২১৫ কোম্পানির ৮৫৬৫ কোটি টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত জুন ক্লোজিং কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ২০২১-২২ অর্থবছরের ব্যবসায় ৮ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। গত ১ জুলাই থেকে ০৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ সভায় এই ঘোষণা করা হয়েছে। যা বার্ষিক সাধারন সভায় (এজিএম) স্ব স্ব কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতিক্রমে প্রদান করা হবে। কিন্তু এই লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের ব্যাংক হিসাবে দেওয়ার কারনে তা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের আসার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। এ কারনে কমিশন নগদ লভ্যাংশ ব্যাংকের পরিবর্তে বিও হিসাবে পাঠানোর চিন্তা-ভাবনা করছে।কোম্পানিগুলোর পর্ষদের ঘোষিত লভ্যাংশ অনুমোদনের জন্য প্রায় সব কোম্পানির এজিএম ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এরপরে জানুয়ারির মধ্যে শেয়ারহোল্ডারদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তা পাঠিয়ে দেওয়া হবে।এই ব্যাংক হিসাবে নগদ লভ্যাংশ পাঠানোর কারনে তা আর শেয়ারবাজারে ফিরে আসে না বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। কারন হিসেবে তারা বলেন, ব্যাংকে হিসাবে লভ্যাংশ চলে গেলে সেটা আবার ব্রোকারেজ হাউজে জমা দিতে ঝামেলা মনে করাটা স্বাভাবিক। এছাড়া অলসতা করেও অনেক ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বিওতে দিতে চাইবে না। এছাড়া আমাদের শেয়ারবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বেশি এবং তারা লভ্যাংশও পায় ছোট আকারের। যে কারনে তারা ওই স্বল্প লভ্যাংশ তুলে বিওতে জমা দেওয়াটাকে পরিশ্রমের তুলনায় ফলপ্রসু মনে করে না। এ কারনে নগদ লভ্যাংশ বিনিয়োগে আসে না বললেই চলে।এই পরিস্থিতিতে নগদ লভ্যাংশকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আনার জন্য ব্যাংক হিসাবের পরিবর্তে বিও হিসাবে দিতে হবে। এতে করে হাজার হাজার কোটি টাকার তারল্য বাড়বে। যা বর্তমান সময়ে করতে পারলে শেয়ারবাজারের জন্য খুবই সহায়ক হবে।এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, নগদ লভ্যাংশ ব্যাংকের পরিবর্তে বিও হিসাবে পাঠানোর বিষয়টি কমিশন গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ২০২১-২২ অর্থবছরের ব্যবসায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষনার পেছনে কারন হিসেবে রয়েছে নতুন কমিশনের সক্রিয় ভূমিকা ও বাজেটে কমপক্ষে বোনাস শেয়ারের সমপরিমাণ নগদ লভ্যাংশ প্রদান বাধ্যবাধকতা অন্যতম কারন। অন্যথায় পুরো বোনাস শেয়ারের উপরে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ করারোপের শাস্তির যেমন বিধান রয়েছে, একইভাবে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশনের জেরার মুখে পড়তে হয়।বর্তমান কমিশনের অধীনে ব্যবসা সম্প্রসারণ ছাড়া বোনাস শেয়ার দেওয়া প্রায় অসম্ভব। এই বোনাস শেয়ার দিতে গেলে কমিশনের অনুমোদনের প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া লভ্যাংশ না দেওয়া বা নামমাত্র দেওয়া কোম্পানিগুলোকে ব্যাখ্যার জন্য কমিশনে তলব করা হয়। যে কারনে সঙ্গত কারনেই কমে এসেছে বোনাস শেয়ার।দেখা গেছে, গত ১ জুলাই থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে জুন ক্লোজিং, কয়েকটি অন্তর্বর্তীকালীন ও দু-একটি ২১ সালের ডিসেম্বর ক্লোজিং বীমা কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এ পর্যন্ত ২১৫ কোম্পানির পর্ষদ ৮ হাজার ৫৬৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। তবে জুন ক্লোজিং কোম্পানিগুলোর জন্য নির্দিষ্ট সময় গত ৩১ অক্টোবর শেষ হয়ে গেলেও কয়েকটি কোম্পানি এখনো লভ্যাংশ সংক্রান্ত সভা সম্পন্ন করেনি।কোম্পানিগুলোর এই বড় নগদ লভ্যাংশ শেয়ারবাজারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এই নগদ লভ্যাংশে লেনদেনে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।এর আগে চলতি বছরে ডিসেম্বর ক্লোজিং কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ সভা করা (জানুয়ারি-মে ২০২২) ৯০ কোম্পনির মধ্যে ৮২ কোম্পানির পর্ষদ অন্তর্বর্তীসহ ৯ হাজার ৩০১ কোটি ৭২ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে।অপরদিকে আগের বছরে জুন ক্লোজিং কোম্পানিগুলোর মধ্যে (১ জুলাই-২৬ নভেম্বর ২০২১) পর্যন্ত সময়ে ২১৩ কোম্পানির পর্ষদ ৮ হাজার ৫৯৫ কোটি ৮ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে।এ বছর শেয়ারহোল্ডারদেরকে জুন ক্লোজিং কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নগদ লভ্যাংশ দেবে ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। এ কোম্পানিটি ২০২১-২২ অর্থবছরের ব্যবসায় শেয়ারহোল্ডারদেরকে ১৭০ শতাংশ হারে অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারে ১৭ টাকা করে মোট ৯৮৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ দেবে।এরপরের অবস্থানে রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। এ কোম্পানিটি ২০২১-২২ অর্থবছরের ব্যবসায় শেয়ারহোল্ডারদেরকে ১০০ শতাংশ হারে অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারে ১০ টাকা করে মোট ৮৮৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ দেবে।তবে জুন ক্লোজিং ও অন্তর্বর্তীকালীন বিবেচনায় সর্বোচ্চ নগদ লভ্যাংশ দেবে গ্রামীনফোন। এ কোম্পানিটি অন্তর্বর্তীকালীন হিসেবে ১২৫ শতাংশ হারে অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারে ১২.৫০ টাকা করে মোট ১ হাজার ৬৮৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ দেবে। বহূজাতিক এ কোম্পানির পর্ষদ ৬ মাসের (জানুয়ারি-জুন ২২) ব্যবসায় এই লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।এ বছর সবচেয়ে কম নগদ লভ্যাংশ দেবে লিবরা ইনফিউশনস। এ কোম্পানি থেকে শুধুমাত্র সাধারন শেয়ারহোল্ডারদেরকে ৫% হারে ৫ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ দেবে। এরপরের অবস্থানে থাকা এসএমই মার্কেটের ইউসুফ ফ্লাওয়ার থেকে ১০% হারে ৬ লাখ টাকা এবং হিমাদ্রি থেকে ১০% হারে ৮ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ দেবে।ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বিজনেস আওয়ারকে বলেন, বর্তমান কমিশনের শক্ত অবস্থানের কারনে এই বিশাল নগদ লভ্যাংশের খবর শুনতে পেলাম। যে নগদ লভ্যাংশ বাজারের জন্য খুবই ইতিবাচক খবর। এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারলে, আগামিতে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া কোম্পানিগুলোর নগদ লভ্যাংশে বাজারে গতি তরান্বিত করবে বলে মনে করেন তিনি।