১৬ বস্ত্র কোম্পানির শেয়ার নিয়ে হতাশায় বিনিয়োগকারীরা

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানির সংখ্যা ৫৮টি। এরমধ্যে ১৬টি কোম্পানির আর্থিক অবস্থা নড়বড়ে। কোম্পানি ১৬টির মধ্যে ১১টি কোম্পানি সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিক পর্যন্ত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিগুলো লোকসানে রয়েছে। লোকসানের কারণে কোম্পানিগুলোর কোম্পানিগুলোর ডিভিডেন্ডে বিনিয়োগকারীরা তেমন আশাবাদী হতে পারছেন না। যার কারণে কোম্পানিগুলোর শেয়ার নিয়ে হতাশায় দিন কাটছে বিনিয়োগকারীদের।বাকি ৫টি কোম্পানি সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরের কোন প্রান্তিকেরই আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। কয়েকটি গত তিন-চার বছরের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। তবে কোম্পানিগুলোর কোনটিরই সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ি আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। যে কারণে কোম্পানিগুলোর ডিভিডেন্ডের উপরও বিনিয়োগকারীরা আস্থা রাখতে পারছেন না।আর্থিক নড়বড়ে ১৬ কোম্পানি হলো-সিএন্ডএ টেক্সটাইল, আনলিমা ইয়ার্ন, ডেল্টা স্পিনার্স, দুলামিয়া কটন, ইভিন্স টেক্সটাইল, ফ্যামিলি টেক্সটাইল, মিথুন নিটিং, নূরানি ডাইং, রিজেন্ট টেক্সটাইল, রিং শাইন টেক্সটাইল, আরএন স্পিনিং, স্টাইলক্রাপ্ট, তাল্লু স্পিনিং, তুংহাই নিটিং, জাহিন স্পিনিং ও জাহিন ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড।কোম্পানিগুলোর মধ্যে গত বছর আনলিমা ইয়ার্ন, ডেল্টা স্পিনার্স ও ইভিন্স টেক্সটাইল বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। সে বছর কোম্পানিগুলো মুনাফায় ছিল। কিন্তু সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিগুলো লোকসানে নেমেছে। যে কারণে এবছর এ তিন কোম্পানির ডিভিডেন্ড নিয়েও বিনিয়োগকারীদের মনে শঙ্কা জন্মেছে।আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা লোকসানি ১১ কোম্পানির মধ্যে সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে তথা ৯ মাসে (জুলাই’২১ থেকে মার্চ’২২ পর্যন্ত) আনলিমা ইয়ার্নের শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৩৪ পয়সা, ডেল্টা স্পিনার্সের ০৪ পয়সা, দুলামিয়া কটনের ৬৫ পয়সা, ইভিন্স টেক্সটাইলের ৩৫ পয়সা, নূরানী ডাইংয়ের ৯৫ পয়সা, আরএন স্পিনিংয়ের ০৮ পয়সা, স্টাইলক্রাপ্টের ৪ টাকা ৮৬ পয়সা, তাল্লু স্পিনিংয়ের ১ টাকা ৪৭ পয়সা, তুংহাই নিটিংয়ের ২১ পয়সা, জাহিন স্পিনিংয়ের ৫৫ পয়সা এবং জাহিন টেক্সটাইলের শেয়ার প্রতি লোকসান ২ টাকা ২৪ পয়সা।আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ না করা ৫ কোম্পানির মধ্যে মিথুন নিটিং সর্বশেষ ২০১৯ সালে জানিয়েছে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ৪ টাকা ৭৩ পয়সা। এরপর কোম্পানিটি বন্ধ থাকায় এর লোকসান অপরিবর্তিত রয়েছে বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে। কোম্পানিটি ২০১৭ সাল থেকে বিনিয়োগকারীদের কোনো ডিভিডেন্ড দিচ্ছে না। এদিকে, দেনার দায়ে কোম্পানিটির যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম চট্টগ্রামের বেপজা ইতোমধ্যে শেয়ারহোল্ডারদের না জানিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু কোম্পানিটি এ বিষয়ে এখনো মুখ খোলেনি।দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা সিএন্ডএ টেক্সটাইল গত আগস্টের মাঝামাঝি আলিফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। এখন কোম্পানিটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে ফেরার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। কোম্পানিটি ২০১৬ সালের পর বিনিয়োগকারীদের আর্থিক প্রতিবেদন জানানো থেকে বিরত রয়েছে এবং ডিভিডেন্ড থেকেও বঞ্চিত করছে। তবে দীর্ঘদিন পরে হলেও কোম্পানিটি বাণিজ্যিক উৎপাদনের ফেরার খবরে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হলেও আশাবাদী হচ্ছেন। যদিও সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরে বড় লোকসানে থাকা কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের এবছর কোনোভাবেই ডিভিডেন্ড দিতে সক্ষম হবে না।