২০০ কোটি টাকা বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়ার আশা করছে পিপলস লিজিং

Date: 2023-12-30 08:00:13
২০০ কোটি টাকা বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়ার আশা করছে পিপলস লিজিং
কেলেঙ্কারিতে দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের হাইকোর্ট-নিযুক্ত বোর্ড ইক্যুইটি দিতে আগ্রহী দুবাইভিত্তিক কোম্পানি ব্লু রে থেকে বিনিয়োগ পাওয়ার আশা করছে। বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) পিপলস লিজিংয়ের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান প্রতিষ্ঠানটির আদালত-নিয়োজিত চেয়ারম্যান হাসান শাহেদ ফেরদৌস।তিনি বলেন, ব্লু রের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা হিসেবে ২০০ কোটি টাকা পাওয়ার আশ্বাস পেয়েছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই টাকাটা পাব। তিনি আরও বলেন, এই বিনিয়োগের বিনিময়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠানটি কোম্পানির শেয়ার পাবে। তবে প্রক্রিয়াটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। নতুন বোর্ড আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক কার্যক্রম ও অবস্থা জানানোর জন্য এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সগীর হোসেন খান এবং কোম্পানি সচিব মো. আরমিয়া ফকির উপস্থিত ছিলেন।হাসান শাহেদ ফেরদৌস বলেন, পিপলস লিজিং এখন স্থিতিবস্থায় রয়েছে। এখান থেকে আর পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়াচ্ছি। খেলাপি ঋণ উদ্ধারের পাশাপাশি নতুন করে ঋণ দেওয়াও শুরু হয়েছে। আমানতকারীদের টাকাও ফেরত দেওয়া হচ্ছে। নতুন বিনিয়োগের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্লু রের সাথে আমরা মিটিং করেছি। তারা আর্থিক সহায়তা বা ক্যাপিটাল পার্টিসিপেশনের প্রস্তাব দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে ২০০ কোটি টাকা পার্টিসিপেশন পাওয়ার সমঝোতা হয়েছে। তিনি বলেন, এই অর্থ পাওয়ার পর ভালো ভালো ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করা হবে। বিশেষ করে ফিনটেক বা উদীয়মান ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হবে আর একটি অংশ ব্যাংকে এফডিআর করা হবে, যা থেকে আয় হবে।পিপলস লিনিংয়ের চেয়ারম্যান আরও বলেন, কোম্পানির শেয়ার লেনদেন সাসপেন্ড করা হয়েছে। সাসপেনশন তুলে নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে আমরা আবেদন জানিয়েছি, সেই প্রেক্ষিতে তারা কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। পিপলস লিজিং লাভ করতে শুরু করেছেহাসান শাহেদ ফেরদৌস বলেন, হাইকোর্ট কর্তৃক নিয়োগ পাওয়ার পর আমরা পিপলস লিজিংকে পুনর্গঠন করার কাজ শুরু করেছি। এখন লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছি। এই অবস্থা চলতে থাকলে, আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে। তিনি বলেন, ২০২২ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নিয়োগকৃত লিকুইডেটর থেকে ৩২ কোটি টাকা পেয়ে পিপলস লিজিং পুনর্গঠন করার কাজ শুরু করি। পরবর্তীতে ব্যাংক থেকে ১৫০ কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে। এই টাকা দিয়েই পুনর্গঠন শুরু হয়। বোর্ড চেয়ারম্যান জানান, কিছু টাকা ব্যাংকে এফডিআর করা হয়েছে, কিছু টাকা কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে রয়েছে। তিনি বলেন, প্রতি মাসেই গ্রাহকের কাছ থেকে গড়ে ৩ কোটি টাকা করে ফেরত আসছে। আমানতকারীদের টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে। পিপলস লিজিং থেকে এখন টাকা ফেরত না পাওয়ার ভয় নেই। গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। আমরা হোম লোন, কার লোনও দেওয়া শুরু করেছি। ১০১ কোটি টাকা পুনরুদ্ধার, ৩৭ কোটি টাকা আমানতকারীদের ফেরতপিপলস লিজিংয়ের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ৫৩ জন আমানতকারীকে ৩৭.৫৩ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আর ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে ১০১ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে।ধাপে ধাপে অন্যান্য আমানতকারীর টাকাও ফেরত দেওয়া হবে বলে জ্জানান পিপলস লিজিংয়ের কোম্পানি সচিব মো. আরমিয়া ফকির। তিনি জানান, পিপলস লিজিংয়ের কাছে আমানতকারীদের দাবি ১ হাজার ১০৭.৭৪ কোটি টাকা।২০২১ সালে আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, পিপলস লিজিং ১ হাজার ২১১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে, যার ৯৮.৮৭ শতাংশ বা ১ হাজার ১৯৮ কোটি টাকাই খেলাপি হয়ে গেছে।২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান হয়েছে ৩৯৯ কোটি টাকা এবং পুঞ্জীভূত লোকসান ছিল ৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা।এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদার চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেন। প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পি কে হালদার প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা বের করে নেন। ২০১২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পিপলস লিজিং ওইসব প্রতিষ্ঠানের একটি। এরপরই দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে পিপলস লিজিং।২০১৯ সালের জুলাইয়ে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন বন্ধ করা হয়।হাইকোর্টের নির্দেশে চলতি বছরের অক্টোবরে পিপলস লিজিং ছয় বছর পর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করে।২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির মোট আমানত ছিল ২ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা এবং মোট বকেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২১১ কোটি টাকা।

Share this news