজিবাজারে শীর্ষ ১০ কোম্পানি হলো- যথাক্রমে গ্রামীণফোন লিমিটেড, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি বাংলাদেশ (বিএটিবিসি) লিমিটেড, ওয়ালটন হাই-টেক পার্ক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি, রবি আজিয়াটা লিমিটেড, রেনাটা লিমিটেড, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ইউপিজিডিসিএল), বেক্সিমকো লিমিটেড, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড ও লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড।এই দশ কোম্পানির মধ্যে ওয়ালটন, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ইউনাইটেড পাওয়ার, বার্জার পেইন্টস ও লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ বর্তমানে ফ্লোর প্রাইস মুক্ত রয়েছে। বাকি ৫ কোম্পানি এখনো ফ্লোর প্রাইসে রয়েছে। ফ্লোর প্রাইস মুক্ত হওয়া শেয়ারের মধ্যে ওয়ালটন ও ইউনাইটেড পাওয়ারের বাজার মূলধন গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ১১ হাজার ৭৫৫ কোটি ১০ লাখ টাকা কমেছে। এর বিপরীতে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, বার্জার পেইন্টস ও লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের বাজার মূলধন বেড়েছে ১ হাজার ৩১৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা।সার্বিকভাবে এই ১০ কোম্পানির বাজার মূলধন গত সপ্তাহ শেষে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ মূলধন ডিএসইর মোট বাজার মূলধনের ৪২ দশমিক ১২ শতাংশ। আগের সপ্তাহ শেষে এ দশ কোম্পানির বাজার মূলধন ছিল ১ লাখ ৮৭ হাজার ৮০০ কোটি ১০ লাখ টাকা। এ মূলধন ডিএসইর মোট বাজার মূলধনের ৪১ দশমিক ২৫ শতাংশ। টাকার অংকে সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ কোম্পানির বিপরীতে সমন্বিতভাবে বাজার মূলধন কমেছে ১০ হাজার ৪৩৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা বা ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ।জানা যায়, বাজার মূলধন বিবেচনায় ডিএসইর শীর্ষ কোম্পানি গ্রামীণফোন। এক্সচেঞ্জটির মোট বাজার মূলধনের ৯ দশমিক ১৯ শতাংশই রয়েছে কোম্পানিটির দখলে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৩৮ হাজার ৬৯৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সর্বশেষ সপ্তাহে (২১ থেকে ২৫ জানুয়ারি) ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা কোম্পানিটির বাজার মূলধন ও শেয়ারদরে কোনো পরিবর্তন হয়নি। বর্তমানে কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের দর ২৮৬ টাকা ৬০ পয়সায় ফ্লোরে আটকে আছে।৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ মূলধনের ভিত্তিতে ডিএসইর শীর্ষ বাজার মূলধনী কোম্পানির তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিএটিবিসি। সর্বশেষ সপ্তাহে ফ্লোর প্রাইস বহাল থাকা এ কোম্পানিটিরও বাজার মূলধন ও শেয়ারদরে কোনো পরিবর্তন আসেনি। সপ্তাহ শেষে বাজার মূলধন ২৮ হাজার ৯ কোটি ৮০ লাখ টাকায় অপরিবর্তিত রয়েছে। আর শেয়ারদর ৫১৮ টাকা ৭০ পয়সায় স্থির রয়েছে।ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার হওয়ার প্রথম সপ্তাহে বড় দর সংশোধন হয়েছে ওয়ালটনের। কোম্পানির শেয়ারদর সপ্তাহের ব্যবধানে ১ হাজার ৪৭ টাকা ৭০ পয়সা থেকে কমে ৭৬৪ টাকা ৯০ পয়সায় এসে দাঁড়িয়েছে। এ হিসেবে সপ্তাহ শেষে কোম্পানির বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ১৭১ কোটি টাকায়। এর ভিত্তিতে ডিএসইর মোট বাজার মূলধনের ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ দখলে নিয়ে তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে কোম্পানিটি। এক সপ্তাহ আগেও কোম্পানিটি শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল। আগের সপ্তাহ শেষে বাজার মূলধন ছিল ৩১ হাজার ৭৩৭ কোটি ৮০ লাখ টাকায়। অথাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির বাজার মূলধন কমেছে ৮ হাজার ৫৬৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। শতকরা হিসেবে গত সপ্তাহে ২৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ বাজার মূলধন কমেছে।