২২২ কোম্পানির নিট মুনাফা ১৬০১১ কোটি টাকা, পে আউট রেশিও ৫৫%

Date: 2023-01-02 20:00:15
২২২ কোম্পানির নিট মুনাফা ১৬০১১ কোটি টাকা, পে আউট রেশিও ৫৫%
একসময় শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে লভ্যাংশ বিতরনে উদ্যোক্তা/পরিচালকদের অনেক অনীহা ছিল। তারা শুধুমাত্র কিছু কাগজের বোনাস শেয়ার দিতে চাইতো। এর মাধ্যমে মুনাফার অধিকাংশ কোম্পানির সংরক্ষিত আয়ে (রিটেইন আর্নিংস) রেখে দিতে চাইতো। তবে এখন সেই পরিস্থিতির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা/পরিচালকেরা মুনাফার ৫০ শতাংশের বেশি পর্যন্ত শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে বিতরন করে দিচ্ছেন।এটা অবশ্য এমনি এমনিতেই হয়নি। এজন্য আইন পর্যন্ত করতে হয়েছে। যা করতে কাজ করেছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। শুরুতে ড. খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন বিগত কমিশন বোনাস শেয়ার দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করেন। তারা ব্যবসা সম্প্রসারন ছাড়া বোনাস শেয়ারে নিরুৎসাহিত করেন ওই কমিশন। এরপরে মুনাফার কমপক্ষে ৩০ শতাংশ (কমপক্ষে অর্ধেক নগদ) লভ্যাংশ দেওয়ার আইনে প্রণয়নে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে যান খায়রুল হোসেনের কমিশন। এরপরে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরে আরও শক্ত অবস্থান নিতে শুরু করেছে।দেখা গেছে, গত ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর ২২) আর্থিক হিসাব প্রকাশ করা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ২২২ কোম্পানির নিট মুনাফা হয়েছে ১৬ হাজার ১০ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এরমধ্য থেকে ৮ হাজার ৫৪৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ দেওয়া হবে। বাকি ৭ হাজার ৪৬৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা কোম্পানিতে রেখে দেওয়া হবে। এ হিসেবে মুনাফার ৫৩ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ আকারে শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে বিতরন করা হবে।এছাড়া ওই ২২২ কোম্পানির মধ্যে ৩৯ কোম্পানি থেকে ২২ কোটি ৫৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩২৪টি বা ২২৫ কোটি ৪৮ লাখ ৪৩ হাজার ২৪০ টাকার বোনাস শেয়ার দেওয়া হবে। এ হিসেবে নগদ ও বোনাস মিলে মোট ৮ হাজার ৭৭১ কোটি ২৪ লাখ টাকার লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ ডিভিডেন্ড পে আউট রেশিও (লভ্যাংশ প্রদান অনুপাত) হবে ৫৫ শতাংশ।এ বিষয়ে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ও বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের শিক্ষক মোহাম্মদ মুসা বিজনেস আওয়ারকে বলেন, লভ্যাংশতো শেয়ারবাজারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটা দিয়ে অনেক কিছুরই ইঙ্গিত করে। সে বিবেচনায় ৫৫% পে আউট রেশিও খারাপ না। তবে ব্যবসা বাড়াতে রিটেইন আর্নিংসেরও দরকার আছে।একই বিষয়ে ডিএসইর সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বিজনেস আওয়ারকে বলেন, একটি কোম্পানির ব্যবসা সম্প্রসারনের জন্য রিটেইন আর্নিংসের দরকার আছে। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ কোম্পানির উদ্যোক্তা/পরিচালকেরা অসৎ উদ্দেশ্যে লভ্যাংশ না দিয়ে এই রিটেইন আর্নিংস বাড়াতে চায়। যেখানে বহূজাতিক কোম্পানিগুলোর ডিভিডেন্ড পে আউট রেশিও বেশি সত্ত্বেও নিয়মিত ব্যবসা বাড়ছে। এসব কারনে দেশীয় কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা অনেক কম। এ বিবেচনায় মুনাফার ৫৫% লভ্যাংশ ঘোষণাকে ভালো বলা যায়। কোম্পানিগুলোর মধ্যে মুনাফায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। কোম্পানিটির ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ৮১৮ কোটি ১১ লাখ টাকা নিট মুনাফা হয়েছে। এরপরের অবস্থানে থাকা গ্রামীণফোনের ৬ মাসে ১ হাজার ৭৩১ কোটি ৮ লাখ টাকার নিট মুনাফা হয়েছে।ওই ২২২ কোম্পানির মধ্যে ১১ কোম্পানির পর্ষদ ১৬৫ কোটি ২১ লাখ টাকার লোকসান সত্ত্বেও ৩৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এ তালিকায় রয়েছে- শাশা ডেনিমস, ন্যাশনাল টি, ক্রাউন সিমেন্ট, ইভিন্স টেক্সটাইল, খান ব্রাদার্স, হাক্কানি পাল্প, গ্লোবাল হেভী কেমিক্যাল, গোল্ডেন হার্ভেস্ট, জিকিউ বলপেন ও লিবরা ইনফিউশন।অন্যদিকে ৩০ লাখ টাকার মুনাফা সত্ত্বেও শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোন লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি কে অ্যান্ড কিউ কোম্পানির পর্ষদ। এজন্য কোম্পানিটিকে ১০ শতাংশ হারে ৩ লাখ টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব প্রদানের শাস্তি পেতে হবে।এদিকে ২২২ কোম্পানির অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ ঘোষণা করা বহূজাতিক গ্রামীনফোন, লাফার্জহোলসিম, বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ম্যারিকো বাংলাদেশ ও বাটা সু রয়েছে। এই কোম্পানিগুলোর পর্ষদ ৩ হাজার ৪০২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা মুনাফার বিপরীতে ২ হাজার ৭৪১ কোটি ২০ লাখ টাকার বা ৮১ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে।

Share this news