২০২৪ সালে যেসব খাতের কোম্পানি ভালো করতে পারে

Date: 2024-01-01 08:00:11
২০২৪ সালে যেসব খাতের কোম্পানি ভালো করতে পারে
২০২৩ জুড়েই হতাশাজনক পারফরম্যান্স দেখিয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। এ সময় পুঁজিবাজারে সূচকের ওঠানামা সীমাবদ্ধ ছিল ২০০ পয়েন্টে এবং আগের বছরের তুলনায় দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। ফ্লোর প্রাইস (শেয়ারদরের নিম্নসীমা) আরোপের কারণে বাজারে থাকা শেয়ারের বড় একটি অংশই লেনদেন হয়নি এবং এতে বাজারের তারল্যপ্রবাহ কমে গেছে।ইবিএল সিকিউরিটিজের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধন ছিল মোট বাজার মূলধনের (ডেবট সিকিউরিটিজ বাদে) প্রায় ৬০ শতাংশ। এ অবস্থায় দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সূচকের উন্নতি ও ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের ওপরই সামনের বছর পুঁজিবাজার কেমন যাবে সেটি নির্ভর করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছর শেষে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স ছিল ৬ হাজার ২০৭ পয়েন্টে। এ বছরের শেষ কার্যদিবসে সূচকটি দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৪৭ পয়েন্টে। এক বছরে সূচকটি বেড়েছে ৪০ পয়েন্ট বা দশমিক ৬ শতাংশ। এ সময়ে বাজার মূলধন ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ৭ লাখ ৮০ হাজার ৮৫০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২০২২ সালে ডিএসইতে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ৯৬০ কোটি টাকা, এ বছর যা দাঁড়িয়েছে ৫৭৮ কোটি টাকায়। এ সময়ে লেনদেন কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। অন্যদিকে ২০২৩ সালে আগের বছরের তুলনায় শেয়ার লেনদেনের পরিমাণ কমেছে ৪২ শতাংশ। আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এ বছর ১ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে এক্সচেঞ্জটির দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ২৩ শতাংশ ও শেয়ার লেনদেনের পরিমাণ ৩৮ শতাংশ কমেছে।পুঁজিবাজারে খাতভিত্তিক শেয়ারে রিটার্ন পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, টেলিযোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের শেয়ারে কোনো রিটার্ন আসেনি। প্রকৌশল ও বস্ত্র খাতে ১ শতাংশ এবং ব্যাংক খাতের শেয়ারে ২ শতাংশ রিটার্ন এসেছে। অন্যদিকে এ সময় ওষুধ ও সিরামিক খাতে নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। অবশ্য বীমা ও পাট খাতের মতো স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর শেয়ারে রিটার্ন ছিল দুই অংকের ঘরে। পুঁজিবাজার পরিস্থিতির হতাশাজনক চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রেও। এ বছর পুঁজিবাজারে মাত্র দুটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে, যেখানে গত বছর নয়টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছিল।বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সামষ্টিক অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতির কারণে বছরজুড়েই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আগ্রহের ঘাটতি দেখা গেছে। অন্যদিকে মৌলভিত্তির ও বড় মূলধনি কোম্পানিগুলোর শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকার কারণে স্বল্পমূলধনি কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরে বাড়বাড়ন্ত দেখা গেছে। একশ্রেণীর বিনিয়োগকারী দ্রুত মুনাফার আশায় এসব শেয়ারে ঝুঁকেছেন। টাকার ধারাবাহিক অবমূল্যায়ন ও ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতির কারণে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মুনাফা কমতে দেখা গেছে এবং এতে পুঁজিবাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর মুদ্রনীতি ঘোষণা করে, যার প্রভাবে সুদহার বেড়ে যায়। এতেও পুঁজিবাজারে তারল্যপ্রবাহ কমে গেছে। তাছাড়া আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণেও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিনিয়োগের চেয়ে পর্যবেক্ষণের প্রবণতা ছিল বেশি।ইবিএল সিকিউরিটিজের এক প্রতিবেদনে ২০২৪ সালে পুঁজিবাজার পরিস্থিতির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী বছর দেশের পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারে। সামষ্টিক অর্থনীতির উন্নতির পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হলে তা বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি বিএসইসিও আগামী বছর ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করার প্রত্যাশা করছে। এটি প্রত্যাহার করা হলে তাৎক্ষণিক পুঁজিবাজারে দর সংশোধন দেখা যেতে পারে। তবে সেটি পুনরায় ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হলে ডিএসইএক্স সূচক কমে ৫ হাজার ৫০০ পয়েন্টে নেমে আসতে পারে এবং পরবর্তী সময়ে এটি বেড়ে ৬ হাজার ৫০০ পয়েন্টে দাঁড়াতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।খাতভিত্তিক তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পারফরম্যান্স নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এফএমসিজি, ওষুধ ও রসায়ন, ব্যাংক ও বীমা খাতের কোম্পানিগুলো ২০২৪ সালে ভালো করতে পারে। পাশাপাশি প্রকৌশল, নির্মাণ ও বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফা ফিরে পেতে পারে। তবে ঋণ বেশি ও কাঁচামাল আমদানির ওপর নির্ভরতা বেশি এমন কোম্পানিগুলো আয় ও মুনাফা নিয়ে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।দেশের পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস যুগের শুরু হয় ২০২০ সালের মার্চে। কভিড সংক্রমণের প্রভাবে পুঁজিবাজারে দরপতন তীব্র হয়ে উঠলে তা ঠেকাতে সে বছরের ১৯ মার্চ ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এক বছরেরও বেশি সময় পর ২০২১ সালের ১৭ জুন ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হয়। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশের অর্থনীতে অস্থিরতা শুরু হলে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই দ্বিতীয় দফায় ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বিএসইসি। এর পাঁচ মাসের মাথায় ১৬৯টি কোম্পানির ক্ষেত্রে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হয়। যদিও এ কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর কমতে শুরু করলে দুই মাস পরই এ বছরের ১ মার্চ আবারো ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়, যা এখনো বহাল রয়েছে। ফ্লোর প্রাইসের মাধ্যমে শেয়ার দর ওঠানামা নিয়ন্ত্রণের কারণে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের রেটিংয়ে অবনমন করেছে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ গ্রুপের সাবসিডিয়ারি এফটিএসই রাসেল।

Share this news