বাজার মূলধন বিবেচনায় ডিএসইর শীর্ষ তালিকায় চতুর্থ কোম্পানি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। এক্সচেঞ্জের ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ বাজার মূলধন রয়েছে কোম্পানিটির দখলে। এ কোম্পানিটির বাজার মূলধন গত সপ্তাহ শেষে (২৫ জানুয়ারি) ১৯ হাজার ৪৫৭ কোটি ৬০ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে (১৮ জানুয়ারি) এ মূলধন ছিল ১৮ হাজার ৭৯২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এ হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির বাজার মূলধন বেড়েছে ৬৬৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা বা ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গত সপ্তাহ শেষে কোম্পানির শেয়ারদর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১৯ টাকা ৫০ পয়সায়। আগের সপ্তাহ শেষে এ দর ছিল ২১২ টাকায়।ডিএসইর মোট বাজার মূলধনের ৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ দখলে নিয়ে তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে রবি আজিয়াটা। সর্বশেষ সপ্তাহে ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা এ কোম্পানিটির বাজার মূলধন ও শেয়ারদরে কোনো পরিবর্তন হয়নি। সপ্তাহ শেষে কোম্পানির বাজার মূলধন ১৫ হাজার ৭১৩ কোটি ৮০ লাখ টাকায় অপরিবর্তিত রয়েছে। আর কোম্পানির শেয়ারদর ৩০ টাকায় ফ্লোরে আটকে আছে।৩ দশমিক ৩২ শতাংশ মূলধনের ভিত্তিতে ডিএসইর শীর্ষ বাজার মূলধনী কোম্পানির তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে রেনাটা লিমিটেড। সর্বশেষ সপ্তাহে এ কোম্পানিটিরও বাজার মূলধন ও শেয়ারদরে কোনো পরিবর্তন আসেনি। সপ্তাহ শেষে বাজার মূলধন ১৩ হাজার ৯৬৮ কোটি ৯০ লাখ টাকায় অপরিবর্তিত রয়েছে। আর শেয়ারদর ১ হাজার ২১৭ টাকা ৯০ পয়সায় ফ্লোরে আটকে রয়েছে।বাজার মূলধন বিবেচনায় ডিএসইর শীর্ষ তালিকায় সপ্তম কোম্পানি ইউনাইটেড পাওয়ার। বর্তমানে এক্সচেঞ্জটির ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ বাজার মূলধন রয়েছে কোম্পানিটির দখলে। ফ্লোর প্রত্যাহারের সপ্তাহে এ কোম্পানিটির বাজার মূলধনে বড় ধরন হোঁচট এসেছে। সপ্তাহ শেষে বাজার মূলধন কমে ১০ হাজার ৩৫৯ কোটি ২০ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ১৩ হাজার ৫৪৭ কোটি ৫০ লাখ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৩ হাজার ১৮৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা বা ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহের ২৩৩ টাকা ৭০ পয়সার শেয়ারটি গত সপ্তাহ শেষে ১৭৮ টাকা ৭০ পয়সায় এসে দাঁড়িয়েছে।ডিএসইর মোট বাজার মূলধনের ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ দখলে নিয়ে তালিকায় অষ্টম অবস্থানে রয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেড। সর্বশেষ সপ্তাহে ফ্লোর প্রাইস বহাল থাকা এ কোম্পানিটির বাজার মূলধন ও শেয়ারদরে কোনো পরিবর্তন হয়নি। সপ্তাহ শেষে কোম্পানির বাজার মূলধন ১০ হাজার ৩৫৭ কোটি ১০ লাখ টাকায় অপরিবর্তিত রয়েছে। আর কোম্পানির শেয়ারদর ১১৫ টাকা ৬০ পয়সায় ফ্লোরে আটকে আছে।২ দশমিক ২০ শতাংশ মূলধনের ভিত্তিতে ডিএসইর শীর্ষ বাজার মূলধনী কোম্পানির তালিকায় নবম অবস্থানে রয়েছে বার্জার পেইন্টস। সর্বশেষ সপ্তাহে এ কোম্পানিটির বাজার মূলধন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ২৫৪ কোটি ২০ লাখ টাকায়। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৮ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানির বাজার মূলধন বেড়েছে ৫৮৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বা শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ। সপ্তাহ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৯৫ টাকা ৪০ পয়সায়। আগের সপ্তাহ শেষে এ দর ছিল ১ হাজার ৮৬৯ টাকা ২০ পয়সায়।বাজার মূলধন বিবেচনায় ডিএসইর শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় সবশেষে রয়েছে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ। এক্সচেঞ্জের ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ বাজার মূলধন রয়েছে কোম্পানিটির দখলে। এ কোম্পানিটির বাজার মূলধন গত সপ্তাহ শেষে বেড়ে ৮ হাজার ৩৭৩ কোটি ৫০ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৮ হাজার ৩০৩ কোটি ৮০ লাখ টাকায়।অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির বাজার মূলধন বেড়েছে ৬৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা বা শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ। কোম্পানির শেয়ারদর গত সপ্তাহ শেষে দাঁড়িয়েছে ৭২ টাকা ১০ পয়সায়। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৭১ টাকা ৫০ পয়সায়।