এক সময়ে মুনাফা ও ডিভিডেন্ডে ঝলক দেখানো ফ্যামিলি টেক্সটাইল ২০১৯ সাল থেকে বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ডের মুখ দেখায়নি। কোম্পানিটি ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ের আর্থিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এর শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১৩ পয়সা। এরপর থেকে আর কোনো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।রিংশাইন টেক্সটাইল ২০১৯ সালে বিনিয়োগকারীদের ১৫ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। সে ডিভিডেন্ড নিয়েও তৈরি হয়েছিল অনেক জটিলতা। এরপর থেকে আর ডিভিডেন্ড, এজিএম কোনোটাই নেই। পরবর্তীতে কোম্পানিটির আইপিও অর্থ ব্যবহার নিয়েও নানা রকম সংকট সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে কোম্পানিটির বিদেশি উদ্যোক্তারা কোম্পানিটি বন্ধ ঘোষণা করে দেশে ফিরে যান। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বিএসইসি গত বছর কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দিয়ে নতুন পর্ষদ বসিয়েছে। নতুন পর্ষদ গত বছরের জুন মাসে কোম্পানিটির ২৫ শতাংশ উৎপাদন শুরু করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। তারপর আর কোনো অগ্রগতি বিনিয়োগকারীদের জানায়নি।রিজেন্ট টেক্সটাইল ২০২০ সাল পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের মোটামুটি ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। তারপর থেকেই কোম্পানিটি ডিভিডেন্ড না দেয়ার তালিকায় নাম লেখিয়েছে। ২০২০ সালে কোম্পানিটি ১ শতাংশ নগদ ও ১ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। তার আগের বছর ২০১৯ সালে বোনাস, ২০১৮ সালে ৫ শতাংশ বোনাস ও ২০১৭ সালে ১০ শতাংশ নগদ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। কিন্তু ২০২১ সালে কোম্পানিটি মুনাফা থেকে লোকসানে চলে যায়। ওই বছর কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয় ১ টাকা ৫২ পয়সা। ফলে বিনিয়োগকারীদের কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি। এরপর থেকে কোম্পানিটি আর্থিক পারফরমেন্স থেকেও বিনিয়োগকারীদের অন্ধকারে রেখেছে।কোম্পানিগুলোর মধ্যে হালনাগাদ আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা ১১ কোম্পানির মধ্যে আনলিমা ইয়ার্নের পরিশোধিত মূলধন ১৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকার বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা, ডেল্টা স্পিনার্সের পরিশোধিত মূলধন ১৬৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকার বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে ৫১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, দুলামিয়া কটনের পরিশোধিত মূলধন ৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকার বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে ঋণাত্বক ৩৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, ইভিন্স টেক্সটাইলের পরিশোধিত মূলধন ১৮২ কোটি ৯৬ লাখ টাকার বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে ৬২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, নূরানী ডাইংয়ের পরিশোধিত মূলধন ১২২ কোটি ৬৩ লাখ টাকার বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে ১৪০ কোটি ০৫ লাখ টাকা, আরএন স্পিনিংয়ের পরিশোধিত মূলধন ৩৯২ কোটি ৫৫ লাখ টাকার বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে ঋণাত্বক ৪৪৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, স্টাইলক্রাপ্টের পরিশোধিত মূলধন ১৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকার বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে ১৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা, তুংহাই নিটিংয়ের পরিশোধিত মূলধন ১০৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকার বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে ঋণাত্বক ১৬৮ কোটি ০৫ লাখ টাকা, জাহিন স্পিনিংয়ের পরিশোধিত মূলধন ১১৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকার বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে ঋণাত্বক ৪২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এবং জাহিন টেক্সটাইলের পরিশোধিত মূলধন ৮১ কোটি ৮৩ লাখ টাকার বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে ১৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।