২০২৩ সালের অর্থনীতি কেমন হবে, বাংলাদেশ কেমন করবে

Date: 2023-01-01 16:00:10
২০২৩ সালের অর্থনীতি কেমন হবে, বাংলাদেশ কেমন করবে
মার্টিন উলফ লন্ডনভিত্তিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এর প্রধান অর্থনৈতিক বিশ্লেষক। তাঁকে বলা হয়েছিল, মাত্র তিনটি শব্দ ব্যবহার করে ২০২২ সালের অর্থনীতিকে বর্ণনা করতে হবে। মার্টিন বলেছিলেন, যুদ্ধ, মূল্যস্ফীতি ও জ্বালানিসংকটের ধাক্কা। এই তিন সংকটই কি একই রকম থাকবে নতুন বছরেও। তাহলে কেমন যাবে ২০২৩? সংকট কেটে যাওয়ার লক্ষণ কতটা?বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধ, মূল্যস্ফীতি এবং জ্বালানিসংকটের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হবে। দেখা দেবে অর্থনীতির মন্দা। নতুন বছরে আরেকটি ঘটনা ঘটবে। তিন বছর বিরতির পর অর্থনীতিতে প্রবেশ করছে চীন। তারা সরে এসেছে ‘জিরো কোভিড’ নীতি থেকে। নতুন বছরে চীনের অংশগ্রহণের প্রভাব থাকবে বিশ্ব অর্থনীতিতে। অনেকেই মনে করছেন, এতে অর্থনীতি লাভবান হবে। আবার চীনের মাধ্যমে নতুন করে কোভিড ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও আছে। তাহলে এটাই হবে নতুন বছরের সবচেয়ে খারাপ ঘটনা। মূল্যস্ফীতির চাপ থাকবেবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সামান্য কমলেও নতুন বছরেও উচ্চ মূল্যস্ফীতিই বজায় থাকবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রাক্কলন হচ্ছে নতুন বছরে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কমে সাড়ে ৬ শতাংশ হবে। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলো এই চাপ থেকে এতটা রেহাই পাবে না। তাদের গড় মূল্যস্ফীতি থাকবে ৮ দশমিক ১ শতাংশ। জ্বালানি ও শিল্পের কাঁচামালের দাম বেশিই থাকবে। ফলে আমদানি ব্যয় খুব একটা কমবে না।কমবে প্রবৃদ্ধিআইএমএফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো অন্তত তিন মাস আগেই বলে দিয়েছিল যে নতুন বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ২ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০২২ সালে যা ছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ। তবে সংস্থাটি মনে করে, প্রবৃদ্ধির হার আরও কমে ২ শতাংশের নিচে নেমে যাওয়ার আশঙ্কাও আছে। ইউরোপীয় দেশগুলোর সংগঠন ওইসিডির মতে, প্রবৃদ্ধি হবে আরও কম, ২ দশমিক ২ শতাংশ। এর অর্থ হচ্ছে নতুন বছরে বিশ্ব অর্থনীতি নিশ্চিত করেই মন্দায় ঢুকে যাবে। সাধারণত পরপর দুটি প্রান্তিকে অর্থনীতিতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হলে তাকে মন্দা বলা হয়। আর এর সঙ্গে যুক্ত হবে উচ্চ পণ্যমূল্য ও উচ্চ সুদহার। মূলত, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরো অঞ্চলের পরিস্থিতি এ রকমই থাকবে। তবে চীনের প্রবৃদ্ধি বাড়তে পারে।খুলে যাচ্ছে চীনকোভিড দেখা দেওয়ার পর থেকে তিনটি বছর চীন তাদের দুয়ার বন্ধই রেখেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ‘জিরো কোভিড নীতি’ থেকে তারা সরে যেতে বাধ্য হচ্ছে। দেশটির জনগণের প্রতিবাদের মুখে চীন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা খুবই বিরল ঘটনা। ৮ জানুয়ারি চীন আন্তর্জাতিক সীমানা খুলে দিচ্ছে। চীন এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। দেশটির অর্থনীতির ওপর মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া বা থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোর রপ্তানি আয় অনেকখানি নির্ভর করে। চীনের বিপুল ভোক্তার চাহিদা বাড়লে উৎপাদন বাড়বে। এতে সরবরাহব্যবস্থার উন্নতি হবে।সব মিলিয়ে নতুন বছরের বড় ঘটনা হচ্ছে বিশ্ববাণিজ্য চীনের অংশগ্রহণ। এর আগে চীনের শেষ সরব উপস্থিতি ছিল ২০১৯ সালে। তখন ডোনাল্ড ট্রাম্প ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সময়টা ছিল বাণিজ্যযুদ্ধের। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এখন জো বাইডেন। নতুন পরিস্থিতিতে এই দুই বড় অর্থনীতির দেশের মধ্যকার সম্পর্কের ওপরও নির্ভর করছে নতুন বছরের অর্থনীতির গতিপথ।আবার চাপে পড়ে চীন যেভাবে প্রস্তুতিহীনভাবে ঢুকছে, তাতে সংকট কিছুটা বাড়তে পারে বলেও কেউ কেউ মনে করছেন।

Share this news